সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ-৩(সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁও) আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়ে বিপুুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ তিনি বন্ধ করে দেন। তার দেখা পাওয়া ছিল নেতাকর্মীদের কাছে অমাবস্যার চাঁদ।
কিন্তু এবারের নির্বাচনের আগে কায়সার হাসনাতের চাচা মোশারফ হোসেন একটি সমাবেশে বলেছিলেন, কায়সার হাসনাত ভবিষৎে কোন ভুল করলে আমাদের জানাবেন। কায়সার নিজেও নেতাকর্মীদের বলেছিলেন তিনি আর অতীতের মত ভুল করবেন না। কিন্তু কার্যত সেই আগের রূপেই দেখা গেল কায়সার হাসনাতকে। সোনারগাঁয়ে এখন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের শেষ ভরসা একমাত্র মাহফুজুর রহমান কালাম।
জানাগেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসন থেকে মনোনয়ন পাননি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। একই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তার চাচা মোশারফ হোসেন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। এখানে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনিত হন কেন্দ্রীয় জাতীয়পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অটুট থেকে কালাম মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করেন। অন্যদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে কায়সার হাসনাত স্বতন্ত্র সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং এতে কায়সার হাসনাতের পক্ষে কাজ করেন মোশারফ হোসেনও।
ওই নির্বাচনে অনেকটা বিরোধী দলীয় ভুমিকায় ছিলেন কায়সার হাসনাতের নেতাকর্মীরা। কায়সার হাসনাতের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হন। বেশকটি মামলায় কায়সারের নেতাকর্মীরা আসামী হন। নির্বাচনের আগে বাড়ি ছাড়া হয়ে যান নেতাকর্মীরা। কাচপুরে যুবলীগ নেতার বৃদ্ধ বাবা মা ভাই ও অন্তস্বত্তা বোনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই সময় যুবলীগ নেতা মাহফুজ পারভেজ দাবি করেছিলেন লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করে সিংহ প্রতীকের পক্ষে কাজ করার কারনেই তার পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকায় নির্যাতনের শিকার হন নেতাকর্মীরা যারা মুলত কায়সার হাসনাতকে ভালবেসে তার পক্ষে কাজ করেছিলেন।
কিন্তু নির্বাচনের একদিন আগে নানা নাটকীয়তায় কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান। ওই দিন থেকে আজোবদি সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কায়সার হাসনাত কোন ধরনের যোগাযোগ করেননি। এমনকি নির্যাতিত হামলা মামলার শিকার নেতাকর্মীদের কোন খবর রাখেননি। নির্বাচনের পর নেতাকর্মীদের নিয়ে কোন বৈঠকও তিনি করেননি। এমনকি যে সব নেতাকর্মীদের পরিবারের লোকজন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের কাছে ফোন করেও সহানুভুতিটুকুও দেখায়নি কায়সার হাসনাত। এমনকি কাচপুরের যুবলীগ নেতার বাবা মা ভাই বোন হয়রানির শিকার হলেও সেই পরিবারের খবরটুকুও নেননি তিনি। তারা জামিন নিয়েছেন কিনা তাও খবর রাখেননি। সহযোগীতা তো দুরের কথা।
এমন পরিস্থিতিতে মোশারফ হোসেন এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচনের পর নেতাকর্মীদের কোন ধরনের খোজ খবর রাখেননি মোশারফ হোসেনও। কায়সার হাসনাত এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তৃনমুল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ওই সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখেন মাহফুজুর রহমান কালাম। নির্বাচন আসলেই চাচা ভাতিজা নেতাকর্মীদের নানা প্রলোভন স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেদের বগলে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তরী পাড় হয়ে গেলে আর নেতাকর্মীদের পাশে থাকেন না এই চাচা ভাতিজা। কিন্তু ভিন্ন কেবল কালাম। যিনি নেতাকর্মীদের যে কোন সময় মোবাইল কল রিসিভ করেন এবং কালামের বিরোধী বলয়ের রাজনীতি করলেও ওইসব কর্মীদের বিপদেও তিনি পাশে দাড়ান। না দাড়াতে পারলেও তিনি বিপদগ্রস্থ নেতাকর্মীদের কথা শুনেন এবং মোবাইল ফোন রিসিভ করেন। এটাই তার সবচেয়ে বড় গুণ। যে কারনে কালাম সোনারগাঁয়ে সাংগঠনিক নেতা হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। সোনারগাঁয়ে এখন নেতাকর্মীদের ভরসা কালাম।