বিএনপির নেতৃত্বের রাজনীতি থেকে তাদের বিদায়

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ৩০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব করে এই কমিটির অনুমোদন করা হয়। তবে কমিটির মধ্যে শর্ত রয়েছে আহ্বায়ক পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি হতে পারবেন না। অর্থাৎ এখান থেকেই নেতৃত্বস্থানীয় রাজনীতি থেকে তৈমূর আলম খন্দকারকে বিদায় নিতে হবে।

আহ্বায়ক কমিটির বেশির ভাগ নেতাই তরুণ প্রজন্মের। দীর্ঘেমেয়াদী চিন্তা করেই যে এমন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি সেটা স্পষ্ট। আর এই কমিটি গঠনের মাধ্যমে শুধু তৈমূর আলমই নয় নারায়ণগঞ্জের বেশকজন প্রবীণ ও সিনিয়র নেতার নেতৃত্বে আসার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে কারো কারো রাজনীতি এখানেই বিদায় ঘন্টা। এসব নেতাদের মাঝে কারো কারো রাজনীতিরও বিদায় ঘটবে।

অধ্যাপক রেজাউল করিম ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি। এক সময়কার দাপটশালী এই নেতা বেশকবার বিএনপির এমপিও হোন। হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীও। ১/১১ এর সময় দলের বিরোধীতা করার পরই নিজের রাজনীতিতে ধস নামে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও তিনি পরাজিত হোন। গত নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চাইলেও তিনি মনোনয়ন পাননি। বয়সের ভারেও কুলিয়ে ওঠতে পারছেন না। বর্তমানে তিনি রাজনীতিতে নেই। তার রাজনীতি প্রায় শেষ।

একজন আপাদমস্তক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। ২০০৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান মনির। ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির কমিটিতে তিনি হয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু রাজনীতির মাঠে তিনি ছিলেন না। তবুও ২০১৭ সালে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পান। রাজপথের রাজনীতিতে ব্যর্থতার কারনে গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। যদিও তিনি গত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তার নেতাকর্মীরা এখন আশ্রয় নিয়েছেন তৈমূর আলমের ছায়াতলে। নেতৃত্বের রাজনীতিতে তার ফিরে আসার সম্ভাবনাও শেষ।

জাতীয়পার্টি হয়ে আওয়ামীলীগ, আওয়ামীলীগ হয়ে এসেছেন বিএনপিতে। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন পূর্বে বিএনপিতে যোগদান করেই ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে হয়ে যান এমপি। তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য। ১/১১ এর সময় জেলে থাকায় তিনি ২০০৮ সালে নির্বাচন করতে পারেননি। গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইলেও বিএনপির মনোনয়ন পাননি তিনি। তিনি হলেন সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। বিএনপির এমপি হয়ে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের চিত্রও তৈরি করেছিলেন তিনি। তার আমলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তিনি ছিলেন ত্রাসের রাজনীতিতে।

আতাউর রহমান খান আঙ্গুর। তিনি ছিলেন আড়াইহাজারের উচিতপুুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। সেই আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে আঙ্গুরকে নিয়ে আসেন তারই ভাই কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরু। তিনি হয়েছিলেন বিএনপির তিন বারের এমপি। কিন্তু ১/১১ এর সময় তিনিও সংস্কারবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। ২০০১ সালের পর তিনি আর জাতীয় কোন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি। গত কমিটিতে জেলা বিএনপির সদস্য পদে তাকে রাখা হয়েছিল।

কল্যাণপার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন শিল্পপতি শাহআলম। ২০০৮ সালের নির্বাচনের কিছুদিন পূর্বে বিএনপিতে এসেই বিএনপির মনোনয়ন পান শিল্পপতি শাহআলম। নির্বাচনে পরাজিত হলেও মাঠের রাজনীতিতে নামেন তিনি। দখলে নেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি পদটি। হয়ে যান জেলা বিএনপির বিগত দুটি কমিটির সহ-সভাপতি পদটিও। হয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য। গত জাতীয় নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন না পেয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদ ছাড়া বাকি সবগুলো পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন খান। এক সময় কেন্দ্রীয় যুবদলের শীর্ষ পদেও ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান আনোয়ার হোসেন খান। তৈমূর আলমের সঙ্গে রাজপথে বেশ সক্রিয়ও ছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালের কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি। একইভাবে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতেও আনোয়ার হোসেন খানকে রাখা হয়নি।

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ক্ষমতাকালীন সময়ে যার দাপট ছিল চোখে পরার মতই। অনেকে তাকে গাব্বার সিং হিসেবেই আখ্যায়িত করতেন। ২০১৭ সালের জেলার প্রস্তাবিত কমিটিতে সহ-সভাপতি পদেও ছিলেন আব্দুল মজিদ খন্দকার। তারও বয়সের কারনে এবং আগের মত সেই জৌলশ হারিয়ে ফেলায় বিএনপির রাজনীতির নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা তারও নেই।

অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি। শিল্পপতি শাহআলমের কারনে তার রাজনীতি হোচট খায়। বয়স বেশি হলেও এ নেতাকে মাঝে সাজে রাজপথে দেখা মিলে। কিন্তু তাকেও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়নি। ফতুল্লায় শাহআলম না থাকলেও শাহআলমের নিয়ন্ত্রণেই চলছে বিএনপির কমিটি গঠন। ফলে মনিরুল ইসলামেরও নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা ফিকে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়ালিউর রহমান আপেল। কেন্দ্রীয় যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য তিনি। যে কারনে নিজেকে দাবি করেছেন দলের প্র্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন তিনি। জাতীয় নির্বাচন আসলেই তিনি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। এলাকায় প্রচার করেন তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বন্ধু। চাইলেই জেলা বিএনপির দায়িত্ব নিতে পারেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিনিই হবেন মন্ত্রী। এমপি তো হবেনই। এমন সব আশ্বাস দিয়ে কর্মী টানার চেষ্টা করেন তিনি। তবে গত জাতীয় নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাননি। তারও নেতৃত্বে আসার রাস্তা বন্ধ।