নারায়ণগঞ্জে দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন

ডেস্ক রিপোর্ট, সান নারায়ণগঞ্জ

জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ স্থাপন করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। রাজধানী লাগোয়া এই জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্তত ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কয়েকশ’ ছাত্র-জনতা।

১৪ জুলাই সোমবার বিকেলে নগরীর হাজীগঞ্জ এলাকায় রেলওয়ের জমিতে স্থাপিত এ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা।

কয়েকটি জেলায় জুলাই-স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটি প্রথম উদ্বোধন করা হয়েছে বলে উপদেষ্টারা জানান। ধাতব এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও স্থাপনে কাজ করেছে সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

নারায়ণগঞ্জে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বক্তব্য রাখেন। আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

এ অনুষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদ ও হতাহত পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। ছেলের হত্যার বিচার দাবি করেন জালকুড়ি এলাকায় শহীদ দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ আদিলের মা আয়েশা আক্তার। তিনি শহীদদের কবরগুলো সংরক্ষণেরও দাবি জানান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এএইচএম কামরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জুলাইযোদ্ধারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন চলাকালীন একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ‘জুলাই আন্দোলনের ঐক্য’ ধরে রাখার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, “আমরা বৈষম্যহীন, শোষনহীন নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে, শাসক এসে অপশাসকে পরিণত হবে না। আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে পারলে অবশ্যই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।”

জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে এ উপদেষ্টা বলেন, জুলাই মাস আসলে গত বছরের জুলাইয়ের কথা মনে পড়ে। এই জুলাই মাসে সূচিত আন্দোলনে গত সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশে যে স্বৈরতন্ত্র, যে ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ ৩৬ দিনে না, খেয়াল করে দেখবেন মাত্র ১৫ দিনে ফ্যাসিস্ট শাসককে উৎখাত করেছে, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।”

জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছেন বলেও জানান এ উপদেষ্টা।

পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, “নারায়ণগঞ্জ জেলাতে ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে লড়াই করে তারা প্রাণ দেননি। একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই ৫৬ জন মানুষ শহীদ হয়েছেন। আমরা, আপনারা একসাথে মিলে এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটা সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়বো।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাদুঘরে’ রূপান্তরের কথা জানিয়ে আদিলুর রহমান খান বলেন, “গণভবনকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে। আমরা আশা করবো, ৫ আগস্টে উদ্বোধন করার। ওইটা হচ্ছে স্বৈরাচারের ঠিকানা। আমরা ওই ঠিকানাকে সংরক্ষণ করে দেখাতে চাই, এখানে ফ্যাসিবাদ কীভাবে মানুষকে অত্যাচার করতো। কীভাবে তাদের পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের মানুষ এসে দেখবে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী, মুজিববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়েছিল। যে সংগ্রামে বহু মানুষ গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হন। অনেক আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছিল। সেই লম্বা সময়ের একটা পর্যায়ে নতুন ছাত্ররা বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে এবং সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে।”