সোনারগাঁও আসনে বিএনপির একক প্রার্থী: আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির টানাটানি!

সান নারাণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনই ভাবছেনা বিএনপি। তাদের টার্গেট সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করা। যদিও অন্যদিকে নির্বাচনের লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামীলীগ ও তাদের জোটভুক্ত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। একই পরিস্থিতি নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনটির নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনীতি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে আজহারুল ইসলাম মান্নান একক প্রার্থী হিসেবে তার ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন অনেকাংশে নিশ্চিত হলেও এ আসনে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে এবারো বেশ টানাটানি শুরু হয়েছে। জোট না থাকলে এখানে জাতীয় পার্টি একক প্রার্থী দিবে কিনা সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। সরকার দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন আবারো জোটভুক্ত নির্বাচন হবে। যে কারনে প্রথম কাজ জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন ছিনিয়ে এনে নৌকার প্রার্থী নিশ্চিত করা। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, জোট থাকলে এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীতা প্রায় নিশ্চিত।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি আসন নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ)। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছেড়ে দিলে এখানে দুইবারই এমপি হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। জাতীয় রাজনীতিতে জোটগত কারন ছাড়াও এখানকার আওয়ামীলীগের রাজনীতি বেশ অগোছালো। জাতীয় নির্বাচন আসলেই এখানে নৌকার মাঝির অভাব হয় না। হরেক রকমের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের রংবেরঙের প্রচারণা শুরু হয়। কেউ কেউ জাতীয় পার্টিকে সুযোগ করে দিতেই হরেক রকমের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা মাঠে নামেন।

এ আসনে সারা বছর রাজনীতি না করেও ঘরে বসে নৌকা প্রত্যাশি ঘোষণা দেয়া যায়। কেউ কেউ উড়ে এসে এখানে মনোনয়নপত্রও কিনে নেন। যার চৌদ্দ গোষ্ঠির একজনও এখানে নেই তিনিও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চান। প্রতিবারই এমন যখন জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন সুবিধা বেড়ে যায় জাতীয় পার্টির। সামনের নির্বাচনেও যে এমনটা দেখা যাবে তারই আভাস পাওয়া যাচ্ছে এখনি। দিন আগাচ্ছে নৌকার দাবির নেতা বাড়ছে। একেকজন ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘোষণার সংখ্যা এবার গত নির্বাচনকেও ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বহু মনোনয়ন প্রত্যাশির মাঝে ঐক্যের ছাপ আওয়ামীলীগে খুবই কম।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, এ আসনে জোটের বাহিরে নৌকার প্রার্থী হলে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। জেলার প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের সঙ্গে বর্তমানে কায়সার হাসনাতের মাখামাখি সম্পর্কও স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। যা আগে দেখা যায়নি।

এদিকে এবার কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ ওমর নিজেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠেও নেমেছেন। একইভাবে নৌকা প্রত্যাশি ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। নির্বাচনকে টার্গেট করে রাজনীতির মাঠে সারা বছরই কাজ করছেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু।

পরিছন্ন রাজনীতিকদের মাঠে কয়েক নির্বাচন যাবত নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এইচএম মাসুদ দুলাল। কাজ করছেন কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য দীপক কুমার বনিক দিপু। নির্বাচন আসলেই প্রতিবার নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি ঘোষণা দেন লন্ডন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম ও অর্থনীতিবিদ আনোয়ারুল কবির ভুঁইয়া নামের দুই ব্যক্তি।

গত নির্বাচনে এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক চেয়ে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলীও। গত নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন কিনতে ভুল করেননি সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও তার সহধর্মিনী জেলা মহিলা লীগের সভাপতি প্রফেসর শিরিন বেগম। এবার তাদের ছেলে ঝলকও নির্বাচনী মাঠে। গত নির্বাচনের কয়েক মাস আগে মাঠেও নেমেছিলেন ডা. সেলিনা আক্তার নামে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের নেত্রী। তিনি মনোনয়নপত্রও কিনেছিলেন।

সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্য মোবারক হোসেনের পুত্র এরফান হোসেন দীপ এখানে নিজেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে ঘোষণা না দিলেও তিনি যে নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন এটা তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডেই স্পষ্ট করেছেন তিনি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক চেয়ে মাঠে নেমেছিলেন মনির হোসেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ও মনির হোসেনও সামনের জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র কিনলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সব মিলিয়ে গত নির্বাচনে এই আসন থেকে দেড় ডজন মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন আওয়ামীলীগ নেতারা। সামনের নির্বাচনে এর সংখ্যা এবার বাড়তেও পারে বলে ধারণা করছেন নেতাকর্মীরা।

এসব কারনে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, এখানে নৌকা দিলাম, কিন্তু দেখা গেলো সেই নৌকাকে আপনারাই ফেল করালেন, তার চেয়ে ভালো আমাদের শরীক দল জাতীয় পার্টির এমপি।

অন্যদিকে এ আসনে বিগত সময়গুলোতে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ ও এরশাদের পালিত কন্যা অনন্যা হুসেইন মৌসুমি। সামনের নির্বাচন নিয়ে তাদের সে রকম ভুমিকা দেখা যাচ্ছেনা। এখানে আওয়ামীলীগের মাথাব্যাথার কারন বর্তমান এমপি খোকা। বিএনপি গত নির্বাচনে এখানে মনোনয়ন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে। সামনের নির্বাচনেও তার মত হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী নেই। ফলে সামনের নির্বাচনেও বিএনপির একক শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী থাকছেন মান্নান।