গিয়াস ভীতিতে ব্যর্থ রবি-মামুন: নেতৃত্বশূণ্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা। এই থানা এলাকা এখন বিএনপির নেতৃত্বশূণ্য। থানা বিএনপির কমিটি বাতিল ঘোষণার পর এখানে থানা বিএনপির কোনো কমিটি নেই। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মনিরুল ইসলাম রবি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ অনেকটা অঘোষিতভাবে হয়ে গেছেন থানা বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় নেতা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আসনভিত্তিক সুবিধার বিষয়টির দিক তুলে সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাকে জেলা বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। এ নিয়ে দলের গঠনতন্ত্রের বহির্ভুত কমিটি গঠন করায় বিএনপির বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করে দেন বিএনপির দুই নেতা। সিটি কর্পোরেশনের মুল এলাকা অর্থাৎ লেজ কেটে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাকে জেলা বিএনপির মাথা বানানো হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ১৪ জুন রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিল ঘোষণা করে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আব্দুল হাই রাজুকে আহ্বায়ক ও শাহআলম হীরাকে সদস্য সচিব করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির অনুমোদন দেন তৎকালীন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসির উদ্দিন ও সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমটি গঠনের পর গত ১৫ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলন করতে গেলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়। ওইদিন সকাল ১০টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের ‘গ্র্যান্ড তাজ পার্টি সেন্টারে’ এই ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ নেতা–কর্মী আহত হয়। এ সময় সম্মেলনস্থলে চেয়ার–টেবিল, পার্টি সেন্টারের প্রধান ফটকের গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। মুলত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের অনুগামীরা ওই সম্মেলনে হামলা চালায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজের অনুসারীদের নিয়ে সম্মেলনস্থলে আসেন থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন। তিনি বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের অনুসারী ও সম্মেলনবিরোধী হিসেবে পরিচিত। ওই ঘটনার দশ দিনের মাথায় ২৫ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে রাজধানীর পল্টনে কস্তুরী হোটেলের সামনে অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সবশেস ১৪জুন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি বাতিল ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। কমিটি বাতিলের বিষয়ে ২২ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় নিদের্শনামতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি বাতিল করা হয়েছে। হয়তো কমিটির ব্যর্থতার কারন রয়েছে। থানা বিএনপির নেতৃত্বশূণ্য এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটা ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি রয়েছে। ওয়ার্ডের নেতাদের ভোটে সম্মেলনের মাধ্যমে থানা বিএনপির কমিটি গঠন করা হবে।

পূর্বের ঘটনা সূত্রে, ২০১২ সালের জাতীয় নির্বাচনের পুর্বে শিল্পপতি সফর আলী ভুঁইয়াকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিলেন তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার ও কাজী মনির। ওই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন রবি। বছর খানিকের মধ্যেই বিদেশে চলে যান সফর আলী। তখন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় আলী হোসেন প্রধানকে। সফর আলী দেশে ফিরে আসলেও আলী হোসেন প্রধানকেই ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে বহাল রাখেন তৈমূর। ওই কমিটির বিরোধীতা করে নিজেকে থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই রাজু ও সেক্রেটারি দাবি করে এমএ হালিম জুয়েল বিদ্রোহী করতেন। তখন তারা গিয়াসের অন্যতম ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।

তৎকালীন সময়ে সফর আলীকে নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সফর আলী ও মামুনকে মঞ্চে না ওঠার জের ধরে বিশৃঙখলার সৃষ্টি হয়। তার কয়েক বছরের মাথায় আলী হোসেন প্রধানও কারাগারে মারা যান এবং সফর আলী পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। এতে দীর্ঘদিন আহ্বায়ক শূণ্য ছিলো থানা বিএনপি। মামুন একাই চালাতেন থানা বিএনপির কার্যক্রম। জেলার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকাটা নিয়ে জেলা ও মহানগর কমিটির টানাটানি ও দলটির অবহেলা এবং কর্তৃত্ববাদীদের কারনে বিএনপির অবস্থান সিদ্ধিরগঞ্জে সবচেয়ে দূর্বল। সেজন্য রবি ও মামুনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন নেতাকর্মীরা।