বাবুল ভাইহীন এক বছর

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

সোনারগাঁওয়ের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জগতের এক উজ্জল নক্ষত্রের নাম বাবুল মোশাররফ। আজ তাঁর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। কিভাবে যে বাবুল ভাইহীন একটি বছর কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। এখনো মনে হয় বাবুল ভাই আমাদের মাঝেই আছেন। তাঁর সেই প্রাণবস্ত হাসি, জ্ঞানগর্ভ কথার ফুলঝুরি, চা খাওয়ার সেই প্রচলিত আমন্ত্রন এখনো চোখের সামনে বাস্তব হয়ে ভেসে ওঠে। পৃথিবী চলছে তার আপন নিয়মে শুধু আমাদের মাঝে নেই বাবুল ভাই।

সাবলীল জীবন যাপন আর সততাকে পুঁজি করে শত কষ্টেও হাসি মুখে সহজ- সরল জীবন কাটিয়ে গেছেন তিনি। কর্ম জীবনে পুরোদস্তুর সাংবাদিক হলেও সাহিত্য চর্চায়ও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ১৯৯১ সালে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সোনারগাঁও সাহিত্য নিকেতন নামে একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমানে সোনারগাঁও অঞ্চলের যেসব সংবাদকর্মী সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের সুফল ভোগ করছেন তার পেছনে বাবুল ভাইয়ের ভূমিকা ছিল অনন্য। ১৯৮৭ সালে সোনারগাঁয়ে যে দুজন মানুষ সোনারগাঁও প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের মধ্যে বাবুল ভাই একজন। তিনি সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

প্রায় ৪০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের পুরোটাই কেটেছে সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবকে ঘিরে। প্রেস ক্লাবের বিভিন্ন প্রতিকূল সময়ে শক্ত হাতে হাল ধরেছিলেন তিনি। টানা পাঁচ মেয়াদে প্রেস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। সর্বশেষ সোনারগাঁও প্রেস ক্লাব বাবুল ভাইয়ে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রেস ক্লাবের সম্মানজনক “আজীবন সদস্য” পদ প্রদান করেন। তাঁকে যারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তারাই কেবল তাঁর যোগ্যতা, দক্ষতা ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারবেন। তিনি ছিলেন একজন সদালাপী ও নিরহংকার মানুষ। ছোট বড় সবার সাথেই ছিল সুসম্পর্ক। কারো সাথে উঁচু গলায় কথা বলতেন না কখনো। কেউ যদি কোন সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে হাজির হতেন তিনি যেভাবেই হোক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। অর্থের প্রতি কোন লোভ ছিল না এ মহান মানুষটির। শত সুযোগ থাকা স্বত্তেও নীতি বিসর্জন দেননি কোনদিন। ওনার সান্নিধ্যে যেসব সংবাদকর্মী ও সাহিত্যকর্মীরা এসেছেন তাদেরকে সবসময়ই নীতির প্রশ্নে আপষহীন থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে গেছেন।

সোনারগাঁঁওয়ের স্বনামধন্য সাংবাদিকের প্রায় ৯০ ভাগই কোন না কোন ভাবে বাবুল ভাইয়ের সংস্পর্শে ছিলেন।
বাবুল ভাই বয়সে আমার পিতার সমতুল্য হলেও তাঁর সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। প্রায় এক যুগেরও বেশী সময় তাঁর সংস্পর্শে কেটেছে। জীবন বাস্তবতার অনেক কিছুই শিখেছি বাবুল ভাইয়ের কাছে। কিভাবে স্রোতের প্রতিকূলে চলতে হয়, কিভাবে শতকষ্ট বুকে চেপে মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলতে হয় এসব বাবুল ভাইকে দেখেই শিখেছি। সাহিত্যের খুটিনাটিও তিনি শিখিয়েছেন হাতে কলমে।

২০১৫ সালে বাবুল ভাইয়ের পরামর্শে সোনারগাঁও থেকে “চারদিক” নামে একটি সাময়িকী প্রকাশের উদ্যোগ নেই। বাবুল ভাই ছিলেন এ সাময়িকীর উপদেষ্টা সম্পাদক আর আমি সম্পাদক ও প্রকাশক। চারদিক নিয়ে ছিল তাঁর অনেক স্বপ্ন কিন্তু স্বাদ আর সাধ্যের ব্যবধানের জন্য অনেক স্বপ্নই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তবু বাবুল ভাইয়ের স্বপ্নের চারদিক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি ভাল কিছু করার প্রত্যয়ে।

বাবুল ভাইয়ের জীবনের শেষ দুবছর দূরারোগ্য ফুসফুস ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে কেটেছে। তিনি শক্তিশালী মনোবলের অধিকারী ছিলেন। ওনাকে দেখে কেউ বুঝতেই পারতেন না তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। ক্যান্সারকে তিনি পাত্তাই দিতেন না। এমন মনোবল সম্পন্ন মানুষ খুব বিরল। বাবুল ভাইয়ের জীবনের শেষ সময়টায় ওনার সাথে নিয়মিত আড্ডা দিয়ে কেটেছে আমার। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর শুক্রবার আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান বাবুল ভাই। বাবুল ভাইয়ের এ চলে যাওয়ায় আমাদের মাথার উপর থেকে বটবৃক্ষের ছায়া সরে গেছে। সোনারগাঁওয়ের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যাঙ্গণে বাবুল ভাইকে ছাড়া সবকিছুই যেন নিরুৎসব ও বিষন্ন। নিষ্ঠুর সময় তবু চলছে চলবে। পরলোকে ভাল থাকবেন আমাদের প্রিয় বাবুল ভাই এই দোয়া রইল।

লেখকঃ রবিউল হুসাইন
সম্পাদক, চারদিক/
সোনারগাঁ প্রতিনিধি, দেশ রূপান্তর