‘আমার এসএ আরএস সিএস রেকর্ড দেখলে আমাকেই নৌকা দিবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা’

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহাম্মেদ বলেছেন, আমার এসএ আরএস সিএস রেকর্ড দেখলে আমি মনে করি আমাকেই নৌকা দিবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে তিনি তার অবস্থান তুলে ধরে বলেন, আমি ২০০২ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হয়ে ২০১০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি। এর আগেও আমাকে আরও ৭/৮ বছর ভাল সময়ের মাঝে দুঃসময়ও কাটাতে হয়েছে।

ছগীর আহাম্মেদ এ বিষয়ে আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ১/১১ এর সময় গ্রেপ্তার হোন, তখন আমি রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি। তখন কঠিন সময় ছিল, সেই কঠিন সময়ে আমি রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি নেত্রীর মুক্তির জন্য। ওইসব প্রোগ্রামগুলো আমরা করেছি। যেহেতু আমি কঠিন সময়ে ছাত্রলীগের হাল ধরেছিলাম এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা/উপজেলা আওয়ামীলীগের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। দুঃসময়ে আমার ভুমিকা, আমার এসএ আরএস সিএস রেকর্ড দেখলে আমি বলতে পারি আমাকেই নৌকা প্রতীক দিবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমার পিতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। তাই আমার আশা আমিই নৌকা প্রতীক পাবো ইনশাহআল্লাহ।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন তো এক্ষেত্রে তাদেরকে বাদ দিয়ে আপনার হাতে কেন নৌকা প্রতীক তুলে দিবেন আপনার দল? এমনটা জানতে চাইলে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে শুরু থেকে উত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ছগীর আহম্মেদ বলেন, আমি ছাত্র রাজনীতির সর্বপ্রথম আমিনপুর ইউনিয়ন কমিটি দিয়ে শুরু করি। আমি দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করা অবস্থায় তৎকালীন আমিনপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। সেখান থেকেই রাজনীতিতে আমার যাত্রা শুরু।

রাজনীতিতে আসার নেপথ্যের কারন হিসেবে এই নেতা বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আসার নেপথ্যের বিরাট কারনও রয়েছে। নেপথ্যেও কারন হলো- আমার পিতা সাহাবুউদ্দীন আহম্মেদ খেলু তৎকালীন আমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন প্রথম। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের দিকে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি হয়েছিলেন। মুলত পিতার কারনেই রাজনীতিতে আমার আসার প্রভাব পড়ে যায়। আমার পিতার মাধ্যমেই আমার রাজনীতিতে আসা। পিতার মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনতাম। আমার পিতা তার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বলা যায় পিতার মাধ্যমেই রাজনীতিতে আমার উদ্বুদ্ধ হওয়া। আমার পিতাকে দেখেই মুলত আমি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আসি।

তার পিতার রাজনীতির ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক রথি মহারথি ছিলেন যারা জাতীয়পার্টি করতেন। সেক্ষেত্রে আমার পিতাকে অনেক সময় অনেক চাপ দেয়া হয়েছিল। তবুও আমার পিতা তার নীতি ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত্ব হননি।

সাক্ষাৎকারে সোনারগাঁও পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হওয়ার কারন জানতে চাইলে ছগীর আহম্মেদ বলেন, আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করে আসছি বা দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছি তাদের একটা আশা আকাঙ্খা থাকে যে, আমি জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের সেবা করবো। আমিও একজন ছাত্রলীগের কর্মী থেকে নেতা পর্যায়ে ছিলাম। সেখান থেকেই আমার এই প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের সোনারগাঁও পৌরসভাটি হলো বি-গ্রেড পৌরসভা। বি-গ্রেড একটা পৌরসভায় যেভাবে যে পরিমান উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সেটা আমার মনে হলো হয়নি। পৌরসভার নাগরিকদের যেসব অধিকার রয়েছে, সেখানে অনেক ঘাটতি রয়েছে। একটা পৌরসভায় স্বাস্থ্য খাতে যেসব স্টেপ নেয়া দরকার, সেখান থেকে অনেক দূর। পাশাপাশি রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অন্যান্য সেবাগুলো সে পরিমান হয়নি।

ছগীর আহম্মেদ বলেন, আমি পৌরসভায় প্রায় দেড় বছর ধরে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করেছি, এই কাজ করতে গিয়ে আমি প্রতিটি এলাকা ঘুরে দেখেছি যে, পৌরবাসীর প্রতিবন্ধিকতা ও সমস্যাগুলো। আমাদের পৌরবাসী শান্তিপ্রিয় মানুষ। এখানে অনিয়ম অন্যায় হলেও এগুলোর তারা প্রতিবাদ করেনা। একটি বি-গ্রেড পৌরসভায় যদি এখনও কাচা রাস্তা থাকে তাহলে সেটা হতাশাজনক। শুধু কাচা রাস্তাই নয়, আমি ষোলপাড়ায় গিয়েছিলাম, সেখানে রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়াটাও যেনো দূরহ ব্যাপার। এছাড়াও দরপত ফতেহকান্দি থেকে দুলালপুর রাস্তায় তো চলারও অবস্থা নাই, অর্জন্দি থেকে ছোট মগবাজার এলাকার রাস্তা এখনও কাচা রাস্তা। আমি বলবো না উন্নয়ন হয়নি, এসব এলাকা ঘুরে বি-গ্রেড পৌরসভায় একেবারেই উন্নয়ন কম হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে।

নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছগীর আহম্মেদ বলেন, কেউ যদি মনে করেন সরকারি বরাদ্ধ দিয়েই একটি পৌরসভার উন্নয়ন হয়ে যাবে আমার মনে হয় সেটা সঠিক হবে না। কারন বিভিন্ন সংস্থার কাজ এখানে আসে- যেমন এডিপি, জাইকা সহ বিভিন্ন সংস্থার কাজ আসে। এসব সংস্থার কাজগুলো স্বচ্ছতার সাথে আনতে হয় এবং স্বচ্ছতার সাথে কাজগুলো করে ফাইল জমা দিতে হয়। স্বচ্ছতার সাথে কাজগুলো না হলে এসব সংস্থা থেকে কাজগুলো পরবর্তীতে পাওয়া যায়না।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবাটা নিশ্চিত করতে হলে পৌরসভার প্রতিটি এলাকায় যেনো এ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে সেজন্য সে পরিমান যাতায়াত ব্যবস্থা থাকতে হবে। পৌরসভা থেকেও স্বাস্থ্য সেবাটা নিশ্চিত করতে হবে। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে দেখেছি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। তাই আমার স্বপ্ন আমি যদি পৌরসভার মেয়র হতে পারি তাহলে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে অফিস করে দিব। ওইখানকার সমস্যা ওখানে বসেই সমাধান করবো।

স্থানীয়দের সূত্রে, নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও পৌরসভার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম ছগীর আহম্মেদ যিনি দেড় বছর ধরেই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সময় কাটাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তরুণ ও যুব সমাজের মাঝে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ছগীর আহম্মেদ। স্থানীয় প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিদের খুব কাছের ব্যক্তি ছগীর আহম্মেদ।

একজন হাস্যোজ্জল ও মিষ্টভাষী ছগীর আহম্মেদ নৌকা প্রতীকের লড়াইয়ে নেমেছেন বেশ শক্ত রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়েই। তার রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। যেখানে ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী থেকে তিনি আজকে মেয়র প্রার্থী। যার রাজনীতিতে অনুপ্রেরণা তার মরহুম পিতা তৎকালীন আমিনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি সাহাবুউদ্দীন আহম্মেদ খেলু। পিতার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে পদার্পন ঘটে ছগীর আহম্মেদের। স্কুল জীবনেও ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তা ধরে সর্বশেষ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

এবার তার লক্ষ্য তার জন্মস্থানের মাটি ও মানুষের সেবা করা। পৌরবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাই তার একমাত্র লক্ষ্য। তবে রয়েছে পৌরবাসীর উন্নয়ন নিয়ে তার হতাশা। সেই হতাশা গুছতেই তিনি মেয়র হয়ে পৌরবাসীর আশা আকাঙ্খার চেয়েও বেশি কিছু দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা করছেন এবং মেয়র নির্বাচিত হয়ে নিজেকে পৌরবাসীর সেবায় বিলিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এতেই তিনি খুজছেন তার রাজনৈতিক জীবনের স্বার্থকতা।

এসব বিষয়ে সোনারগাঁও পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখী হোন ছগীর আহম্মেদ। পৌরসভার গোয়ালদি শাহী মসজিদ সংলগ্ন তার বাসভবনে সাক্ষাৎে গেলে দেখা যায় তিনি নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। স্থানীয় মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ ও দলীয় নেতাকর্মীরা আসছেন সাক্ষাত করছেন। সভা সমাবেশের জন্য বাড়ির সামনেই নিজস্ব কার্যালয়টি গুছিয়েছেন তিনি সুন্দরভাবে। বসার ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। সেখানে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জানালেন পৌরবাসীর উন্নয়নে তার হাজারো স্বপ্নের কথা।

ছগীর আহম্মেদের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘেটে জানাগেল- ১৯৯১ সালে সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে ইন্টারমেডিয়েটে ভর্তি হোন। এইচএসসি পাশ শেষে সেখান থেকে তিনি ১৯৯৫ সালের দিকে ঢাকা কলেজে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে এমএসএস-এ ভর্তি হোন। কিন্তু থেমে থাকেনি তার ছাত্রলীগের রাজনীতি। ঢাকা কলেজে গিয়েও তিনি শুরু করেন ছাত্র রাজনীতি। পলাশ-ফিরোজ কমিটি, অলোক-মিজান কমিটির আমলেও তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন।

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পর আবাহানী সমর্থক গোষ্ঠী নামক সংগঠনের ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হোন ছগীর আহম্মেদ। তারপর ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক, পরবর্তী কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেন ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।

ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কঠোর ভুমিকা রেখে বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমলে ২০০২ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হোন। ওই সময় বিএনপি-জামাতের আমলে ব্যাপক হামলা ও মামলার শিকার হোন ছগীর আহম্মেদ। বিএনপির ছাত্রদল ও জামাতের ছাত্র শিবিরের দ্বারা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন তিনি। কমিটিতে সভাপতি হওয়ার আগে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালে ছাত্রদল-ছাত্র শিবির দ্বারা ছগীর আহম্মেদ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হোন।

ওই সময় গুরুত্বর আহতাবস্থায় তাকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যেখানে বর্তমান আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে দেখতেও যান। বিএনপি জামাতের হামলায় তার ডান পায়ের উড়–তে গুরুত্বর আঘাত পান। কলেজে পরীক্ষা দিতে গেলে তিনি সে সময় এই হামলার শিকার হোন। এ ছাড়াও তিনি ২০০৫ সালে আবারো তিনি হামলার শিকার হোন। তাকে সরকারি দলের ইন্ধনে গ্রেপ্তারও করেছিল তৎকালীন ধানমন্ডি থানা পুলিশ। অসংখ্য রাজনৈতিক মামলার শিকারও হোন তিনি।

রাজধানীর এলিফেন্ড রোডে একটি লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনার মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছিল। ওই মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। এ ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক মামলাগুলো থেকেও তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। ২০০২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সোনারগাঁয়ের এই কৃতি সন্তান। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান।