1. admin@sunnarayanganj24.com : dinkalnarayangan :
  2. greeceman@mail.com : greeceman :
  3. mrokon5@gmail.com : Majharul Rokon : Majharul Rokon
সত্যের প্রতীক ‘চিন্তাবিদ’ এবনে গোলাম সামাদ: তৈমূর আলম Sun Narayanganj
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:১৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
সাগর প্রধানের বড়ভাই ডালিম প্রধানকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার আড়াইহাজারে আঙ্গুরের ব্যর্থতায় আজাদের মুঠোবন্দি বিএনপি: কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় সুমন! সোনারগাঁও আসনে বিএনপির একক প্রার্থী: আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির টানাটানি! পবিত্র ওমরাহ পালনে যাচ্ছেন সাংবাদিক মাসুম বিল্লাহ, দোয়া কামনা শামীম ওসমানের সমাবেশে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের শোডাউন এমপি শামীম ওসমানের সমাবেশে হাসান ফেরদৌস জুয়েলের নেতৃত্বে আইনজীবীদের অংশগ্রহণ অয়ন ওসমানের শোডাউন নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আইনজীবী ফোরামের বিক্ষোভ সমাবেশ সাবেক এমপি কমান্ডার সিরাজের স্ত্রীর মৃত্যুতে মহানগর বিএনপির শোক প্রকাশ শামীম ওসমানের সমাবেশে কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যোগদান

সত্যের প্রতীক ‘চিন্তাবিদ’ এবনে গোলাম সামাদ: তৈমূর আলম

সান নারায়ণগঞ্জ
  • আপডেট বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০
  • ১ Time View
IMG 20191217 204242 1

যে বয়সে আমার ছাত্র রাজনীতি করার কথা ছিল সে বয়সে আমি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে নিয়ে সংগঠন করা শুরু করি। আমার করা সংগঠনগুলি অধিক্ষেত্র ছিল রিক্সা শ্রমিক, ঠেলাগাড়ী চালক, হোটেল শ্রমিক, মোটর শ্রমিক প্রভৃতি দিন মজুরদের নিয়ে। কলেজ জীবনে হাতের লেখার সুবাদে শিক্ষক মন্ডলী দেয়াল পত্রিকা লেখার দায়িত্ব দেন, কিন্তু সাহিত্য চর্চার যে ধৈর্য্য বা নেশা থাকার কথা সেটাও ছিল না। সমাজে প্রভাবশালীদের শোষন অত্যাচার, রাষ্ট্র কর্তৃক নাগরিকদের উপরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষম বন্টনের পরিবর্তে একটি বিশেষ গোষ্টি কর্তৃক রাষ্ট্রের সকল সুবিধা ভোগ, ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ধনী ও গরীবের মধ্যে আকাশ পাতাল দূরত্ব প্রভৃতি যখন মন মস্তিসকে ঘোরপাক খেতে থাকে তখন কয়েক বৎসর চেষ্টা তদবীর ও সাধনার পর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে “গনডাক” নামে একটি জাতীয় সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশনা ও সম্পাদনা শুরু করলেও সম্পাদনার সময়টি ভালো যায় নাই, বরং কন্টময় ছিল, তিন তিন বার শুধু আদালত অবমাননায় মামলার আসামী হয়েছি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিউজ করায় গ্রেফতার হয়েছি। অবশ্য “গ্রেফতার” আমার জীবনে নিত্যদিনের সাথী। এজন্য এর দিন ক্ষন মনে রাখি না।

তখন দৈনিক বাংলা, দৈনিক সংগ্রাম ও দৈনিক আজাদ পত্রিকায় নিয়মিত ভাবে আমার আর্টিকেল প্রকাশিত হতো। জাতীয় রাজনৈতিতে গভীর মনোনিবেশ, আন্দোলন সংগ্রামে অধিক সময় ব্যায়, জেলহাজত মামলা মোকদ্দমা ঘানি টানা, পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পরিবহন বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান পদে (২০০১-২০০৬) দীর্ঘ ৫ বৎসর চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ, ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ওয়ান ইলিভেনের বির্তকিত সরকার কর্তৃক কারাবরণ প্রভৃতি কারণে লেখালেখির পাঠ আমার চুকে যায়। ২৬ মাস কারা ভোগ করে জেল থেকে বের হওয়ার পর জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় অনিয়মিত আর্টিকেলগুলি প্রকাশিত হলেও ২০১৫ ইং সনে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেফতার এড়ানোর জন্য কয়েকমাস আত্মগোপনে থাকাবস্থায় দৈনিক নয়া দিগন্ত (শনিবার), দৈনিক ইনকিলাব (সোমবার), দৈনিক দিনকাল (বুধবার) পত্রিকায় নিয়মিত কলাম প্রকাশিত হচ্ছে। এরই মধ্যে হাতে গোনা ২/১ জন লেখক যাদের কলাম পড়ে আমি অনুপ্রেরনা সহ অনেক বিষয়ে সত্যের সন্ধান পেয়েছি তিনি হলেন সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ। আমার ধারনা মতে তিনি একজন “জাতীয় শিক্ষক।”

সিনিয়র অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদের কলামের আমি একজন নিয়মিত পাঠক এবং আমার মনে হয়েছে যে, কলাম লেখার বিষয়ে আমি তার একজন ছাত্র বটে। একজন ছাত্র যেমন একজন শিক্ষককে অনুশরন ও অনুকরণ করে, আমি তাহাই করেছি, যদিও তার সাথে কোন দিন ব্যক্তিগত ভাবে আমার সাক্ষাৎ বা কথা হয় নাই। তবে আমার মনবাসনা ছিল তার সাক্ষাৎ লাভের। নানাবিধ ব্যাতিব্যস্ততার মধ্যে তা হয়ে উঠে নাই। মনে মনে প্রবল ইচ্ছা রইল সন্নিকটেই সাক্ষাৎ পাওয়ার।

অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ ১৯৪৮ ইং সনে শিক্ষা সংঘ বিষ্ণপুর থেকে মাধ্যমিক সমমানের পরীক্ষা “বি, কোর্স” পাশ করেন। আমার পিতা ১৯৪৭ ইং সনে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাটিক পাস করেছিলেন। বয়সের দিক থেকে তিনি আমার পিতার সমসাময়িক এবং শ্রদ্ধার দিক থেকে আমি তাকে সে আসনেই মনে করি। কারণ এ র্দূদিনে যেখানে “সত্য” বলার পরিবর্তে সাহিত্যে চাটুকারীর যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, এর বিপরীতে ছিল এবনে গোলাম সামাদের কলাম।

বর্তমানে মানসিক দাসত্বের একটি সংস্কৃতি সাহিত্যে জগতে প্রবেশ করেছে। সত্যকে প্রকাশ না করে শাসকদের প্রশংসায় প্রঞ্চমূখ হওয়াই যেন লেখালেখির জগতকে টইটুম্বুর করে দিয়েছে। বিদেশ থেকে কলাম লিখে পাঠাচ্ছে সেখানেও একতরফা প্রশংসা, সরকারের নাজায়েজ কর্মকান্ডকে জায়েজ করে দেয়ার প্রতিযোগীতা। দেশের অভ্যন্তরে বসে যারা কলাম লিখছেন তাদের অনেকেই আরও কয়েক দাপ এগিয়ে, বিশেষ করে কোলকাতাকে যারা সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী মনে করে নিজেদের ধন্য করেন।

এবনে গোলাম সামাদের কলামে জাতিস্বত্বা, জাতীয়তাবাদের মূলধারা, বঙ্গভংগের মুলতত্ত্ব, ইসলামী ঐতিহ্যের গুনগত পরিচয় প্রভৃতি বিভিন্ন রেফারেন্স উদ্ধৃতি দিয়ে লিখিত যা পড়লে প্রকৃত তথ্য একজন সত্য পিপাসু পাঠকের নিকট দিনের আলোর মত পরিষ্কার হতে উঠে।

বাংলাদেশের বড় বড় তিনটি রাজনৈতিক দলই জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। কিন্তু দলীয় নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে জাতীয়তাবাদের যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক উন্নতমানের সমৃদ্ধশালী ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ। কোলকাতা মনস্ক মুসলিম নামধারী বুদ্দিজীবিরা নিজেদের আত্ম মর্যাদা যে ভাবে বিক্রি করে দিয়েছে তারই প্রতিবাদে অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ ছিলেন একজন ভ্যানগার্ড।

অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ সাহেবের চর্তুরমূখী মেধা, বাহুবিধ প্রতিভা তার বিভিন্ন লেখনী ও বইতে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি জাতিস্বত্বার গোড়ায় প্রবেশ করেছেন, জাতীয়তাবাদের একটি পরিচ্ছন্ন ব্যাখ্যা তার লিখনীতে পাওয়া যায়, এছাড়াও সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি নিয়ে লিখনীতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে সামনে তুলে এনেছেন, যা অনেকেরই অজনা ছিল। বহুমূথী প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় তার লিখিত বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি, আতœপক্ষ, আতœপরিচয়ের সন্ধানে, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, মানুষ ও তার শিল্পকলা, নৃতত্ত্বের গোড়ার কথা, প্রাথমিক জীবানুতত্ত্ব, বায়ান্ন থেকে একাত্তর, আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং আরাকান সংকট, ইসলামী শিল্পকলা, শিল্পকলার ইতিকথা, বাংলাদেশে ইসলাম ও ঐতিহ্য, বর্তমান বিশ্ব ও মার্কসবাদ, বাংলাদেশের মানুষ ও ঐতিহ্য, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, জীবাণুতত্ত্ব, উদ্ভিদ সমীক্ষা, নৃতত্ত্ব, আমার স্বদেশ ভাবনা ও বাংলাদেশে ইসলাম বইগুলিতে।

অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ মহোদয় তার লেখনীতে কোথাও আপোষ করেন নাই। তিনি বহুপ্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিকে “আত্মপক্ষ” ব্যানারে নিয়মিত আর্টিকেল লিখতেন। সরকারের রক্ত চক্ষুকে পরিহারের জন্য পত্রিকার নীতি নির্ধারকদের নীতিমালার পরিপ্রেক্ষিত অধ্যাপক মহোদয়ের লেখার কিছু কথা কাটছাট করার অনুরোধ করলে তিনি সেই বহুল প্রচারিত আর্টিকেল সিরিজ “আত্মপক্ষ” লেখা বন্ধ করে দেন। দীর্ঘদিন তার লেখা না দেখতে পেয়ে আমি স্বউদ্দ্যোগে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে পত্রিকা অফিস থেকেই আমাকে একথা জানানো হয়। বিষয়টি বিস্তারিত জেনে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ স্বনামধন্য বহুল প্রচারিত জাতীয় পত্রিকায় লেখা ছাপার সূযোগ অব্যাহত না রেখে বরং তিনি তার ব্যক্তিত্বে অবিচল থেকেছেন।

অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ এর লেখনীতে প্রমাণ হয়েছে যে, তিনি একজন জীবন্ত ইতিহাস। সচরাচর ইতিহাসের পাতায় যা খুজে না পাওয়া যায় তার লেখনীতে পাওয়া যায় পরিষ্কার ধারনা। জীবিত অবস্থায় গুনীদের কদর বা যথাযথ স্থানে সম্মানীত করার সংস্কৃতি থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। এ শ্রেণীর ক্ষনজন্মাদের জাতীয় ভাবে সামনের সারিতে নিয়ে আসতে পারলে তার চেয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মই বেশী উপকৃত হতো। বাংলা একাডেমী নিজেই একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। ফলে সরকারী মদদ পুষ্ট লেখক না হলে সরকারী স্বীকৃত পাওয়ার কোন সূযোগ নাই।

একুশে পদক সহ জাতীয় পর্যায়ের পুরুষ্কারগুলি বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্বাচিত হয়ে থাকে। ফলে প্রকৃত জ্ঞানীদের ভাগ্যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত জোটে না। তবে দেশের আপামর জনগণ তাদেরকে স্বরণ রাখবে চিরকাল। সত্যোর প্রতীক, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ দীর্ঘজীবি হউন।

লেখক: তৈমূর আলম খন্দকার

রাজনীতিক, কলামিষ্ট ও আইনজীবি (এ্যাপিলেট ডিভিশন)

© ২০২৩ | সকল স্বত্ব সান নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক সংরক্ষিত
DEVELOPED BY RIAZUL