আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির একডজন নেতার চূড়ান্ত বিদায়!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির রাজপথের সক্রিয় রাজনীতি এখন তারুণ্য নির্ভর। যেখানে বিএনপির প্রবীণ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে কিংবা শারীরিক অসুস্থ্যতার ফলে বিএনপির রাজনীতি থেকে বিদায় ঘটেছে। যাদের সামনের রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ ছাড়াও আগামী জাতীয় নির্বাচনে পটপরিবর্তনের ফলে অনেকের চূড়ান্ত বিদায় ঘটবে যাদের রাজনীতিতে বেজেছে বিদায় ঘন্টা। কেউ কেউ বিএনপির রাজনীতি থেকেই নীরব হয়ে গেছেন অনেক আগেই। তবে এসবের মধ্যে অনেক নেতাদের নিয়ে আশাবাদী হলেও তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেও চলে। প্রায় এক ডজন বিএনপির প্রবীণ নেতার চুড়ান্তভাবে বিদায় ঘটবে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে।

২০০১ সালে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শিল্পপতি সফর আলী ভুঁইয়া। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্বে তার মনোনয়ন বাতিল করে আওয়ামীলীগের কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে ধানের শীষ মনোনয়ন তুলে দেয় বিএনপি। সেই নির্বাচনে গিয়াসউদ্দীন নির্বাচিত হলে সফর আলী রাজনীতি থেকে নীরব হয়ে যান। ২০১০ সালে আওয়ামীলীগের আমলে পুরোদমে বিএনপির রাজনীতিতে ফিরেন সফর আলী। কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর বছর খানিক সময়ের মধ্যেই তিনি নীরব হয়ে যান। প্রায় দশ বছর যাবত বিএনপির রাজনীতিতে তিনি নেই। তার স্থলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন আলী হোসেন প্রধান। তার মৃত্যুর পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বিএনপির কেউ আহ্বায়ক ছিলেন না। রাজনীতিতে তার পুরোপুরি বিদায়।

১/১ এর সময় কারাগারে চলে যান গিয়াসউদ্দীন। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে জাতীয় নির্বাচন আসলেই রাজনীতিতে সরব হওয়ার চেষ্টা করেন গিয়াস। সারা বছর রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় থাকলেও নির্বাচন নাগাদ সময়ে তিনি সেজে যান বড় নেতা। এবারো তার ব্যতয় ঘটেনি। রাজনীতির মাঠে গিয়াস সরব হওয়অর চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বলছেন- তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ার চেষ্টায় নেমেছেন। সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনে পূর্বের আসনে এমপি হওয়ার স্বপ্নে। কিন্তু এই নির্বাচনে এমপি না হতে পারলে কিংবা জেলা বিএনপির নেতৃত্ব না পেলে নির্বাচনের পর রাজনীতি থেকে ঘটবে তারও বিদায়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন ১/১১ এর সংস্কারবাদী নেতা রেজাউল করিম। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে তিনি একাধিকবারের এমপি। হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। ২০১৪ সাল পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে সরব হতেন। যদিও রাজপথের কোনো আন্দোলনে সংগ্রামে তার হদিসও ছিলো না। বর্তমানে গুরুত্বর অসুস্থ্য। কয়েক মাস পূর্বে তাকে একটি অনুষ্ঠানে দেখা গেলেও ঠিকমত দাঁড়াতেও দুজনের সহায়তা নিতে হয়েছে। গত নির্বাচনে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। এই আসনে সামনেও মান্নানেরই নিশ্চিত মনোনয়ন। ফলে রেজাউলের রাজনীতিতে চূড়ান্ত ফুল স্টপ।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আবুল কালাম বয়সের কারনে রাজনীতি থেকে একেবারেই বিদায়। যদিও তিনি সুস্থ্য হলে রাজনীতিতে ফিরতেও পারেন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে তিনি রাজনীতিতে ফিরে এমপি না হতে পারলে তারও রাজনীতিতে চুড়ান্ত বিদায় নিশ্চিত হবে।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের বিএনপির একাধিকবারের এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুরের সামনেও রাজনীতিতে বিদায় ঘন্টা। গত নির্বাচনে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ। এখানে শক্ত অবস্থানে জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনও যিনি আঙ্গুরের ভাতিজা। গত নির্বাচনে যদিও প্রাথমিকভাবে তিনজনই মনোনয়ন পান। আগামী নির্বাচনে আঙ্গুর মনোনয়ন না পেলেই তার রাজনীতির চুড়ান্ত বিদায় ঘটবে।

গত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। চুড়ান্ত মনোনয়ন পান কাজী মনির। গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পেরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করায় বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কৃত হোন তৈমূর আলম। ওই সময় তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। সামনের জাতীয় নির্বাচনে যদি তৈমূর ও কাজী মনির মনোনয়ন না পান তাহলে তাদের রাজনীতিতে এখানেই ইতি। কাজী মনির এমনিতেই রূপগঞ্জে কোণঠাসা। রাজনীতিতেও তিনি নেই। ফলে সামনের নির্বাচনের পর রূপগঞ্জে দিপু ভুঁইয়ার একক নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের রাজনীতিও সামনের নির্বাচনের পর বিদায় হতে যাচ্ছে। কারন সোনারগাঁ আসনে মান্নানের একক নিয়ন্ত্রণ। উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ হারানোর পর তিনি ঘুরে দাড়াতে পারবেন না সেটা প্রায় অনুমেয়। জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস এখন রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয়। তিনি এখন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানশীপ নিয়েই ব্যস্ত। এক সময়কার প্রতাপশালী নেতা আব্দুল মজিদ খন্দকারের সেই প্রতাপ এখন আর নেই। শারীরিকভাবেও বয়সের কারনে অসুস্থ্য। আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর আবু জাফর, আজাদ বিশ্বাস ও মজিদ খন্দকারদের মত নেতাদের রাজনীতির মাঠে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।

তবে এদিকে দলের প্রকাশ্য নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদে রয়েছেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। গত নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়ে দেন তিনি। তবে তার অনুগতদের মাধ্যমে থানা বিএনপির কমিটি নিয়ে যান তিনি। বর্তমানে থানা বিএনপির একাংশের নেতারা এখানো শাহআলমের অনুগামী হিসেবে রাজনীতি করছেন। সামনের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এক্ষেত্রে ফিরে আসতে পারেন আজাদ বিশ্বাসও। তবে শাহআলম কামব্যাক করতে না পারলেও নির্বাচনের মাধ্যমে দুজনের রাজনীতিতে বিদায় হবে চূড়ান্ত।