রাষ্ট্র ও মন্ত্রীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগে রাব্বির বিরুদ্ধে বার সভাপতির মামলা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

রাষ্ট্র ও সরকারের মন্ত্রীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ এনে তেল গ্যাস বন্দর রক্ষা কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া।

৩১ আগস্ট মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (ক’ অঞ্চল) এ মামলার আবেদন করা হয়। মামলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ন কবীর বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে সঠিক হলে সেটিকে মামলা হিসেবে রুজু করতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদালতের এ নির্দেশ সদর থানায় জমা দেয়া হলেও বুধবার বিকাল পর্যন্ত এমন কোনো নির্দেশের কপি পাননি বলে জানিয়েছেন সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান।

দায়ের করা মামলার নথি থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ বন্দর উপজেলায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি প্রয়াত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতু, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন ৮ লেনের আঞ্চলিক মহাসড়কটি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষাসৈনিক স্বাধীনতা পদকে ভূষিত (মরণোত্তর) একেএম সামসুজ্জোহা সড়ক এবং চাষাঢ়া থেকে আদমজী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রয়াত ভাষাসৈনিক বেগম নাগিনা জোহা সড়ক হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব রাখেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিষয়টি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে পেশ করা হয়। গত ২৫ মে ৩টি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে উক্ত ৩টি স্থাপনাকে নামকরণের ঘোষণা দেয়। এতে নারায়ণগঞ্জের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আনন্দ প্রকাশ করেন।

কিন্তু গত ৮ জুন নারায়ণগঞ্জ নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা মিলনায়তন চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি তার বক্তব্যে বলেন, সরকারের মন্ত্রী আমলারা টাকা খেয়ে নারায়ণগঞ্জের রাস্তা ও স্থাপনার নামকরণ করেছে। যেসব মন্ত্রী আমলারা এ নামকরণ করেছেন তাদের কাছে জানতে চাই- যাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জে বা দেশে তাদের অবদান কী? খুন-খারাপি লাশ ফেলানো এই যোগ্যতার মধ্যে পড়ে কিনা? মেনডেড ছাড়া সরকার বলেই জনমতের তোয়াক্কা না করে যা ইচ্ছা তাই করে চলেছে।

এদিকে আদালত সূত্র জানায়, মুহাম্মদ মোহসীন মিয়ার মামলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক গত ৩১ আগস্ট নির্দেশনায় লিখেছেন- আনীত অভিযোগসমূহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ধারায় আমলযোগ্য, যা সত্যতা নির্ণয়ের দাবি রাখে। এমতাবস্থায় অভিযোগসমূহ প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সঠিক মর্মে প্রতীয়মান হলে এফআইআর হিসেবে রুজু করার জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া গেল।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া জানান, যে ৩ জনের নামে শীতলক্ষ্যা সেতু ও ২টি মহাসড়কের নামকরণ করা হয়েছে তারা ৩ জনই প্রয়াত। তাদের মধ্যে ২ জন ভাষাসৈনিক, একজন স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগঠক এবং অপরজন একাধিকবারের নির্বাচিত এমপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাছাড়া এত বিশাল পরিধির স্থাপনা নামকরণের নেপথ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ছিল বলেই হয়েছে। সেখানে বিবাদী রফিউর রাব্বির এমন বক্তব্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রের বিরোধিতা ও অবমাননার সামিল।

যদিও বিষয়টি এখনো জানেন না বলে জানিয়েছেন সাবেক কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক নেতা রফিউর রাব্বি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি এখনো শুনিনি। মামলা হয়ে থাকলে সেটি আইনি প্রক্রিয়াতেই জবাব দিব।

অপরদিকে এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান বলেন, আমি এখনও আদালতের কোনো নির্দেশের কপি পাইনি। তবে আদালতের নির্দেশ পেলে সে অনুসারেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে মামলার বাদী মহসিন মিয়া দাবি করেন, গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যাতেই জরুরিভিত্তিতে আদালত থেকে নির্দেশনামা সদর মডেল থানায় জমা হয়েছে, যার কপিও আমার কাছে রয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ আইনজীবী খোকন সাহা একই ইস্যুতে রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে গত ১৫ জুন একটি সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। ওই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন খোকন সাহা।

গত ৮ আগস্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদ বিষয়টি আমলে নিয়ে সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিডির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামানকে। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি ওসি শাহ জামান।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর