দ্বৈতনীতিতে সোনারগাঁয়ে ক্ষোভ: সিংহ খালাস, ঘোড়ায় শাস্তি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি পূণর্বিন্যাস করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ।

যেখানে ২১ সদস্যের মধ্যে ৭জন নেতাই একটি ইউনিয়ন থেকে স্থান পেয়েছেন। বৈদ্যেরবাজার ও সাদিপুর ইউনিয়ন এলাকা থেকে কাউকেই রাখা হয়নি। এর মাঝে একজন আবার ইটালি থেকেও পদ পেয়েছেন। মাহাবুব সরকার নামে একজন ইটালি প্রবাসী যিনি কমিটির সদস্য। এই হলো পূণর্বিন্যাস!

আবার ইটালি থেকে কমিটির সদস্য পদে অধিষ্ট হলেও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামকে রাখা হয়নি। তবে এ নিয়ে সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কালামকে না রাখায় ফেসবুকে নেতাকর্মীরা ক্ষোভের ঝড় তুলেছেন।

তবে কালামকে কমিটিতে না রাখার বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল মিডিয়াতে বলেছেন অভিন্ন কথা। নারায়ণগঞ্জের একটি অনলাইন নিউজ নারায়ণগঞ্জ আব্দুল হাইয়ের বরাদ দিয়ে লিখেছে, নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় কালামকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের বরাদ দিয়ে দৈনিক ডান্ডিবার্তা পত্রিকায় লিখেছে, ‘২১ সদস্যের উপজেলা কমিটি দিয়েছি। সকলকে নিয়ে পুনর্বিন্যাস করে দিয়েছি কমিটি। ঝগড়া-ঝাটি বাদ দিয়ে মিলেমিশে চলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’

মাহফুজুর রহমান কালামকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কালাম তো বাদ পড়বেই। সে তো বিদ্রোহী প্রার্থী। সে তো ক্রেজি বয়। তাকে তো কেউ চায় না। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়।’

নারায়ণগঞ্জের মিডিয়াতে জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ দুই নেতার বক্তব্য প্রকাশের পর ফেসবুকে সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষোভ ঝাড়ছেন। নেতাকর্মীরা বলছেন- গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেত্রীর নির্দেশের বাহিরে গিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত। তার পক্ষে কাজ করেছিলেন মোশারফ হোসেন, আরিফ মাসুদ বাবু ও রফিকুল ইসলাম নান্নুও। যদিও নির্বাচনের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান কায়সার হাসনাত। কিন্তু সরকারিভাবে তার প্রার্থীতা বহাল ছিল। কারন তিনি প্রত্যাহারের দিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।

এ বিষয়ে নেতাকর্মীরা ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন- গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন মাহফুজুর রহমান কালাম। নির্বাচনের পর তার এই ভুল ক্ষমাও করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ। কিন্তু নেতাকর্মীরা বলছেন- যদি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারনে কালামকে কমিটিতে না রাখা হয় তাহলে তো কায়সার হাসনাতকেও কমিটি রাখা যেতো না। তার মানে শীর্ষ নেতাদের বিচারে সিংহ খালাস, ঘোড়ায় শাস্তি? এখানে জেলা আওয়ামীলীগের নেতারা দ্বৈতনীতি প্রয়োগ করেছেন। কারন সোনারগাঁয়ে কালামের কর্মী সমর্থক রয়েছে বেশ।

জানাগেছে, ২২ মার্চ সোমবার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত এক প্যাডে এই কমিটির অনুুমোদন দেন।

কমিটিতে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ বেশকজনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি সান নারায়ণগঞ্জকে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে আহ্বায়ক ও পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির বিরোধীতা করেছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ বেশকজন নেতা। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে এই কমিটিকেই চূড়ান্ত বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।

ওই কমিটিতে সদস্য পদে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবু।

এদিকে নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার পর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কায়সার হাসনাত এবং পরবর্তী যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের নাম রাখা হয়েছে। বাকিরা সবাই সদস্য।

বাকি সদস্যরা হলেন- ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, এস এম জাহাঙ্গীর আলম, শামসুদ্দীন খাঁন আবু, বাবুল ওমর, আরিফ মাসুদ বাবু, মাহমুদা আক্তার ফেন্সি, আশরাফুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম নান্নু, মোহাম্মদ আলী হায়দার, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, মোঃ জহিরুল হক, মাহবুব হোসেন সরকার, অ্যাডভোকেট আবু তাহের ফজলে রাব্বী, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, লায়ন মোঃ মাহাবুর রহমান বাবুল, মোঃ মাহাবুর রহমান লিটন ও গাজী মজিবুর রহমান।

এখানে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন থেকে আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, মোশারাফ হোসেন, মাহমুদা আক্তার ফেন্সি, আরিফ মাসুদ বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, রফিকুল ইসলাম নান্নু ও আশরাফুজ্জামান। সোনারগাঁও পৌরসভা থেকে গাজী মজিবুর রহমান ও অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী।

নোয়াগাঁও থেকে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া, সনমান্দি ইউনিয়ন থেকে শিল্পপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও আলী হায়দার, পিরোজপুর ইউনিয়ন থেকে ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, বারদী ইউনিয়ন থেকে অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, জহিরুল হক, লায়ন মাহাবুবুর রহমান বাবুল, জামপুর ইউনিয়ন থেকে আবু জাফর চৌধুরী বিরু, সামসুউদ্দীন খান আবু, মাহাবুবুর রহমান লিটনকে রাখা হয়েছে।