জনকল্যাণে জাতীয় পার্টি, বিচ্ছিন্ন বিএনপি, খণ্ড খণ্ড আওয়ামীলীগ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রাজনীতিতে জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে জনগণের মাঝে স্থান করে নিয়েছে জাতীয় পার্টি। এখানকার রাজনীতিতে জনকল্যাণমূলক কোনো কর্মকাণ্ডেই নেই বিএনপি। বিএনপি এখন নিজেদের দল গোছাতে ব্যস্ত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গ্রুপ উপ-গ্রুপ মিলিয়ে এক ত্রাহি অবস্থা। যার ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা এখানে এমপি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গ্রুপ উপ-গ্রুপ তৈরি করায় খন্ড খন্ড বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ।

নিজেদের দল গোছানোর ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী অবস্থানে না নিয়ে এখানকার আওয়ামী লীগকে নাজেহাল করে তুলেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আবার এখানে বিএনপি জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড না থাকায় জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে এখানকার বিএনপি। যেখানে জাতীয় পার্টি নেতারা এমপির নেতৃত্বে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ব্রিজ-কালভার্ট রাস্তাঘাটসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিজেদের সক্রিয় রেখে সোনারগাঁয়ে এখন জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থানে রয়েছে।আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের ঐক্যবদ্ধ না করেই উল্টো জাতীয় পার্টিকে দমাতে বারবার জাতীয় পার্টির উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগের নিজেদের অবস্থা যখন নড়বড়ে তখন তারা অনৈক্য নিয়ে জাতীয় পার্টিকে দমাতে গিয়ে উল্টো জাতীয় পার্টির কাছে পিছনে পড়ে যাচ্ছে এখানকার আওয়ামী লীগ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে সোনারগাঁয়ের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে দল-মত নির্বিশেষে ভূমিকা রেখে আসছেন। একই সঙ্গে নিজের দল জাতীয় পার্টিকে শক্ত অবস্থান তৈরি করে জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জাতীয় পার্টিকে সম্পৃক্ত করে তুলেছেন। যার ফলে সোনারগাঁয়ের সাধারণ আমজনতার কাছে জাতীয় পার্টি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ৮ বছর যাবত এখানকার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি ভূমিদস্যুর মত কোনো ধরনের অপকর্মের অভিযোগ ওঠেনি।  সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানিয়েছেন স্থানীয় এমপির নির্দেশনায় জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা রয়েছেন জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। জাতীয় পার্টি যখন এমন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের মাঝে স্থান করে নিয়েছে, তখন আওয়ামী লীগের নেতারা জাতীয় পার্টিকে চাপে রাখার জন্য চেষ্টা করে আসছেন। কিন্তু উল্টো হিতে বিপরীত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় হেফাজতের সাবেক নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট কাণ্ডের ঘটনার মামলায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নাজেহাল করার চেষ্টা করা হয়। এতে সাধারণ মানুষের কাছে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে যায়। তাদের দাবি ওই ঘটনার সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা কোনক্রমেই জড়িত ছিল না, যা দিনের মতো পরিষ্কার। শুধু রাজনৈতিক কারণে এখানে জাতীয় পার্টিকে দমানোর চেষ্টা হিসেবে মামুনুল হকের ওই ঘটনার দায়েরকৃত মামলায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের আসামি করে হয়রানি করা হয়। বিষয়টি সাধারণ মানুষ সহজভাবে মেনে নেয়নি। যে কারণে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি আরো শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে এই আসনের বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম প্রায় দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। বয়সের ভারে তার রাজনীতির বিদায় ঘন্টা। তার স্থলে বিএনপি’র হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। কিন্তু আবু জাফরকে কোণঠাসা করে বিএনপিকে নাজেহাল করে তোলেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি’র বর্তমান আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম মান্নান। তিনি বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মান্নান সোনারগাঁয়ের বিএনপির পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে সোনারগাঁয়ের বিএনপি’র রাজনীতিকে বাম রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছেন। এখারে বিএনপি নেতাকর্মী খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে।আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেখানে সোনারগাঁবাসীন জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। যে কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে আজহারুল ইসলাম মান্নানের নিয়ন্তণাধীন কর্তৃত্বের বিএনপি। জাতীয় পার্টির বর্তমান যে শক্ত অবস্থান সাধারণ মানুষের মাঝে, তার দ্বারে কাছেও ভীড়কে পারছেনা বিএনপি। সোনারগাঁয়ে বিএনপির প্রতি মানুষের অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে আরো নাজেহাল অবস্থা আওয়ামী লীগের। উপজেলার একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়নের চেয়েও বেশি খণ্ড-খণ্ড সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এমন একটা অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সোনারগাঁয়ে যেনো এক একটি ইউনিয়নই এক একটি আওয়ামী লীগ। যেসব নেতার কোন কোন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেও জামানত টিকিয়ে রাখা দায় হবে, তারাও যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন কিংবা নিজেদের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি জাহির করেন, তখন সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের অবস্থা যে কি সেটাই অনুময়। এখানকার রাজনীতি এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে কেউ লন্ডনে থেকে কেউবা সোনারগাঁয়ের বাইরে থেকেও নিজেদেরকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দাবি করে প্রচারণা চালান। যাদেরকে সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনই দেখা যায়নি তারাও সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করেন।

যার ফলশ্রুতিতে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নমিনেশন প্রত্যাশী ছিলেন প্রায় ডজন খানিক ব্যক্তি। বর্তমানে তাদের অনেকের ছায়াও দেখা যাচ্ছে না। সোনারগাঁয়ে যখন আওয়ামী লীগের ত্রাহি অবস্থা, তখন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাএ সোনারগাঁ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছিলেন। যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে তখন সোনারগাঁয়ে এমন একটা দশা হয়ে উঠেছে, প্রত্যেকটা আওয়ামী লীগ নেতা একেকটা আওয়ামী লীগ। যে কারণে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর আড়াইহাজার এলাকায় গিয়ে সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র পদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী সামসুল আলম সামসু সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন। নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শামসুল আলম তিনি বলেছেন সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগ আটটা দশটা খন্ড, এই গ্রুপ সেই গ্রুপ। সোনারগাঁয়ের যা-তা অবস্থা আওয়ামী লীগের।

তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়েও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই ডজন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নিজেদেরকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি হিসেবে জাহির করতে মাঠে নামতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানকার রাজনীতিকে কয়েকদিন আগেও দেখা গেল কায়সার পন্থী ও বিরু পন্থীর তুমুল লড়াই। জাতীয় শোক দিবস পালনে নিজেরা নিজেরা নিজেদের প্যান্ডেল মঞ্চ ভাংচুরের নজির স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। কায়সার পন্থীরা দাবি করেছেন বিরু শিবিরের নেতা ছিলেন। এমন সব অভিযোগ পাল্টা নানা অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল সোনারগাঁও আওয়ামীলীগে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও খণ্ড খণ্ড আওয়ামী লীগ যে ঐক্যবদ্ধ হবে না, সেটা নতুন করে আবার দেখা দিয়েছে যখন ডাক্তার আবু জাফর বিরু ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন।