সরকারি দলের দালালি কৃপায় টিকবে তো তারা?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে তিনটি উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রনে ছিল বিএনপি। এর মধ্যে দুটি উপজেলা পরিষদ কার্যালয় দশ বছরের বেশি সময় ধরে পরিচালনা করছেন বিএনপির দুই নেতা। গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর শোচনীয় ভরাডুবির শিকার হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে। এবার আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ফলে তিনটি উপজেলা পরিষদের মধ্যে একটিতে কৌশলে বিএনপি নেতা টিকে থাকলেও বাকি দুটি উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রন শেষের দিকে। এর মধ্যে আরেকটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বিএনপির চেয়ারম্যান। ফলে বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছে বিএনপি নেতা একটিকে। সেটির নিয়ন্ত্রনও এবার না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

জানাগেছে, এবার উপজেলা নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ জেলার চারটি উপজেলায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে জেলার রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ শুরু করেছেন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও সরকারি দল কিংবা মহাজোটের এমপিদের কৃপা ছাড়া জয়ের কোন সম্ভাবনা নাই।

নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরের বছর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের তিন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্ধিতার সুযোগে বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন বর্তমান জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদ। তবে বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ায় সিটি এলাকা বাদে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। যদিও মামলা জটিলতায় তার পর থেকে আর নির্বাচন হয়নি এ উপজেলায়। ফলে সরকারি দলের সঙ্গে মিশে গিয়ে দুই টার্ম এখানে চেয়ারম্যান পদে আজাদ বিশ্বাস। বর্তমান এখানে নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগের জন্য বেশকজন নেতা মাঠে নেমেছেন। মামলা জটিলতায় নির্বাচন না হলেও আজাদ বিশ্বাসের জন্য চেয়ারটা আরও কদিন বরাদ্ধ থাকবে সেটা বলা যায়। তবে নির্বাচন হলে ছিটকে পড়বেন আজাদ বিশ্বাস। আজাদ বিশ্বাস এক অনুষ্ঠান বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের মত সাংগঠনিক নেতা আর কেউ নাই।’ এছাড়া ডিএনডি বাধ প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনের পর দেলপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে শামীম ওসমানের আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত হয়ে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, আমার নেতা শামীম ওসমান। শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’ এছাড়াও বন্দরের এক শিক্ষককে কান ধরে ওঠ বসের ঘটনায় এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ হামলার শিকার হলে তার পক্ষে মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। সরকারি দলের বি-টিম হিসেবে কাজ করলেও তার দলের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে থাকেন না। যে কারনে মাসদাইরে তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় মহিলা দলের নেত্রী রহিমা শরীফ মায়া আজাদ বিশ্বাসের সামনেই বলেছিলেন, এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগের দালাল, শামীম ওসমানের দালাল। ’ তারপর থেকে এসব নেতাদের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানা এলাকা নিয়ে বন্দর উপজেলা পরিষদ। এখানে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। গত নির্বাচনে এখানে ২০ দলীয় জোট থেকে সমর্থন পান বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি হাজী নূরউদ্দীন। কিন্তু কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান এখানে আতাউর রহমান মুকুলকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন ঘোষণা করেন। অথচ মুকুল সরকারি দলের হয়ে কাজ করে আসছিলেন এবং এখনও কাজ করেছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুকুল প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করেন এবং ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের মারধর করেন মুকুল। তবে এমন দালালি করে বন্দরে আবারো টিকে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু এখানে আওয়ামীলীগের বেশকজন মাঠে নেমেছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। ফলে মুকুলের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদ। দালালির পুরস্কার হিসেবে যদি এখানে মুকুল টিকে যায় তাহলে সেটাই সম্ভব। তবে আজাদ বিশ্বাস ও আতাউর রহমান মুুকুলের সামনে জেলা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসা অবস্থায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে কুকুর বলে গালি দিয়েছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কমান্ডার গোপীনাথ দাস। ওই গালি শুলে আজাদ বিশ্বাস ও মুকুল কোন ধরনের প্রতিবাদ করেননি এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের কোন অনুরোধও করেননি। কিন্তু তৎকালীন জেলা পরিষদের প্রশাসক বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই মিডিয়াতে বিবৃতি দিয়ে গোপীনাথ দাসের ওই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।

এদিকে নেতাকর্মীদের দাবি- সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। সরকারি দলের সঙ্গে আতাত করে সরকারি দলের বিরোধকে কাজে লাগিয়ে চেয়ারম্যান বনে যান মান্নান। সরকারি দলের দুই প্রার্থীর মধ্যে একজনকে নিজের প্রেসক্রিপশনে দাড় করিয়ে নিজের জয় নিশ্চিত করেছিলেন মান্নান। এছাড়াও দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকের মাধ্যমে সরকারি দলের কিছু নেতাদের ম্যানেজও করেছিলেন মান্নান। কিন্তু নানা আতাত আর গোপন সমযোঝায় মান্নান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও তিনি বেশিদিন দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। বেশকবার তিনি হয়েছিলেন বরখাস্ত। কারন বেশকটি নাশকতার মামলায় তিনি অভিযুক্ত। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে এমপি পদে নির্বাচন করেন। ফলে এখন তাকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে না দেখার সম্ভাবনাই বেশি। এর মধ্যে বিএনপি যাবেনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। ফলে এ উপজেলাটিও এখন বিএনপির হাতছাড়া। তবে মান্নান নির্বাচন না করলেও তার অনুগামী কাউকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী দাড় করানোর পরিকল্পনা চলছে বলেও নেতাকর্মীদের দাবি।