শামসুজ্জোহার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বন্দরে দোয়া মাহফিলে মানুষের ঢল

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম একেএম শামসুজ্জোহার ৩৩তম মৃত্যু বার্ষিকীতে পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়ায় হীরা মহলের পর এবার বন্দরেও মানুষের ঢল নেমেছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেল ৪টায় বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের ত্রিবেনী এলাকায় অবস্থিত শামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উক্ত দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত দোয়ায় মরহুম একেএম শামসুজ্জোহার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ১৫আগস্টে নিহত তাঁর পরিবারের সকল সদস্য, খান সাহেব ওসমান আলী, ভাষা সৈনিক মরহুম নাগিনা জোহা, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা হয়েছে।

দোয়ার পূর্বে মরহুমের ছোট ছেলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার পিতা একেএম শামসুজ্জোহার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

দোয়ার পূর্বে সংক্ষিপ্ত ব্যক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, আমি আপনাদের সহযোগীতায় আমার নির্বাচনী এলাকার ৭টি ইউনিয়নে ৭টি স্কুল করতে পেরেছি। এছাড়াও শহরে মর্গ্যান গার্লস এবং বন্দরে নবীগঞ্জ গালর্স স্কুলের উন্নয়নের কাজ চলছে। কদমরসুল কলেজকে সরকারি করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। অল্প কিছু হয়তো করতে পেরেছি। বন্দরের মানুষ আমাদের পরিবারটাকে অনেক ভালবাসে। এই বন্দরের আমাদের পরিবারের তিনজন সদস্যের নামে তিনটি স্কুল করতে পেরেছি। আমরা চিরদিন থাকবো না। আমি বন্দরে যখনই ডেকেছি আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টি বিএনপি সবাইকে একত্রে পেয়েছি। এটাই হয়তো আমার জীবনের সব থেকে বড় স্বার্থকতা। আজকেও কোন প্রকার প্রচারনা ছাড়াই এখানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। আমার পরিবারের সদস্যের জন্য দোয়া করতে। আমাদের পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আজকে মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া হচ্ছে এই স্কুলটি উনার নামেই প্রতিষ্ঠা করেছেন আমার বড় ভাই নাসিম ওসমান। সেইও আজ আমাদের মাঝে নাই। আপনারা উনাদের জন্য দোয়া করবেন। আর আমরা যে অল্পকিছুই করতে পেরেছি সেটি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যই করা হয়েছে। স্কুল গুলোকে আপনারা ভাল ভাবে পরিচালনা করবেন। এই স্কুলগুলোতেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আপনাদের সন্তানেরাই লেখাপড়া করবে তাই কোন অবস্থাতেই স্কুল গুলোতে রাজনীতি করবেন না। কারন ভবিষ্যত প্রজন্মকে তুলে ধরতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, যারা আজকে এখানে আমাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করতে এসেছেন, আমাদের পরিবারের জীবিত সকল সদস্যেদের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সাথে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো আপনারা যারা আজকে এসেছেন আপনাদের সকলকে যেন আল্লাহ রহমত করেন, বরকত দেন, হেফাজত করেন, হেদায়েত করেন। যাদের মা নাই বাবা নাই তাদের সকলের মা বাবাকে যেন আল্লাহ বেহেস্ত নসিব করেন।

শামীম ওসমান আরো বলেন, আমরা আমার বাবা মায়ের সন্তান হিসেবে গর্বিত। আমি কোন অহংকার করছিনা। আমরা বাংলাদেশের একটি ধনী পরিবারের সন্তান ছিলাম। কিন্তু আমার বাবা আমাদের জন্য কিছু রেখে যান নাই। এমনকি আমার বাবাকে দেওয়া দাদার উপহার হীরা মহলের বাড়িটিও বাবা বড় ভাই নাসিম ওসমানের বিয়ে সময় বন্ধক রেখে ছিলেন। আমার বাবা একজন সৎ মানুষ ছিলেন। রাজনীতি করতে এসেছিলেন। রাজনীতি বেচতে আসেন নাই। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ বেতারে ঘোষণা দিয়ে ছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে গুলি খেয়েছেন। বাবা আমাদের দিয়ে গেছেন কিভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়। কিভাবে মানুষের সেবা করে মানুষের ভালবাসা পেতে হয়। আমরা সেই বাবার সন্তান হিসেবে গর্বিত।
তিনি আরো বলেন, আমার মেজ ভাই তার নির্বাচনী এলাকায় ৭টি স্কুল বানিয়েছেন। একটা সময় ছিল আমি যখন তোলারাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। মাত্র সাড়ে ৯০০ টাকার জন্য ফরম ফিলাপ করতে পারছিলাম না। তখন আমার মেজ ভাই একজনের কাছে গিয়ে ছিলেন শামীমের ফরম ফিলাপ করতে পারছে না আমাকে সাড়ে ৯০০ টাকা দেন। তখন উনি বলে ছিলেন কিছু বন্ধক রাখো টাকা নিয়া যাও। উনি কিছু বন্ধক রাখতে পারে নাই। এরপর জীবন কানাই স্যার আমার ফরম ফিলাপের টাকাটা দিয়ে ছিলেন। আমার বড় বোনের বিয়ে হয়ে ছিল মসজিদের ভেতরে। ৭৫’র পর আমার বড় ভাই বৌভাতের রাতেই চলে যান বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে। বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। মেজ ভাইকে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ঢাকা থেকে গুলি করতে করতে নারায়ণগঞ্জে এসে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তার উপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে আধামরা অবস্থায় বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায়। আমার মা তখন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বলেছিলেন আমরা আরেকটা ছেলে আছে তাকেও ধরে নিয়ে যাও। তবে মনে রেখ আমরা বড় ছেলে দেশ ছাড়া কিন্তু মরে যায়নি বংশ শেষ হয়ে যায়নি। আমরা সেই সাহসী মায়ের সন্তান। এমন মায়ের সন্তান হিসেবে আমরা গর্বিত। যে মায়ের তিনটি ছেলেই আপনাদের দোয়ায় সংসদ সদস্য হয়ে আপনাদের সেবা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের পরিবার তিন পুরুষ ধরে সংসদ সদস্য হয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। আমি কোন অহংকার করছিনা। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে ভাল মানুষ হওয়া। আমরা সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। মানুষের জন্য কাজ করে মানুষের সেবা করে মানুষকে খুশি করার চেষ্টা করছি। আপনারা আমাদের পরিবারের সকলের জন্য দোয়া করবেন।

এর আগে বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ রশিদ বক্তব্যে মরহুম একেএম শামুসজ্জোহার সাথে তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালের জুন মাসে মরহুম শামসুজ্জোহার সাথে উনারা ৭জন চেয়ারম্যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতে যান এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনতে পান বঙ্গবন্ধু অল্প কিছু দিনের মধ্যে শামসুজ্জোহাকে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করতে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু উনাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করার আগেই ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে খুনী চক্র। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে সেদিন খুন করা হয়েছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বাবা মরহুম একেএম সামসুজ্জোহা ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত (মরনোত্তর) ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। তিনি মহান ভাষা আন্দোলন, ১১ দফা, ৬ দফা, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক। তিনি ১৯৭০ সালে গণপরিষদ ও ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় লগ্নে ১৯৭১ সনের ১৬ই ডিসেম্বর জাতির জনকের পরিবারকে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ) বন্দী দশা থেকে মুক্ত করতে গিয়ে ঢাকায় হানাদার বাহিনী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ‘বায়তুল আমান’- এ জন্ম হওয়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। মহান ভাষা আন্দোলনে তাঁর পরিবারে ৫ জন সদস্য একসাথে কারাবন্দী হয়ে ছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তিনি আদমজী জুট মিলসহ চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্, আর্দশ কটন মিল লক্ষèী নারায়ণ কটন মিল, আহমেদ বাওয়ানী কটন মিল, ঢাকা কটন মিল পুনর্গঠন করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর তিনি খুনিচক্রের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্টস এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ টাউন কে-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দোয়ার আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলার চেয়ারম্যান এমএ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, সিনিয়র সহ সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক আফজাল হোসেন, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও বন্দর উপজেলার ভাই চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার, বন্দর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা ইসলাম শান্তা, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি বাচ্চু মিয়া, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, সিটি কর্পোরেশনের ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হোসনে আরা, জেলা যুবসংহতির সভাপতি রাজা হোসেন রাজু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওশেদ আলী, আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদিক খান মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুর রহমান কমল, সহ প্রতিটি ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডের মেম্বারবৃন্দ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।