টিটু খোকনে শুরুতেই ধাক্কা খেলেন খোরশেদ ও মন্তু

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। যা গত শুক্রবার ৫ এপ্রিল মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়। এর পর দিন ৬ এপ্রিল বন্দরে উপজেলা যুবদলের বর্তমান কমিটি বাতিল করে একই মুহুর্তে উপজেলা যুবদলের ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রোরি মমতাজ উদ্দীন মন্তু। এই কমিটি গঠনের মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যেই কেন্দ্রীয় যুবদল তার সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। যার পিছনে কাজ করেছেন জেলা যুবদলের নেতারা সহ মহানগর যুবদলের বেশকজন নেতাও। যারা মুলত মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ক্ষুব্ধ এবং জেলা যুবদলের দাবিকৃত বন্দরের ৫টি ইউনিয়নে যারা নেতৃত্বে আসতে চান জেলা যুবদলের হয়ে তারাই।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর গত ৭ এপ্রিল মাসদাইরে মহানগর যুবদলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে মহানগর যুবদলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। উল্টো তারা মিডিয়াতে নানা বক্তব্য দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির প্রতি। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেলেন খোরশেদ ও মন্তু। আগামীর আন্দোলনে অতীতের মত মহানগর যুবদলকে রাজপথে জোড়ালো দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান নেতাকর্মীরা। আবার কেউ কেউ বলছেন, এবার মহানগর যুবদলের দুটি ব্যানারেও কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন আরেকটি গ্রুপ। যারা খোরশেদ ও মন্তুর কর্মকান্ডে ক্ষুব্দ তারা পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করবেন বলে ইতিমধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন। আবার কমিটি গঠনের পর বেশকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে খোরশেদ ও মন্তুর বিরোধী নেতাদের সংখ্যা বাড়ছেই।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে মহানগর যুবদলের ঘোষণা করা বন্দর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যে তা স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। ৬ এপ্রিল শনিবার বন্দরে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু। কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি।

আরও জানাগেছে, ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন তৎকালীন জেলা যুবদল দাবি করে আসছিল। ওই সময় কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতারা ৫টি ইউনিয়ন জেলার আওতাধীন থাকবে বলে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা যুবদলের তৎকালীন সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ থেকে সরে দাড়িয়ে ৫টি ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য মহানগর কমিটিকে সুযোগ করে দেয়। যার ফলে সেখানে বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠন করেছিল মহানগর যুবদল। সেই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ভিতরের এলাকা নিয়ে বন্দর থানা যুবদলের কমিটিও গঠন করে মহানগর যুবদল।

এর আগে জেলা যুবদলের আওতাধীন দাবি করে বন্দর উপজেলা যুবদলের ব্যানার নিয়ে ঢাকায় এক কর্মসূচিতে যোগদান করতে গেলে কমলাপুর এলাকায় মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন শিশির। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতির পদে রয়েছেন শহিদুল ইসলাম টিটু ও সেক্রেটারি রয়েছেন গোলাম ফারুক খোকন। এর আগের কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মোশারফ হোসেন ও সেক্রেটারি ছিলেন শাহআলম মুকুল।

মহিউদ্দীন শিশিরকে মারধরের প্রতিবাদ জানিয়ে বন্দরে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে জুড়া ঝাড়ু মিছিল করেছিলেন কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সহ-সভাপতি মুন্সী সামসুর রহমান খান বেনু ও বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম হিরন। এমনকি ওইদিন তৈমূর আলম খন্বদকার ও মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের কুশপুত্তলিকাদাহ করেছিলেন তারা।

পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন ও সেক্রেটারি শাহআলম মুকুল বিরোধ এড়াতে মহানগর যুবদলের উপর ছেড়ে দেয় ওই ৫টি ইউনিয়ন। কিন্তু বর্তমান জেলা যুবদল সেই ৫টি ইউনিয়ন নিজেদের দাবি করায় আবারো মহানগর ও জেলা যুবদলের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকা থেকে জেলা ও মহানগর যুবদলের দুটি কমিটিতেই নেতাদের পদে রাখা হয়েছে।

এদিকে বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির নির্দেশ এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের যুবদলের নেতাদের জানানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এখন কাগজের মাধ্যমে এভাবে কমিটি হবেনা। সকল কমিটি এখন সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে।’

বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন জেলা নাকি মহানগর কমিটির আওতাধীন থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত জানাবো। আপাতত আমরা এ বিষয়ে কিছু বলছিনা। মহানগর যুবদল বন্দরে যে কমিটি গঠন করেছে সেটা আমরা স্থগিত করেছি।’

এদিকে জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু দাবি করেছেন- বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের বাহিরের ৫টি ইউনিয়ন জেলা যুবদলের আওতাধীন হিসেবেই রাখা হয়েছে। ওই ৫টি ইউনিয়ন থেকে অনেক নেতাদের জেলা যুবদলে রেখেই জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের জানানো হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই গঠন করব। আর সীমানা নিয়ে কোন জটিলতা নাই। ৫টি ইউনিয়ন মহানগর যুবদলের আওতাধীন থাকবে।’

৬ এপ্রিল শনিবার নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। বন্দর উপজেলা যুবদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ৯০ দিনের জন্য এই ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল।

কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পারভেজ খান ও সদস্য হিসেবে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম মনু, মোঃ রুবেল মিয়া, বাবুল হোসেন মেম্বার, আবদুস সাত্তার, মোঃ মামুন ভূইয়া, মোঃ জাহিদ খন্দকার, আল-মামুন প্রধান, মোঃ নুর হোসেন, গোলজার হোসেন ভূইয়া, মোঃ আসাবুদ্দিন, মোঃ শিপন মাহমুদ, মোঃ বর জাহান, সেলিম খন্দকার, কামরুল ইসলাম, জাহিরুল খন্দকার জনি, সম্রাট হাসান সুজন।