ডাকাত সর্দারের পকেটে সাংবাদিকতার আইডি কার্ড!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বরপা আটিপাড়া এলাকার মৃত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন একজন পেশাদার ডাকাত। সাংবাদিকতার কার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াতো বিভিন্ন এলাকায়। দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় রেকি করে রাতের বেলায় তার দল নিয়ে করতো ডাকাতি। এমনি একজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে সোনারগাঁও থানা পুলিশ। মোহাম্মদ হোসেন ডাকাত দলের সর্দার। গ্রেপ্তারের পর তার পকেট থেকে একটি অখ্যাত দৈনিক পত্রিকার আইডি কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ। এই হোসেন ছাড়াও আরেক ডাকাত সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাইফুল শরীয়তপুর জেলার সখীপুুর থাকার বাহেরচর এলাকার হোসেন আলীর ছেলে।

সোনারগাঁ থানা পুলিশের এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, সোনারগাঁ থানাধীন শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ভিটিকান্দি গ্রামের মনজুর হাজীর বাড়ীতে গত ১৫ জুন রাত ২টার দিকে বসত বিল্ডিংয়ের গেট ও দরজার তালা কেটে ঘর সকলের হাত পা বেধে ডাকাত দল ডাকাতি করে বসত ঘরের সব টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মনজুর হোসেন বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই আজাদ।

তিনি আরও জানান, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তথ্য ও প্রযুক্তির সাহায্যে মূল অপরাধী ডাকাতদের অবস্থান নিশ্চিত করে ২৬ জুন বুধবার ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও লুুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ। আসামিদের আদালতে পাঠানো হলে ডাকাতির ঘটনা স্বীকার ১৬৪ ধারায় স্বীকরোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। ওই জবানবন্দিতে ডাকাত দলের সর্দার সাংবাদিকতার কার্ডধারী মোহাম্মদ হোসেনের নাম উল্লেখ করে আসামিরা।

পরবতীতে ২৭ জুন গভীর রাতে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত সর্দার মোহাম্মদ হোসেন সোনারগাঁ উপজেলার বারদী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে পত্রিকার আইডি কার্ড ও ডাকাতির মালামাল, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত মোহাম্মদ হোসেন জানায়, তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আরো ৩টি ডাকাতি মামলা আদালতে বিচারাধীন। তার ডান পায়ে একটু সমস্যা রয়েছে, তাতে তার কোন অসুবিধা হয়না। কারন তার ডাকাত দল যখন ডাকাতি করে সে তখন বাহিরে অবস্থান করে লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য করে। তার সদস্যরা ডাকাতি করে যে সমস্ত মালামাল পায় সব তার কাছে হস্তান্তর করে। সকল স্বর্ণালংকার বিক্রয় করা টকা ভাগবাটোয়ারা করা তার দায়িত্ব। তবে সে ভাগবাটোয়ার একাই অর্ধেক ভাগ সে পায়।

পুুলিশের কাছে ডাকাত হোসেন বলে, ‘আমি সাংবাদিক হওয়ার কারন একটাই লোকজন যাতে আমাকে অপরাধী না ভাবতে পারে। সে জন্যই দৈনিক দেশ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য প্রথম বিশ হাজার টাকা দেই পত্রিকার কর্তৃপক্ষকে এবং পরবর্তীতে প্রতি ৬ মাস পরপর দৈনিক দেশ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে নবায়নের জন্য ৫ হাজার করে টাকা দেই।’

এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডাকাত হোসেন অনেক চালাক প্রকৃতির এবং সু-কৌশলী লোক। তাই সে ডাকাতির পাশাপাশি এমন একটি পেশা বেচে নেয়, যে পেশায় কাজ করলে কেউ তাকে অপরাধী বুঝতে না পারে, আর সে পেশা হলো সাংবাদিকতার অন্তরালে ডাকাতি। ডাকাতি করার নতুন কৌশল হিসেবে টাকার বিনিময় দৈনিক দেশ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পায়। আর সাংবাদিক পেশায় এসে তার ডাকাতি করার সহজ উপায়ও পেয়ে যায় ডাকাত হোসেন। কারন ডাকাত হোসেন ডাকাতি করার আগে অভিনব কৌশল হিসেবে দৈনিক দেশ পত্রিকার আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে, হাতে ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কোথায়, কোন বাড়ীতে, কোন এলাকায়, কার বাড়ীতে ডাকাতি করবে এবং কার বাড়ীতে ডাকাতি করলে অনেক টাকা ও প্রচুর স্বর্ণালংকার পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে সে দিনের বেলা রেকি করে আসতো।

তিনি আরও জানান, এই ডাকাত হোসেন রাতের বেলা যখন তার ডাকাত দল নিয়ে ডাকাতি করার উদ্দেশ্য কোন এলাকায় বাহির হতো তখনও তার গলায় সাংবাদিকতার কাডটি ঝুলানো থাকতো। রাস্তায় কোন পুলিশ অথবা পাবলিক তাদের সন্দেহ হলে সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সবাইকে বাঁচিয়ে নিতো। আবার ডাকাতি শেষে ডাকাত দল নিয়ে ফেরার পথে গাড়ীর সামনে গলায় সাংবাদিক লেখা আইডি কার্ডটি ঝুলিয়ে বসা থাকতো ভয়ংকর সাংবাদিক ডাকাত হোসেন। এভাবে ভয়ংকর ডাকাত হোসেন এক সময় হয়ে উঠে সাংবাদিক পেশার আড়ালে ডাকাত দলের সরদার।