বন্দরেই হবে সেলিম ওসমান ও তার স্ত্রীর সমাধি

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

মৃত্যুর পর বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কান্দিপাড়া এলাকায় সমাধিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে জায়গা নির্ধারিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এমপি সেলিম ওসমান। যিনি বন্দর এলাকা এবং বন্দরের মানুষের ভালবাসায় মৃত্যুর পর নিজের লাশটি বন্দরে দাফন করার ঘোষণা অনেক আগেই দিয়ে ছিলেন। সম্প্রতি উনার সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান বন্দরে বিভিন্ন এলাকার নারীদের সাথে একটি মত বিনিময় সভায় মৃত্যুর পর বন্দরে স্বামীর পাশেই লাশ দাফন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ দম্পোত্তি উভয়েই মৃত্যুর পর বন্দরে পাশাপাশি নিজেদের লাফ দাফন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও ঠিক কোথায় সেটি হবে তা নিদিষ্ট করে কিছুই বলেননি।

৭ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল ৩টায় কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগনের উদ্যোগের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের অদূরে কান্দিপাড়ার একটি জায়গায় আলোচনা ও দোয়ার আয়োজন করেন। যেখানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এমপি সেলিম ওসমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্য প্রদানকালে এমপি সেলিম ওসমান আয়োজিত সভাস্থলে বর্তমান বায়না সূত্রে মালিক মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজিম উদ্দিন ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান এর সহ উপস্থিত সকলের অনুমতিক্রমে উক্ত জায়গাটুকু নিজের জন্য কিনে নেওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন। উপস্থিত সর্বসম্মতিক্রমে তিনি কাজিম উদ্দিন এর আগে নগদ কিছু টাকা দিয়ে জমিটি কেনার জন্য বায়না করেন।

পরক্ষণেই তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমি বন্দরকে ভালবাসি। বন্দরের মানুষকে ভালবাসি। আমার প্রতি আপনাদের ভালবাসা এবং বন্দরের প্রতি আমার ভালবাসা থেকেই আমার মৃত্যুর পর আমার লাশটি বন্দরে দাফন করার ঘোষণা দিয়েছি। আমার সহধর্মিনী নাসরিন ওসমান নিজেও তার মৃত্যুর পর আমার পাশেই তার লাশ দাফন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমি বন্দরকে ভালবাসি আর কলাগাছিয়া ইউনিয়ন এলাকাকে বন্দরের মধ্যে আমি সব থেকে বেশি ভালবাসি। এই ইউনিয়নের পুরোটাই আমার কাছে একটি ফুলের বাগান মনে হয়। তাই আমার মৃত্যুর পর এই ফুল বাগানের মাঝেই আমি থাকতে চাই। এই বায়না করার জমিতেই যেন মৃত্যুর পর আমার এবং আমার সহধর্মিনীর লাশটি দাফন করা হয়।

এমপি সেলিম ওসমানের মুখ থেকে সকলের অপ্রত্যাশিত এমন ঘোষণা শুনে উপস্থিত সকলেই কিছু সময়ের জন্য স্তব্দ হয়ে যান।

তিনি আরো বলেন, বন্দর নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে। আমি চাই এই কলাগাছিয়া ইউনিয়ন এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি কারিগরি ইনস্টিটিউট গড়ে উঠুক। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের পাশেই যেন আমার লাশটি দাফন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমি সব সময় সবাইকে বলি উপার্জনের একভাগ সঞ্চয় করতে, একভাগ সংসার চালাতে খরচ করতে আরেক ভাগ দিয়ে মানুষের কল্যানে ব্যয় করতে। আমি এখন থেকে আমি আমার উপার্জনের একভাগ নয় দুইভাগই মানুষের কল্যানে ব্যয় করবো।

নারীদের প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, একটা সময় ছিল পুরুষের উপার্জন করতো আর নারীরা তা ব্যয় করতো। কিন্তু এখন আর সেই সময় নাই। এখন নারীরা নিজেরাই উপার্জন করেন এবং নিজেরাই ব্যয় করেন, আবার উনারা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম নিজেদের সন্তানদের সুশিক্ষিত করার গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বিগত দিনে কাজ করতে গিয়ে ভুল ত্রুটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে আমার কাজে অনেক ভুল আছে। সেই ভুলের জন্য আমি আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না। অতীতে আমার ভুল গুলো আমি এখন বুঝতে পারছি। আজকে মত অতীতে যদি আমি ৩মাস অন্তর অন্তর আমি প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকায় সবার সাথে আলোচনায় বসতাম তাহলে বিগত সাড়ে ৪ বছরে বন্দরে যে উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে তার থেকে আরো অনেক বেশি উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না।

সব শেষে সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেখানে নৌকা নাই সেখানেই লাঙ্গলই শেখ হাসিনার মার্কা। প্রতিটি এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করে আবারো শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে।

কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান এর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজিম উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি বাচ্চু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু মিয়া, মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী মহিলালীগের সভাপতি ড. শিরীন বেগম, জেলা মহিলা পার্টির সভাপতি আঞ্জুমান আরা ভূইয়া, মহানগর মহিলা লীগের সভানেত্রী ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।