পাল্টা কমিটি জমা, সাখাওয়াত-কামাল ঠেকাতে আনোয়ার-খোরশেদ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান ও সেক্রেটারি পদে রয়েছেন এটিএম কামাল। এবার তাদের দুজনের পদ বহাল রাখা নিয়ে বেশ শংকা তৈরি হয়েছে, যখন মহানগর বিএনপির পাল্টা কমিটি জমা দিয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার অনুগামী নেতারা। যেখানে আনোয়ার হোসেন খানকে সভাপতি ও মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সেক্রেটারি করে একটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। মুলত দুটি কমিটি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলে সাখাওয়াত হোসেন খানের স্থলে দেখা যেতে পারে আনোয়ার হোসেন খান ও এটিএম কামালের স্থলে দেখা যেতে পারে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে। সেই লক্ষ্যেই মুলত কেন্দ্রে পাল্টা কমিটি জমা দেয়া হয়েছে।

নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর রাজনীতিতে অনেকটা চিরপ্রতিদ্বন্ধিতায় ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুুল কালাম। কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সংস্কারবাদী নেতা ঘোষণা দিয়ে আবুল কালামের কুশপুত্তালিকাদাহও করেছিলেন তৈমূর আলম অনুগামীরা। ওই কর্মসূচিতে মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামালও ছিলেন যিনি এখন আবুল কালামের সঙ্গেই রাজনীতি করেন। যদিও এটিএম কামাল তার পদ হারানোর শংকায় আমেরিকায় প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন আগে থেকেই।

তবে এবারও মহানগরীর রাজনীতিতে হাল ছাড়ছেন না তৈমূর আলম খন্দকার। এবার তার অনুগামী নেতাকর্মীরা মহানগর বিএনপির কমিটির একটি পাল্টা কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। যেখানে সভাপতি পদে আনোয়ার হোসেন খান ও সেক্রেটারি পদে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নাম রাখা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি গঠনের পর তৈমূর আলম খন্দকার ও আবুল কালামের সঙ্গে সেই বৈরিতা কাটিয়ে দুজনের মাঝে অনেকটা শিথিল সম্পর্ক দেখাও যায়। মহানগরীর রাজনীতি থেকে অনেকটাই পিছিয়ে যান তৈমূর আলম খন্দকার। সেই স্থলে বেশ জায়গা করে নেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলার আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এক সময় এখানে তৈমূর আলম খন্দকারের আধিপত্য ছিল বেশ। কিন্তু বর্তমানে তার ছোট ভাই মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের উপর ভর করেই এখানে তৈমূর আলমের অস্তিত্ব ভেসে আছে।

জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটিতে আবুল কালাম সভাপতি, সাখাওয়াত হোসেন খান সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি পদে রাখা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর কয়েক মাস পূর্বে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারি একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া কেন্দ্রে জমা দেন। যেখানে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে থাকা সাখাওয়াত হোসেন খানকে তৃতীয় সহ-সভাপতি পদে রেখে জমা দেয়া হয়। এ কমিটি নানা জটিলতায় কেন্দ্র থেকে আটকে রাখা হয়। এরি মধ্যে গত মাসের ১৬ এপ্রিল মহানগর বিএনপির জন্য আরেকটি খসড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি জমা দেয়া হয় যার মুলত তৈমূর আলম খন্দকারের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। কমিটিতে সভাপতি পদে জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে প্রবীণ বিএনপি নেতা জামাল উদ্দীন কালু, সেক্রেটারি পদে মহানগর যুবদলের সভাপতি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট সুলতান মাহামুদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে রাখা হয়। কমিটি জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাসানী নিজেই।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুটি কমিটির খসড়া নিয়ে বসে চূড়ান্ত কমিটি গঠন করেই ঘোষণা দিবেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এক্ষেত্রে প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে আনোয়ার হোসেন খানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে দেখা যেতে পারে। কারন আনোয়ার হোসেন খান কেন্দ্রীয় যুবদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও। মুলত সাখাওয়াত হোসেন খানকে ঠেকাতেই আনোয়ার হোসেন খানকে দাড় করানো হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তবে একেবারেই নড়বড়ে অবস্থায় পড়ে গেল এটিএম কামাল।

কারন এটিএম কামালের চেয়ে ব্যাপক সাংগঠনিক নেতা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এটিএম কামাল যেখানে ওয়ান ম্যান শো নেতা সেখানে খোরশেদের হাজার হাজার যুবদলের নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন নতুন কিছু নয়। সাখাওয়াত হোসেন খানের জনপ্রিয়তা ও নারায়ণগঞ্জের মহানগরীর অনেক নেতাদের নিজের বলয়ে নিতে সক্ষম হওয়ায় তার পদ বহাল থাকার সম্বাবনাও রয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে এটিএম কামালের পদ নিয়ে বেশ শংকাটাই বেশি। রাজপঝ ছেড়ে দিয়েছেন এটিএম কামাল অনেক আগেই। সেই সঙ্গে তিনি আমেরিকায় এখন আসা যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন। এখন দেখার বিষয় কি ঘটতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। তবে তৈমূর আলম অনুগামীদের খসড়া কমিটির কাউকেই যদি মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাই দেয়া না হয় সেক্ষেত্রে আরও বেকায়দায় পড়বেন তৈমূর আলম অনুগামী নেতারা।