সিদ্ধিরগঞ্জে এইচএসসি পাস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার! ২ বছরের সাঁজা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

২০০১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও ২০০৯ সালে কারিগরী শিক্ষা বোর্ড থেকে বানিজ্য বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেই নিজেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে জাহির রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন ভূয়া ডাক্তার তানভীর আহমেদ সরকার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি এই ভূয়া ডাক্তারের। র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ধরা খেয়েছেন তিনি। দিয়েছেন ২ বছরের সাঁজা।

মুলত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সেই পরষ্পর যোগসাজসে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে রোগী দেখা শুরু করেন তানভীর আহমেদ সরকার। এভাবে রোগীদের সাথে সেই দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। র‌্যাবের অভিযানে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সরকারী বিক্রয়যোগ্য নহে ওষুধও পাওয়া যায় এবং হাসপাতালে কোন এমবিবিএস ডাক্তারের উপস্থিতি ছিল না। তানভীর আহমেদ সরকার নিজেকে ডাঃ মোঃ তানভীর আহমেদ সরকার, সনোলজিষ্ট এবং বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট ও আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়েছেন। ওই অভিযানে একজন ভূয়া ডাক্তারকে ২ বছর ও হাসপাতালের ম্যানেজারকে ১ বছর কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। একই সঙ্গে হাসপাতালটি সিলগালাও করেছেন।

৯ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১) এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, র‌্যাব-১১ এর একটি বিশেষ অভিযানে ৮মে বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সানারপাড় রহিম মার্কেট (মৌচাক মোড়) এলাকায় ‘হেলথ কেয়ার আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ রোগী দেখার সময় ভূয়া ডাক্তার মোঃ তানভীর আহমেদ সরকার ও ক্লিনিকের ম্যানেজার আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত তানভীর আহমেদ দীর্ঘদিন নিজেকে একজন বড় মাপের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে এই হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখে আসছে। তাকে নিয়মিত সহায়তা করছেন হাসপাতালের ম্যানেজার আবুল বাশার।

র‌্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় মোঃ তানভীর আহমেদ সরকারের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার শিবনগর এলাকায়। সে দীর্ঘদিন নিজেকে একজন বড় মাপের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে এই হাসপাতালে ইমারজেন্সিতে নিয়মিত রোগী দেখে আসছে। গ্রেপ্তারকৃত তানভীর আহমেদ সরকার নিজেকে ডাঃ মোঃ তানভীর আহমেদ সরকার, সনোলজিষ্ট এবং বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট ও আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।

এ ছাড়াও বিভিন্ন রোগীর প্রেসক্রিপসনে ভিন্ন ভিন্ন নামে সে নিজেই স্বাক্ষর করতো। এমনকি ভর্তি হওয়া রোগীদের ফাইলে প্রেসক্রিপশনে সে নিজেই ভিন্ন ভিন্ন স্বাক্ষর করতো। তার এ সকল কাজে হাসপাতালের ম্যানেজার আবুল বাশার নিয়মিত সহায়তা করতো। এছাড়াও বিভিন্ন ডাক্তারের নাম ঐ ডাক্তারদের অজান্তে ব্যবহার করে আসছে। র‌্যাবের অভিযানিক দল নিবন্ধনকৃত চিকিৎসক হিসেবে তার কাছে সনদ দেখতে চাইলে তারা কোন সনদ দেখাতে পারেনি।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ২০০১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও ২০০৯ সালে কারিগরী শিক্ষা বোর্ড থেকে বানিজ্য বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করে। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সেই পরষ্পর যোগসাজসে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে রোগী দেখা শুরু করে। এভাবে রোগীদের সাথে সেই দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। অভিযানে হাসপাতালের ওটিতে সরকারী বিক্রয়যোগ্য নহে ওষুধ পাওয়া গিয়েছে এবং হাসপাতালে কোন এমবিবিএস ডাক্তারের উপস্থিতি ছিল না।

র‌্যাব আরও জানায়, এই ভূয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সরোয়ার আলম, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫৩ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ভূয়া ডাক্তার মোঃ তানভীর আহমেদ সরকারকে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং হাসপাতালের ম্যানেজার আবুল বাশারকে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। হাসপাতাল পরিচালনায় সরকারী নিয়মের বরখেলাপ হওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নির্দেশে ‘হেলথ কেয়ার আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ সিলগালা করে দেয়া হয়।

র‌্যাব-১১ দাবি করে- র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেপ্তাসহ আইন শৃংখলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। র‌্যাব শুরু থেকে যে কোন ধরণের অপরাধ, প্রতারণামূলক অপরাধ প্রতিরোধ এবং প্রতারক চক্রকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য অনুমোদনবিহীন হাসপাতাল ও ভূয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে র‌্যাব নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।