সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যা ৫ এপ্রিল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। ৬ এপ্রিল বন্দর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যেই তা স্থগিত করে দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। একই দিন মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে দুই তৃতীয়াংশ যুবদল নেতা উপস্থিত ছিলেন না। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে এসব কর্মকান্ডের ব্যাপক সমালোচনা করে আসছেন মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান।
এ বিষয়ে সাগর প্রধান অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, আমি সংগঠনের বিরুদ্ধে নই, সভাপতি ও সেক্রেটারির স্বেচ্ছাচারিতা বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আমি। অনেকেই মনে করছেন কিংবা মন্তব্য করছেন আমি সংগঠনের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। আমি সংগঠনের পক্ষেই আছি। নেতাকর্মীদের পক্ষে বলছি, সংগঠনের পক্ষে বলছি।’
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এখানে ভুল কর্মকান্ডের সমালোচনা থাকবেই। অনেক নেতাকর্মীরা বলছেন আমি কেন সমালোচনা করছি। কিন্তু আমি তো আমার পদের জন্য সমালোচনা করছি না। আমি তো আমার স্বপদে বহাল রয়েছিই। আমি তো নেতাকর্মীদের পক্ষেই কথা বলছি। যাদের সঠিক স্থানে রেখে মুল্যায়ন করা হয়নি আমি তাদের পক্ষেই কথা বলছি।’
সাগর প্রধান বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগে ৫ সদস্যের আংশিক কমিটির সকলকে নিয়ে বসা হয়নি। সভাপতি ও সেক্রেটারি দুজনেই নিজেদের মত মনগড়া কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়ে তা অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসলেন। আবার পরদিনই বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠন করে দিলেন। তা কেন্দ্র ১২ ঘন্টার মধ্যে স্থগিত করে দিল। এতে মহানগর যুবদলকে খাটো করানো হয়েছে। যদি সকলকে নিয়ে এসব সিদ্ধান্ত আসতো তাহলে এটা হতো না। আবার নিজেদের মনগড়া কমিটি গঠন করায় প্রথম সভাতেই অধিকাংশ নেতারা ছিলেন না। অনেক নেতারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার ঘোষণা দিচ্ছেন। এসব বিষয়গুলো ভবিষৎ আন্দোলন সংগ্রামে প্রভাব পড়বে।’
এদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে মহানগর যুবদলের ঘোষণা করা বন্দর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যে তা স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। গত ৬ এপ্রিল শনিবার বন্দরে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু। কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি।
এ বিষয়ে আরও জানাগেছে, ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন তৎকালীন জেলা যুবদল দাবি করে আসছিল। ওই সময় কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতারা ৫টি ইউনিয়ন জেলার আওতাধীন থাকবে বলে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা যুবদলের তৎকালীন সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ থেকে সরে দাড়িয়ে ৫টি ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য মহানগর কমিটিকে সুযোগ করে দেয়। যার ফলে সেখানে বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠন করেছিল মহানগর যুবদল। সেই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ভিতরের এলাকা নিয়ে বন্দর থানা যুবদলের কমিটিও গঠন করে মহানগর যুবদল।
এর আগে জেলা যুবদলের আওতাধীন দাবি করে বন্দর উপজেলা যুবদলের ব্যানার নিয়ে ঢাকায় এক কর্মসূচিতে যোগদান করতে গেলে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন শিশির।
ওই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বন্দরে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে জুতা ঝাড়– মিছিল করেছিলেন কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সহ-সভাপতি মুন্সী সামসুর রহমান খান বেনু ও বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম হিরন। এমনকি তাদের কুশপুত্তলিকাদাহ করেছিলেন তারা।
পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ এড়াতে মহানগর যুবদলের উপর ছেড়ে দেয় ওই ৫টি ইউনিয়ন। কিন্তু বর্তমান জেলা যুবদল সেই ৫টি ইউনিয়ন নিজেদের দাবি করায় আবারো মহানগর ও জেলা যুবদলের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকা থেকে জেলা ও মহানগর যুবদলের দুটি কমিটিতেই নেতাদের পদে রাখা হয়েছে।
কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেছিলেন, বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির নির্দেশ এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের যুবদলের নেতাদের জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেছিলেন, এখন কাগজের মাধ্যমে এভাবে কমিটি হবেনা। সকল কমিটি এখন সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে।’
বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন জেলা নাকি মহানগর কমিটির আওতাধীন থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত জানাবো। আপাতত আমরা এ বিষয়ে কিছু বলছিনা। মহানগর যুবদল বন্দরে যে কমিটি গঠন করেছে সেটা আমরা স্থগিত করেছি।’
এদিকে জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু দাবি করেছেন- বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের বাহিরের ৫টি ইউনিয়ন জেলা যুবদলের আওতাধীন হিসেবেই রাখা হয়েছে। ওই ৫টি ইউনিয়ন থেকে অনেক নেতাদের জেলা যুবদলে রেখেই জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেছিলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের জানানো হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই গঠন করব। আর সীমানা নিয়ে কোন জটিলতা নাই। ৫টি ইউনিয়ন মহানগর যুবদলের আওতাধীন থাকবে।’
৬ এপ্রিল শনিবার নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। বন্দর উপজেলা যুবদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ৯০ দিনের জন্য এই ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল।
কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পারভেজ খান ও সদস্য হিসেবে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম মনু, মোঃ রুবেল মিয়া, বাবুল হোসেন মেম্বার, আবদুস সাত্তার, মোঃ মামুন ভূইয়া, মোঃ জাহিদ খন্দকার, আল-মামুন প্রধান, মোঃ নুর হোসেন, গোলজার হোসেন ভূইয়া, মোঃ আসাবুদ্দিন, মোঃ শিপন মাহমুদ, মোঃ বর জাহান, সেলিম খন্দকার, কামরুল ইসলাম, জাহিরুল খন্দকার জনি, স¤্রাট হাসান সুজন।
