সোনারগাঁয়ে ধরাশয়ী আওয়ামীলীগ: রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টির বিজয়!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের হাতি প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমকে আওয়ামীলীগের সমর্থিত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। সেই লক্ষ্যেই তারা প্রতিটি ইউনিয়নে প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের হাতি প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেছেন।

একইভাবে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল যখন তালা প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী তখন জাতীয় পার্টির জন্য ইমেজ রক্ষার লড়াইয়ে পরিনত হয়। মাঠে নেমে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। এমপি খোকার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকত প্রতিটি ইউনিয়নে প্রার্থী ইকবালকে নিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির তুমুল লড়াইয়ে পরিনিত হয় এই নির্বাচনটি। শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগকে হারিয়ে বিজয়ী হয় জাতীয় পার্টি।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করেন, আগামী নির্বাচনের মাত্র বছর খানিক সময় বাকি। যে কারনে এখানকার সিংহভাগ জনপ্রতিনিধিরা কার পক্ষে রয়েছেন সেটা প্রমানেও মাঠে নেমে যান এমপি খোকা ও সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত। কারন আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এমপি খোকা ও কায়সার হাসনাতের মধ্যেই হতে পারে মনোনয়ন লড়াইটা (যদি মহাজোট বহাল থাকে)। যে কারনে কায়সার হাসনাতের জন্য যেমন এমন বিষয়টি প্রমানের চ্যালেঞ্জ ছিলো, ঠিক একইভাবে এমপি খোকার জন্যও চ্যালেঞ্জ ছিলো।

প্রার্থী ইকবাল ও মাসুম হলেও তাদের আদতে এখানে তুমুল লড়াইটা হয়েছে মুলত এমপি খোকা ও কায়সার হাসনাতের রাজনৈতিক অবস্থান। সবশেষে এখানে জনপ্রতিনিধিরাও আস্থা রাখলো জাতীয় পার্টির এমপি খোকার উপর। এমপি খোকার সমর্থিত প্রার্থী ইকবাল হয়েছেন বিজয়ী। যদিও সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৭টিতে রয়েছেন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বাকি দুটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হলেও তারা আওয়ামীলীগার। বাকি একটি ইউনিয়নে মাত্র একজন চেয়ারম্যান।

সূত্রে, ১৭ অক্টোবর সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩নং ওয়ার্ডে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধার সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল। পরাজিত প্রার্থী মাসুম হলেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। মাসুম উপজেলা আওয়ামীলীগের বিগত কমিটির সদস্য। তিনি জেলা পরিষদেরও সাবেক সদস্য।

সোমবার সকাল থেকে সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে এই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে মোট ভোটার ছিলেন ১৩২ জন জনপ্রতিনিধি। নির্বাচনে তালা প্রতীকে আবু নাঈম ইকবাল পেয়েছেন ৮৩ ভোট ও তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হাতি প্রতীকে মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম পেয়েছেন ৪৯ ভোট। ৩৪ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ইকবাল।

আবু নাঈম ইকবাল নির্বাচিত হয়ে ছুটে যান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার কাছে। এমপির কাছে গিয়ে তিনি সালাম করেন এবং এমপির গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে দেন। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বাদ্যবাজনা বাজিয়ে উল্লাস করেন এবং নেতাকর্মীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এ সময় এমপি খোকার সহধর্মিনী ও সোনারগাঁও উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ডালিয়া লিয়াকত, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ এবং সোনারগাঁও ‍উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী উপস্থিত ছিলেন।

বিজয়ের পর এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, সোনারগাঁয়ের এমপি হিসেবে আমার দীর্ঘ ৯ বছরে সোনারগাঁবাসীর কল্যাণের জন্য জনপ্রতিনিধি ঐক্য ফোরাম করে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সাথে নিয়ে উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আজকের বিজয় ভালোবাসার বিজয়, আজকের বিজয় সব অপকর্মের বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়। আমি ধন্যবাদ জানাই আমার সকল জনপ্রতিনিধিদের, কারন সঠিক মুল্যায়ন করেছেন। আগামী দিনেও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করে যাবো।