লাঙ্গলবন্দে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূণ্য কামনায় অষ্টমী স্নানোৎসব

আবদুল্লাহ আল মামুন, বিশেষ প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরের লাঙ্গলবন্দে ব্রক্ষপুত্র নদীর তীরে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই দিনব্যাপী শুরু হয়েছে স্নানোৎসব। ১২ এপ্রিল শুক্রবার সকাল পৌনে ১২টা থেকে এই উৎসব শুরু হয়। তিথি অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ১১টা ৪৮ মিনিট থেকে শুরু হওয়া এই স্নানোৎসব শেষ হবে শনিবার সকাল ৮টা ৫৮মিনিটে। শেষ হবে অষ্টমী স্নানোৎসব।

এ বছর ব্রক্ষপুত্র নদীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূণ্যার্থীদের ঢল নামে। ১৮টি স্নানঘাটে দল বেধে, স্বপরিবারে, আবার কেউ কেউ এককভাবে ধর্মীয় রীতি মেনে স্নানে অংশ নিয়েছেন তারা। তীর্থকেন্দ্র ও স্নানঘাটগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভীড়। বিশেষ করে রাজঘাট ও গান্ধীঘাটে স্নানার্থীদের সমাগম ছিল চোখের পড়ার মত।

জগতের যাবতীয় সংকীর্ণতা ও পঙ্কিলতার আবরণে ঘেরা জীবন থেকে পাপ মুক্তির বাসনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দে আসেন। ‘হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, ‘হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’ এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় লাখ লাখ পূণ্যার্থী আদি ব্রহ্মপুত্র নদীতে স্নানে অংশ নেন। এ সময় স্নানমন্ত্র পাঠ করে নিজ নিজ বাসনা অনুযায়ী ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে তর্পণ করেন পূণ্যার্থীরা।

লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের নেতা শিখন সরকার শিপন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রচুর স্নানার্থী এসেছেন, তাতে কিছুটা দুর্ভোগ মেনে নিতেই হবে। ভীড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এবার ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল থেকেও প্রচুর পূণ্যার্থী লাঙ্গলবন্দ স্নানে অংশ নিয়েছেন।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারী বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে চলছে স্নানোৎসব। বন্দর থানা পুলিশের ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, অষ্টমী স্নানকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের দেড় সহস্রাধিক সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওায়ার ও নিরাপত্তা চেকপোস্ট। সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে তীর্থস্থানের ৩কিলোমিটার এলাকা। ২টি অস্থায়ী হাসপাতালসহ বেশ কটি মেডিক্যাল টিম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত আছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম, ১নং ঢাকেশ্বরী টিন লাইন ও বনগুন মিলন সংঘ, নিপসম, সেবা সংঘ, হিন্দু কল্যাণ পরিষদসহ অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দর্শনাথীদের খাবার সরবরাহ ও অন্যান্য সেবা প্রদান করেছেন। অষ্টমী স্নান উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দে দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ ফুটে উঠেছে।

বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। সরোজ কুমার সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ও বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এমএ রশিদ প্রমুখ।