বিজয়ী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান কথাবার্তায় বেসামাল!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ২৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বাতেনকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান সামসুল আলম। তিনি ওই সময় জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সোনারগাঁও উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ছিলেন। নির্বাচনে এখানে চশমা প্রতীকের প্রার্থী সামসুল আলমের প্রতি জাতীয় পার্টির সমর্থন ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই জাতীয়পার্টি থেকে পল্টি দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন তিনি। আওয়ামীলীগে যোগদান করেই সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন।

একই সঙ্গে আওয়ামীলীগ নেতাদের সমালোচনা করেছেন। তার এসব কর্মকান্ডে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ব্যাপক সমালোচনার পাত্র এখন সামসুল আলম। যেভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি, ঠিক সেভাবে জয়ী হয়েই হুট করে দল পাল্টে আওয়ামীলীগে যোগদান এবং আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতাদের নিয়ে সমালোচনা করেছেন তিনি। সম্প্রতি আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের একটি অনুষ্ঠানে নানা ধরণের কথাবার্তা বলেছেন সামসুল আলম। যে কারনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা বলছেন- সামসুল আলম স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে কথাবার্তায় বেসামাল হয়ে ওঠেছেন। তিনি কখন কাকে কি বলছেন সেটা ঠিক রাখতে পারছেন না। বিজয়ের পর তার কথাবার্তায় ব্যাপক অসংগতি দেখা যাচ্ছে।

৪ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে সোনারগাঁ উপজেলা অডিটোরিয়ামে উপজেলা ৮টি ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের সংবর্ধনা দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া। সেখানে দাওয়াত করা হয় নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নবনির্বাচিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান সামসুল আলমকে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সামসুল ইসলাম ভুইয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী সামসুল আলমের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করান। অথচ নোয়াগাঁও ইউনিয়ন যেটা সামসুল ইসলাম ভুইয়ার নির্বাচনী কেন্দ্র সেখানে নৌকার প্রার্থী চতুর্থ হোন। যা নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠে। এছাড়া নৌকার পরাজিত প্রার্থী আব্দুর বাতেন এক ভিডিও বার্তায় তার পরাজয়ের পেছনে এডভোকেট সামসুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হওয়ার দুদিনের মাথায় নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সামসুল আলমকে আওয়ামীলীগে যোগদানের বিষয়টি নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন আওয়ামীলীগ নেতারা।

অন্যদিকে স্থানীয় একটি অনলাইন ‘নিউজ সোনারগাঁও’ এ পরদিন রবিবার বিকেলে সামসুল আলমের যোগদানের বিষয় নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, সামসুল আলম একজন পল্টিবাজ ও সুবিধাবাদি নেতা। তিনি এক সময় বিএনপি করেছেন, এখন জাতীয়পার্টি করছেন। আবার বলছেন তিনি নাকি ঢাকায় আওয়ামীলীগ করেন। একজন লোক যেখানে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টি সমানতালে করেন তখন তিনি কোণ দলের নেতা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এছাড়া সামসুল আলমকে ডেকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সকল সদস্যকে বাদ দিয়ে একজন নেতা কিভাবে একজন জাতীয়পার্টির লোককে আওয়ামীলীগে যোগদান করান? এটা আমার বোধগম্য নয়। আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে দলের যোগদান করানোর আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু ছবিতে দেখলাম উপজেলা আওয়ামীলীগের সকল নেতাকে বাদ দিয়ে একজন নেতা একজন জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যানকে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগার বানিয়ে দিলেন। দিনের বেলা যেই নেতা আওয়ামীলীগের যোগদান করলেন সেই নেতাই রাতের বেলা পার্শ্ববতী একটি উপজেলায় গিয়ে আওয়ামীলীগের বদনাম করছেন ফেসবুক লাইফে এসে। এটা কেমন আওয়ামীলীগার? আর কেমন আওয়ামীলীগ নেতা? যিনি দিনে বলেন এক কথা আর রাতে বলেন আরেক কথা। শুধু আওয়ামীলীগই নন তিনি বর্তমান মহাজোটের এমপিকেও অপমান করেছেন। যার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করে সুবিধা নিয়েছেন এখন জাতীয়পার্টির এমপিও নাকি খারাপ, তিনি নাকি কোন উন্নয়নই করেননি করেছেন চাপাবাজি। সামসু সেখানে বলেছেন, খোকা কি উন্নয়ন করবে আওয়ামীলীগ ২০ বছর ক্ষমতায় থাকবে আর খোকা থাকবে ২ বছর, তাহলে খোকার সাথে থেকে তার লাভ কি? এছাড়া তিনি এক উপজেলার চেয়ারম্যান হয়ে আরেক উপজেলায় গিয়ে বলেন তার বাড়ি নাকি সেখানে তিনি নানার বাড়ি থেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার কথায় তিনিই বলেছেন তিনি এ এলাকার নন, তিনি তার বাবার ঘর জামাইয়ের সূত্র্র ধরে এখানকার নাগরিক। সেজন্য তিনি সোনারগাঁ আর আড়াইহাজার উপজেলাকে এক উপজেলা করার দাবি জানান। যা উপজেলার প্রতিটি নাগরিকের জন্য অপমানজনক। আড়াইহাজার উপজেলায় উন্নয়ন হয়েছে এটা হতে পারে কিন্তু সেজন্য তিনি উপজেলা সকল নেতাকে চাপাবাজ বলেছেন যা প্রতিটি রাজনীতিবিদদের জন্য অপমান জনক।

মাহফুজুর রহমান কালাম আরো বলেন, দল একটাই থাকে। দলে কিন্তু নেতা থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ কিন্তু তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। সদ্য অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে সেটা প্রমাণ হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের মনের অমিল থাকতে পারে কিন্তু দলের স্বার্থে তারা অভিন্ন। সে জন্য আমি বলবো সামসুল আলম আওয়ামীলীগের কেউ না। সে যদি আওয়ামীলীগে যোগদান করতে চান তাহলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রের অনুমোদনের পর উপজেলার সকল নেতাদের উপস্থিতিতে যোগদান করলে সেটা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধ হবে।