নৌকার প্রার্থী ‘সামসু ভাই’ একদিকে উল্লাস অন্যদিকে শোকের মাতম!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গত ৩এপ্রিল কেন্দ্রীয় হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির পর ৭টি মামলায় সেখানকার রাজনীতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।  বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠেছিলো আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলয়টি।  দীর্ঘ কয়েক মাস বলা যায় সোনারগাঁয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিলো এই বলয়ের হাতে।  কিন্তু এ বলয়ের নেতা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া মনোনিত হওয়ায় আবারো ইউটার্ণ দিয়েছে সোনারগাঁয়ের রাজনীতি।

এরি মাঝে গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনকে কেন্দ্র করে ব্যানার ফ্যাস্টুন প্যান্ডেল ভাংচুরের ঘটনায় অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ এসেছে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মাঝে।  কায়সার হাসনাত বলয়কে টক্কর দিয়ে রাজনীতিতে লড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু।  তার বিরুদ্ধে ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করার অভিযোগ তোলা হয়।  একইভাবে তার পিতা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয়।  বিরু সর্বশেষ বিষয়গুলোর প্রমাণ না দিতে পারলে মামলা করারও হুমকি দেন কায়সার পন্থীদের বিরুদ্ধে।  নির্বাচনী আমেজে শান্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ।  চলে আসে উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনী লড়াই।  ৭ অক্টোবর ভোট গ্রহণের দিন ধার্য্য করে নির্বাচন কমিশন।

নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবু, প্রয়াত মোশারফ হোসেনের ভাই মনির হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার, জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম।

১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান ও আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে নৌকা প্রতীকে মনোনিত করেন।  মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার সময় আবু জাফর চৌধুরী বিরুও উপস্থিত ছিলেন।  একইভাবে বিরু অনুগামী নৌকা প্রত্যাশি আলী হায়দারও সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন বেশ হাস্যোজ্জল পরিবেশে।

মনোনয়নপত্র সংগ্র্রহের সময় আবু জাফর চৌধুরী বিরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা দীপক কুমার মনিক, আলী হায়দার, নেকবর হোসেন নাহিদ, জাকির হোসাইন, মাসুদ রানা মানিক সহ বিরু অনুগামীরা উপস্থিত ছিলেন।  তাদের পছন্দের প্রার্থী আলী হায়দার নৌকা না পেলেও সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া মনোনিত হওয়ায় মনে হচ্ছে তিনি ও তারা একটু বেশিই খুশি। 

এরি মাঝে বিরুর জন্মদিনে সোনারগাঁয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছাস প্রকাশ দেখা যাচ্ছে বেশ জোরেসোরে।  সামসুল ইসলাম নৌকা প্রতীক পাওয়ায় ১২ সেপ্টেম্বর রবিবার সোনারগাঁও পৌরসভা ও উপজেলার বেশকটি এলাকায় বিরু মিষ্টি বিতরণ করেছেন।  পৌরসভার সামনে আনন্দ মিছিলও করেছেন তিনি।  কাঁচপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহাবুব খানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল করা হয়।  বিকেলে সোনারগাঁও পৌরসভায় মেয়র সাদেকুর রহমানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে দোয়া মাহফিল করা হয়।  বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লাও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে দোয়া মাহফিল করেছেন।

অন্যান্য নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বার্তায় ভরে ফেলছেন।  চেয়ারম্যান প্র্রার্থী হাজী সোহাগ রনি রাতের বেলা সামসুল ইসলামকে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে গেছেন তার বাসায়।  কিন্তু আওয়ামীলীগের বিশাল একটি পক্ষ নীরবতা পালন করছেন।  কেন্দ্রীয় কঠোর নির্দেশনার কারনে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারছেন না কেউই।  কারন বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই আওয়ামীলীগের রাজনীতি থেকে বাজবে বিদায় ঘন্টা।  ফলে সামসুল ইসলামকে মেনে নিতে হচ্ছে।

এসব কারনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, বিরু এসব কর্মকান্ড করে আওয়ামীলীগের একটি পক্ষের কাটা ঘায়ে লবনের ছিটানোর চেষ্টা করছেন।  কারন তার শোক দিবসের প্যান্ডেল ভাংচুর করা হয়েছিল। 

সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে নেতাকর্মীরা সম্মান করেই ‘সামসু ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করেন।  ‘সামসু ভাই’ নৌকা প্রতীক পাওয়ায় একদিকে উচ্ছাস উল্লাস চলছে অন্যদিকের রাজনীতিতে শোকের মাতম।  বিরু এমন একটা ভাব নিচ্ছেন যেনো তিনি নিজেই নৌকা প্রতীকটি এনে দিয়েছেন।  বিরু অনুগামী নেতাকর্মীরাও সোনারগাঁয়ে এমনটা প্রচার করছেন যে, বিরুই সামসুল ইসলামকে নৌকা প্রতীক এনে দিয়েছেন।  এমন প্রচারের পর বিরু নিজেই ১২ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করেছেন এসব ষড়যন্ত্রকারীরা প্রচার করছেন, প্রধানমন্ত্রী গভীর পর্যবেক্ষণ করে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন।’ বিরু এসব বলে এবং তার অনুগামীদের দিয়ে প্রচার করে বিরু ক্রেডিট নেয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জেলা পর্যায়ের বেশকটি সূত্রে জানাগেছে, নৌকা প্রতীকে এনে দেয়ার মত রাজনীতিক নেতা বিরু এখনও হয়ে ওঠেননি।  মুলত জেলার দু’জন প্রভাবশালী এমপি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার অতীত রাজনীতি, দীর্ঘ ৫৭ বছরের রাজনৈতিক জীবন ও দলের প্রতি ত্যাগ অবদান তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।  যে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যায় এবং সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া মনোনিত হন।  মনোনিত হওয়ার তিন দিন পূর্বে জেলার একজন প্রভাবশালী এমপির কাছে আলী হায়দারের জন্য সুপারিশ করতে আসেন বিরু।  বিরুকে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।  সেই বিষয়টি সেদিনই বিরু তার নেতাকর্মীদের অবহিত করেন এবং সামসুল ইসলাম দেশে ফিরে আসবেন বিষয়টি নেতাকর্মীদের তিনি জানান।  তখন নেতাকর্মীরাও সামসুল ইসলাম দেশে আসছেন সেটা প্রচার করতে গিয়ে এমন একটা ভাব নেয় যেনো হুট করে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াই তাদের পছন্দের প্রার্থী হয়ে গেল! যে কারনে নেতাকর্মীরা ধরে নিচ্ছেন সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার নৌকা প্রতীক পাওয়ার পেছনে বিরুর হাত রয়েছে।  বিরুর আচরণও এমনটা প্রকাশ পাচ্ছে যে, তিনি ভুমিকা রেখেছেন এই প্রার্থী মনোনিত করার পেছনে।  কার্যত সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার নৌকা প্রতীক পাওয়ার পিছনে বিরুর কোনো ভুমিকা নাই।