‘তারেক জিয়ার টাকায় সোনারগাঁয়ে বঙ্গবন্ধুর শোক দিবসের প্যান্ডেল ভাংচুুর!’

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার সামনে পাশাপাশি দুটি স্পটে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলো আওয়ামীলীগের দুটি বলয়ের নেতাকর্মীরা।  যেখানে একটির আয়োজনে ছিলো আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের নেতৃত্বে উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামীলীগ, অপরটির আয়োজনে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু।  কিন্তু ১৪ আগস্ট ও ১৫ আগস্ট দুই দফায় বিরুর আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল ভাংচুুর করা হয়।

ভাংচুরের ঘটনায় ডা. বিরু সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতকে দায়ী করেছেন।  এবার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার টাকা পেয়ে বঙ্গবন্ধুর শোক দিবসের প্যান্ডেল ভাংচুর করা হয়েছে।  শহীদ বাদলের এমন বক্তব্যের পর সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে।  যদিও উপজেলা আওয়ামীলীগের এক অনুষ্ঠানে কায়সার হাসনাত বলেছেন, বিরু নিজেই তার লোকজন দিয়ে প্যান্ডেল ভাঙ্গিয়ে আওয়ামীলীগে বিভক্তি আছে সেটা প্রমাণ করতে চায়।’

মুল ঘটনা সূত্রে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু শিক্ষাজীবনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে জামায়েত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করতো বলে অভিযোগ তুলেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম।  তার এমন বক্তব্যে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে চলছে তোলপাড়।

এমন পরিস্থিতিতে ডা. বিরুর পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের রীতিমত শাসিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল।  গত ২০ আগস্ট উপজেলার জামপুর ইউনিয়নে ডা. বিরুর পক্ষের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে কঠোর ভাষায় বক্তব্য ছেড়েছেন তিনি।

ওইদিন শহীদ বাদল তার কঠোর ভাষায় মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। স্টপ ইউর মাউথ।’ একই সঙ্গে শহীদ বাদল তার বক্তব্যে ডা. বিরুকে সাচ্চা আওয়ামীলীগার বানানোর চেষ্টাও করেছেন।  বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে যে কায়সার-কালামরা রাজপথে রক্ত ঝড়িয়েছিল, যে কায়সার হাসনাতের শরীরের রক্তে সাদা পাঞ্জাবী রক্তে লাল হয়ে ওঠার দৃশ্য আজো সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের চোখে ভেসে ওঠে, অথচ সেই কায়সার-কালামদের বিপক্ষে গিয়ে এই সরকারের আমলে রাজনীতিতে উত্থান বিরুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন শহীদ বাদলের মত একজন রাজপথের নেতা! যা নিয়ে সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে সোনারগাঁও পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে আওয়ামীলীগের একটি দোয়া মাহফিল কর্মসূচির প্যান্ডেল তৈরি করা হয়।  তার মাত্র কয়েক গজ সামনেই আবু জাফর চৌধুরী বিরুর একটি অনুুষ্ঠানের কাউন্টার প্যান্ডেল তৈরি করা হয়।  ১৪ আগস্ট বিকেলে ওই প্যান্ডেল ভাংচুর করা হয়।  একইভাবে আবারো অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে পরদিন আবারো ভাংচুর করা হয়।  এ ঘটনার জন্য বিরু আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে দায়ী করেন।

এই ঘটনার পর গত ১৬ আগস্ট সাদিপুুর ইউনিয়নের একটি জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবু জাফর চৌধুরী বিরু এক সময় জামায়েত ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতো বলে অভিযোগ তুলেছেন মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। একই সঙ্গে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর পিতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।  এও বলেছেন, বিরুর এক ভাই বিএনপির যুবদলের পদধারী একজন নেতা।  এ ছাড়াও আরো নানা অভিযোগ তুলেন তিনি।

তবে মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের এমন অভিযোগের বিষয়ে ডা. বিরু এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি।  তার বক্তব্য সত্য কিংবা মিথ্যা এমন কোনোটাই দাবি করেননি বিরু।  তবে তার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল।

২০ আগস্ট জামপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের এক দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি শহীদ বাদল বলেছেন, সোনারগাঁও পৌরসভার একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভাংচুর করা হয়েছে।  বিষয়টি ডা. বিরু আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।  নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে।  সেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কেউ যদি উদ্ধ্যত্ত হাত ওঠাতে চায়, সেই হাত জনগণ প্রতিহত করবে।  ওরা বাংলার মাটিতে থাকতে পারেনা।  ওরা স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, ওরা ৭৫ এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তাই ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর প্যান্ডেল ভাংচুুর করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যেই মাটিতে হাসনাত ভাইয়ের জন্ম, যে মাটিতে বিরুর মা মনোয়ারা চৌধুরীর জন্ম, যেই বিরুকে নিয়ে গর্ব করি, কায়সারকে নিয়ে গর্ব করি, এই দুই বীর সন্তান ওদেরকে খুজে বের করবে যারা ভাংচুর করেছে।  যদি না পারেন তাহলে আমরা খুজে বের করবো।  টাকা খাইছেন? কত টাকা খাইছেন? লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার টাকা পাইয়া আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হইয়া শক্তি বেড়ে গেছে? বঙ্গবন্ধুর শোক দিবসের প্যান্ডেল ভাঙ্গছেন? হাত পুইড়া ফেলাবো, হাত খুইলা নিয়ে আসবে জনগণ।  ঘাত প্রতিঘাত হবে, বড় বড় কথা সাবধানে বলুন।  স্টপ ইউর মাউথ, খুব সাবধান।  আমি ধর্য্য ধরলাম।  যত বড় মুখ না তত বড় কথা।  ময়মনসিংহ কলেজে তার লেখাপড়ার সময়ের বীরু ভাই সম্পর্কে মির্জা আজম ভাইয়ের কাছে বলা হয়েছিল।  সভাপতি হাই, সামসুল ইসলাম ভাই আমাদের সামনে ময়মনসিংহের মোয়াজ্জেম ভাইয়ের কাছে বিরু ভাই সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল।  মোয়াজ্জেম ভাই বলেছেন, যে কর্মী আমার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর রণাঙ্গনের সৈনিক তাকে নিয়ে কথা বলা হলে আমি সহ্য করবো না।’

এদিকে মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের বক্তব্যের বরাদ দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ডা. বিরু ছাত্রশিবির করতো, যদি সত্যি হয় তাহলে সে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলো কিভাবে?

১৮ আগস্ট বুধবার মহানগরীর বাবুরাইলে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেছেন জিএম আরাফাত। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

তবে জিএম আরাফাতের দেয়া ওই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি কাউকে খুঁশি করতে কিংবা কারো বিরুদ্ধে কথাটা বলিনি এবং আমি জেলা পরিষদের সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তফিজুর রহমান মাসুমের বক্তব্যের বরাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছি তিনি যদি শিবির করে থাকেন তাহলে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক হলেন কিভাবে? এটা আমার নিজস্ব কোনো বক্তব্য নয়।

জিএম আরাফাত বলেন, আরো একটি বিষয় হলো অনেকেই দীর্ঘদিন রাজপথে ঘাম ঝড়িয়ে, বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে হামলা মামলা নির্যাতন, দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকারের পরেও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হতে পারেনা।  কিন্তু এই সরকারের আমলে হুট করে রাজনীতিতে এসেই অনেকেই কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কেউ আগে সরকারি চাকুরী করতো, দুর্নীতি মামলায় জেল খেটেছে, এমন সব ব্যক্তিরা জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদ পায় কিভাবে? এই বিষয়টি কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি। কারন এসব চলতে থাকলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের কি হবে?

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ১৬ আগস্ট সাদিপুর ইউনিয়নের এক অনুষ্ঠানে মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ডাক্তার বিরুর আমলনামা হচ্ছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার আবু জাফর চৌধুরী।  উনি ছাত্র জীবনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে লেখাপড়ার সময় ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতো।  তার পিতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেন, তিনি সোনারগাঁয়ের রাজাকার এসএম সোলায়মানের সহযোগী ছিলেন।  বিরুর আরেক ভাই লিটন চৌধুরী জামপুর ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি।

ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।