ভোটের হিসেব নয়, কোন প্রার্থী ক্ষমতাধর সেই আলোচনায় সরগরম চায়ের দোকান

আবদুল্লাহ আল মামুন, বিশেষ প্রতিবেদক:

একটা সময় নির্বাচন আসলে এলাকার অলিগলির চায়ের দোকানগুলোতে প্রার্থীর ভোটের হিসেব নিয়ে চলতো সরগরম আলোচনা। তবে এখন আর প্রার্থীদের ভোটের হিসেব নিয়ে আলোচনা হয়না। এখন হয় কোন প্রার্থী বেশি ক্ষমতাধর শক্তিধর যিনি কেন্দ্র দখল করে ভোট বাক্স ভরে জয়ী হতে পারবেন। কোন প্রার্থীর পক্ষে থানার ওসি, কার পক্ষে এসপি কিংবা কোন প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় এমপি- এসব আলোচনায়ই এখন চায়ের দোকানগুলোতে সরগরম অবস্থা। কার জনপ্রিয়তা বেশি, কে ভাল কিংবা কে মন্ধ সেই হিসেবে আর এখন ভোটারদের আলোচনার মাঝে ওঠে আসেনা। যদিও ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেছেন, ‘প্রিভিয়াস কোন নির্বাচনের মত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে না।’

নারায়ণগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ মার্চ। ইতিমধ্যে ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার এই নির্বাচনে ২৬ জন প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে যারা ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন যার যার প্রতীক নিয়ে। যার মধ্যে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় দুই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচি হয়েছেন। সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে আওয়ামীলীগের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীও নাই। নির্বাচনে নাই দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি। এখানে এই নির্বাচনটি শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের নির্বাচন। ফলে নির্বাচনটিই আমেজহীন।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শোচনীয় হারের পরপরই সামনে চলে আসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও উপজেলা নির্বাচনে নাই নারায়ণগিঞ্জ বিএনপি। বিএনপি না থাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। অনেকটা আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামীলীগের নৌকার লড়াই। বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় নারায়ণগঞ্জের সবগুলো উপজেলা পরিষদই নির্বাচন হয়ে পড়েছে আমেজহীন। তেমন একটা উৎসব দেখা যাচ্ছেনা। ভোটারদের মাঝেও নেই তেমন একটা সাড়া। জনগণের মাঝে ঠুকে গেছে নির্বাচনে জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয়না। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গেলেও তা নিয়েও ভোটারদের মাঝে আগ্রহ দেখা যাচ্ছেনা।

অতীত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, নির্বাচন এলেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। মিছিল-মিটিং আর মাইকের আওয়াজে সরগরম হয়ে ওঠে এলাকা। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আওয়াজ তুলে নিজের পছন্দের প্রার্থীর গুণগান। এখন চায়ের দোকানে ভোটের হিসেবে নিয়ে হয়না। এখন আলোচনা হয় শক্তিশালী কার বেশি। কে কেন্দ্র দখল করে বাক্স ভরতে পারবেন। এবার নারায়ণগঞ্জের তিনটি উপজেলাই শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদল আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। যদিও রূপগঞ্জে এনপিপির একজন প্রার্থী থাকলেও তা নিয়ে জনগণের কোন আগ্রহ নেই।

অন্যদিকে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বলছেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে না থাকায় আড়াইহাজারে নির্বাচনী আমেজ নেই বলেই চলে। বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভোটের মাঠের উত্তাপ নেই। বিএনপির আরেক সমর্থক বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। আর উপজেলা নির্বাচনে তো বিএনপি অংশগ্রহণই করছে না। আগামী ৩১ তারিখ ভোট দিতে যাবনা।