বিরোধীতা করেও শামীম ওসমানের আসনে পলাশের দাপট!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠিত। এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি হিসেবে রয়েছেন একেএম শামীম ওসমান। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা করে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহাম্মেদ পলাশ। পলাশ সুযোগ পেলেই এমপি শামীম ওসমান ও তার লোকজনকে ইঙ্গিত করে কঠোর হুশিয়ারিও দেন। এ আসনে দিনকে দিন কাউসার আহাম্মেদ পলাশের দাপট ও খবরদারি বেড়েই চলেছে। মাঝে সাজে তিনি হুংকারও দেন।

জানাগেছে, গত ১২ অক্টোবর ফতুল্লার পাগলায় জাতীয় শ্রমিকলীগের ফতুল্লা আঞ্চলিক শাখার সমাবেশে কঠোর বক্তব্য রেখেছেন কাউসার আহাম্মেদ পলাশ। তিনি বলেছেন, আমরা বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে রাজপথে ছিলাম। হামলা মামলার শিকার হয়েছি। এখন হাইব্রীড কাউয়া আওয়ামীলীগার পরিচয় দিয়ে এমপির লোক পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করে দলের নেত্রীর বদনাম করছে। কে এমপির লোক নাকি বড় কোন নেতার লোক সেটা দেখা হবে না, যদি দলের বদনাম হয়, দলের নেত্রীর বদনাম হয় তাহলে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা বসে আঙ্গুল চুসবো না। দাত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।

মুলত নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও এমপি শামীম ওসমানের মাঝে দ্বন্ধ রয়েছে। কাউসার আহাম্মেদ পলাশ বর্তমানে মেয়র আইভীর বলয়েই রাজনীতি করছেন। যে কারনে মেয়র আইভীর প্রশংসার পাশাপাশি কোন কোন সভা সমাবেশে কাউসার আহাম্মেদ পলাশ এমপি শামীম ওসমান ও তার লোকজনকে আকার ইঙ্গিতে হুংকারও দেন।

শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় কাউসার আহাম্মেদ পলাশ কয়েক টার্ম ধরেই জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে এ আসনে কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ বষে আনতে পারেননি। গত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেও তিনি প্রত্যাহার করে নেন। সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে অনেকেই জানিয়েছেন ফতুল্লার শ্রমিক সংক্রান্ত সেক্টরগুলোর অনেক সেক্টরেই কাউসার আহাম্মেদ পলাশের খবরদারি ও দাপট লক্ষ্য করা যায়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ফতুল্লা এলাকা নিয়ে আসনের এমপি হোন চলচিত্র নায়িকা সারাহ বেগম কবরী। প্রাথমিকভাবে পলাশের সঙ্গে কবরীর ভাল সম্পর্ক দেখা গেলেও ক্ষমতার শেষের দিকে তুমুল বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পলাশের দাড়ি টুপি নিয়েও পলাশকে ইঙ্গিত করে একটি অনুষ্ঠানে কটুক্তি করেছিলেন সারাহ বেগম কবরী। এর জবাবে ওই সময় পলাশও একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, যিনি রমজান মাসে প্রকাশ্যে মিটিংয়ে পানি পান করতে পারেন তার মুখে এসব কথা সোভা পায়। এ ছাড়াও কবরীর পিএস সেন্টুর সঙ্গে পলাশের লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে অনেকেই জানান মুলত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি দলীয় এমপিদের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় পলাশের বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি। একইভাবে শামীম ওসমানের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন পলাশ।

গত জাতীয় নির্বাচনের কিছুদিন পর বেশ আলোচনায় চলে আসেন কাউসার আহাম্মেদ পলাশ। ওই নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পলাশের বাসায় ওঠেন। ওই ছবি মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লে পলাশের লোকজন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। পাশাপাশি পলাশ বিরোধীরাও আতংকে ওঠেন। কেউ কেউ ধরে নিয়েছিলেন পলাশের হাতেই কি তাহলে ওঠতে যাচ্ছে নৌকা প্রতীক? যদিও শেষতক এ আসনে মনোনয়ন পান এমপি শামীম ওসমানই। সেই থেকে স্রোতের বিপরীতেই ফতুল্লায় দাপট নিয়ে রাজনীতি করছেন কাউসার আহাম্মেদ পলাশ। ১৮ অক্টোবর তিনি জাতীয় শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদিনিই ফতুল্লার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে জানাচ্ছেন।