নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলে হটাত ছন্দপতন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে রাজপথে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা ছিল যুবদলের। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে জেলা যুবদলের সভাপতি পদে ছিলেন অধ্যাপক মামুন মাহামুদ, সেক্রেটারি আশরাফুল হক রিপন ও মহানগর যুবদলের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম, সেক্রেটারি ছিলেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। জেলা যুবদল রাজপথে সেই ধারাবাহিকতা ধরে না রাখতে পারলেও মহানগর যুবদলের সক্রিয় ভুমিকা রাজপথে সবচেয়ে বেশি ছিল।

বিএনপি নেতাকর্মীদের মত- অধ্যাপক মামুন মাহামুদের হাত থেকে জেলা যুবদলের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেয়ার পর জেলা যুবদলের রাজপথে সক্রিয় জোরালো ভুমিকা সে রকম দেখাতে পারেনি পরবর্তী দুটি কমিটির নেতারা। বর্তমান জেলা কমিটির নেতারা সর্বত্র অনুগত নেতাদের জন্মদিনে পালনে যতটা ব্যস্ত দেখা যায় ততটা রাজপথে নাই। কিন্তু প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলমের পর মহানগর যুবদলের হাল ধরেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তারপর থেকে মহানগর যুবদলের ভুমিকা অন্যান্য সংগঠনগুলোর চেয়ে সবচেয়ে বেশি।

সমীক্ষ বলছে- ২০১৪ সালের আগে ও পরের সকল আন্দোলনে রাজপথে জোরালো ভুমিকা ছিল মহানগর যুবদলের। হামলা ও মামলার শিকারও হয়েছে সবচেয়ে বেশি মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা। নির্যাতনের খড়গ বর্তমান সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদেরও পোহাতে হয়েছে। বর্তমান প্রায় প্রতিদিন আদালতে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের হাজিরা দিতেও হচ্ছে। বর্তমান পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পূর্বে আহ্বায়ক কমিটিও সেই ধারাবাহিকতায় ছিল।

কিন্তু হটাত করে সক্রিয় সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের বিরোধের কারনে ছন্দপতন দেখা ঘটলো। এরজন্য শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগ নেতা দায়ী করছেন সভাপতি খোরশেদকেই। কারন সংগঠনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্বটি তার। তার অহমিকা ধাম্ভিকতার কারনে মহানগর যুবদলের বিরোধ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। নেতাদের দাবি তিনি শুনতেই চাননা। এমনকি তার ভুল কর্মকান্ডের সমালোচনাও তিনি শুনতে নারাজ। নেতাদের নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতেও তিনি অনাগ্রহী। যার ফলে তার বিরোধী পক্ষ জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধীতা করছেন।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটিতে আহ্বায়ক হোন আগের কমিটির সেক্রেটারি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এই কমিটির বিরোধীতা করে টানা দুই সপ্তাহ বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন যুবদল নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি, সরকার আলম, মাসুদ রানা, জয়নাল আবেদীন সহ যুবদলের একটি অংশ। ওই সময় বর্তমান মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন খোরশেদের পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের দমিয়েছিলেন। পরবর্তীতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলমের মধ্যস্ততায় বিষয়টির মীমাংসা হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপর নানা আপত্তি তুলেন মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, সহ-সভাপতি আহাম্মদ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হোসেন সহ একটি পক্ষ। বন্দরের একটি অনুষ্ঠান থেকে কমিটির বিষয়ে অসঙ্গতির সমাধানের জন্য সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন তারা। কিন্তু বিষয়টির মীমাংসা করেননি খোরশেদ। তাদের মীমাংসার আহ্বানকে তিনি গুরুত্ব দেননি। যে কারনে একটি পক্ষ তার বিপক্ষে গিয়ে মহানগর যুবদলের রাজনীতি করে আসছিল ধীরে ধীরে। যে কারনে বিরোধ আরাও ধানা বেধেছিল যা সম্প্রতি সেই বিরোধ মাথা চারা দিয়ে ওঠেছে।

এদিকে জানাগেছে, মহানগর যুবদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের বিষয়ে মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের সঙ্গে কেন্দ্রীয় যুবদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক থেকে জমা দেয়া কমিটির খসড়াগুলো ফেরত দেয়া হয়। সেই সঙ্গে নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে যুবদল নেতাদের তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণের জন্য ফরম তুলে দেয়া হয়। ওই বৈঠকে মহানগর যুবদলের শীর্ষ তিন নেতা খোরশেদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন। সেখানে তারা জানান, করোনাকালে খোরশেদ যুবদলের ব্যানারে কোন কর্মসূচি পালন করেননি। তিনি টিম খোরশেদ নাম দিয়ে ব্যক্তি প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের নামও মুখে নেননি। অথচ সরকার দলের এক এমপির বক্তব্যকে খেতাব হিসেবে নিয়ে নাচানাচি করেছেন তিনি। দলীয় আদর্শ নীতি নৈতিকতা ভুলে সেই এমপিকে আবার ধন্যবাদও দিয়েছেন খোরশেদ। তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন। জাতীয় মিডিয়াতে খবরও বের হয় খোরশেদ এমপি সেলিম ওসমানের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়েছেন। যদিও ফেরত দিয়েছেন বলে মিডিয়াতে বক্তব্য দেন খোরশেদ। কিন্তু সেলিম ওসমানের কাছ থেকে পরবর্তীতে খাদ্য সামগ্রী গ্রহণ করেছেন তিনি। এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে একটি অনুষ্ঠানেও ছিলেন খোরশেদ। এসব অভিযোগ ছাড়াও বিশাল অভিযোগ তোলা হয় তার বিরুদ্ধে।

ওই ফরম গত ১৫ সেপ্টেম্বর সভাপতি খোরশেদের বাসায় বিতরণ করা হয়। যেখানে সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান উপস্থিত ছিলেন না। ওইদিন মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জরুল আলম মুছাকে খোরশেদের বাড়িতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন খোরশেদ অনুগামীরা। পরবর্তীতে ১৭ সেপ্টেম্বর উপরোক্ত তিন নেতা সহ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানা, আহাম্মদ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল আলম মুছা, ফিরোজ হোসেন মিলে বন্দরে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেন।

এই ঘটনার পর ১৮ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ডে সভাপতি অনুগামী মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু প্রধান অতিথি এবং মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ অপু, ইকবাল হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সেক্রেটারি জুয়েল প্রধান মিলে ফরম বিতরণ করেন। এই ওয়ার্ডেই সেক্রেটারি মন্তু ও যুগ্ম সম্পাদক সাগর প্রধানের নিজ এলাকা।

২১ সেপ্টেম্বর ১০নং ওয়ার্ডে সুপার ফাইভের ওই তিন নেতা ছাড়াও মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি জুয়েল রানা, আহাম্মদ আলী, নাজমুল হক রানা মিলে যুবদল নেতাদের মাঝে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেন। ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক পর্যায়ে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মমতাজ উদ্দীন মন্তু। তিনি বলেছেন, ‘১৮ সেপ্টেম্বর ৮নং ওয়ার্ডে যুবদলের কোন প্রোগ্রাম হয়নি। ওটা ছিল মাদকসেবীদের মিলন মেলা। ছবিতে দেখেছি মঞ্চের ৭ জনের মধ্যে ৬জনই মাদকসেবী। কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনা রয়েছে যুবদলে মাদকসেবীদের রাখা যাবে না।’
এই কর্মসূচির পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর মহানগরীর দেওভোগ এলাকায় সদর থানায় যুবদলের নেতাদের মাঝে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেন মন্তু। যেখানে সকল পূর্বের সকল নেতারা উপস্থিত থাকলেও জুয়েল রানা সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন না।