তারা খালেদা জিয়ার ধানের শীষ আনলেন কিন্তু মুক্তি চাইলেন না!

আবদুল্লাহ আল মামুন, বিশেষ প্রতিবেদক:

বিএনপির দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। আর সেই দলের প্রতীক ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের ৫ জন নেতা। কিন্তু তারা কেউই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কর্মসূচি পালন করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলেন না। যদিও এখানে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নাগরিক ঐক্যের প্রার্থী ছিলেন দুজন। বাকি তিন জন বিএনপিও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কর্মসূচি পালন করলেন না। এই ৫ জন নেতাই ধানের শীষ প্রতীক ছিনিয়ে এনেছিলেন। নির্বাচনও করেছিলেন। কিন্তু তার মুক্তি চাইলেন না!

৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হয়। তার প্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হলেও নারায়ণগঞ্জে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির এই কর্মসূচি পালন করেননি গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৫ প্রার্থী। এদিন এমনকি তাদের অনুগামী নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়নি এই কর্মসূচি পালন করতেন। একইভাবে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনিত হয়েছিলেন তারাও এই কর্মসূচি পালন করেননি। তবে মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল ঠিকই কর্মসূচি পালন করেছেন।

জানাগেছে, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কারাদন্ড দেন আদালত। তখন থেকে বেগম খালেদা জিয়া আছেন কারাগারে। দেখতে দেখতে পেরিয়ে যায় এক বছর। তার মুক্তির দাবিতে শনিবার ছিল সারাদেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। আর তাতে ছিলনা নারায়ণগঞ্জ জেলার ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া পাচঁ প্রার্থী। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের এসব নেতাকর্মীরা বলেন, দলের এখন দুঃসময়। এ সময় রাজপথে নেই দলের হাইকমান্ডের পছন্দের প্রার্থীরা। আর এতে বুঝা যায় ধানের শীষের প্রার্থীরা সুবিধাবাদী ছিলেন। এমনকি জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনিরও মনোনিত হলেও তিনিও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করেননি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ জেলার সবচেয়ে আলোচিত আসন রুপগঞ্জ। এ আসনে প্রার্থী করা হয় ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে। যদিও জেলা বিএনপির পদটিও তিনি পকেট কমিটির হাসিল করেছেন বলে দাবি করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে যদিও একবারও রাজপথে কোন আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি তাকে। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তি কামনায়ও দেখা যায় না তাকে। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে পারলেও রুপগঞ্জের রাজনীতিতে ছিলেন তিনি ব্যর্থ। নির্বাচনে তিনি পারেননি দলের হেভিওয়েট নেতাদের মাঠে নামাতে। যার ফলে ভরাডুবি হয় তার।

নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। রাজনীতির শুরুতেই তিনি জিয়া পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে একাধিকবার বির্তকের সৃষ্টি করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৌশলগত কারণে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে সবচেয়ে লজ্জাজনক ভোট পান তিনি। যার ফলে জনপ্রিয়তার শূন্যে নির্বাচনের পর থেকে রাজনীতির মাঠ থেকে হঠাত হারিয়েগেছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। শনিবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারাদেশের কর্মসূচি পালন করেননি কথিত জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ কর্মী কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ।

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসন থেকে মনোনয়ন পান অশিক্ষিত আজহারুল ইসলাম মান্নান। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য। একই সঙ্গে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। এতগুলো পদ বহন করলেও তিনিও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কর্মসূচি পালন করেননি।

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাসেমী। তিনি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হলেও লড়েছিলেন ধানের শীষ প্রতীকে। নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন তিনিও বিএনপিই করেন। ইসলামীক দল হিসেবে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনীতি করেন। কিন্তু সেই কাসেমীর ছায়াও নির্বাচনের পর দেখা যায়নি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন এসএম আকরাম। তিনিও ছিলেন না খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আওয়ামীলীগের রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করে যোগ দেন নাগরিক ঐক্যে। নাগরিক ঐক্য নিয়ে যখন গঠিত হয় ঐক্যফ্রন্ট তখন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে ভাগিয়ে আনেন তিনি। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীকের দল বিএনপি আর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু সেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কর্মসূচি তিনিও পালন করেননি।