জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পরিচিতি সভার নামে ‘চাঁদা’ কালেকশন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

প্রায় এক বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরিচিতি সভা করতে যাচ্ছেন নেতারা। আংশিক কমিটির প্রায় দুই বছরের শেষের দিকে। করোনাকালে গরীব অসহায় মানুষের মাঝে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন ভুমিকার পর পরিচিতি সভায় খরচের নামে সংগঠনটির ১৭১ জন সদস্যদের কাছে চাঁদা আদায় চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে যা সান নারায়ণগঞ্জকে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতাদের ভেতর থেকেই বেশকজন। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম।

জানাগেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাজধানীর কর্ণফুলিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম ও সেক্রেটারি মাহবুব রহমান সহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মুলত পরিচিতি সভা করার লক্ষ্যে এই প্রস্তুতি সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শুধুমাত্র পরিচিতি সভা সফল করতে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পদ অনুযায়ী চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সামনেই চাঁদা নির্ধারণ করা হয় এবং যারা উপস্থিত ছিলেন না তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিকাশের মাধ্যমে পরিচিতি সভার খরচ নির্বাহের জন্য চাঁদা পাঠিয়ে দিতে বলা হচ্ছে। কমিটির সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানাগেল।

তবে এ নিয়ে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ বেড়েছে। নেতাকর্মীরা বলছেন- এখনও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সকলেই সমস্যাগ্রস্থ। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনের পরিচিতি সভা সফল করতে খরচের নামে চাঁদা চাপিয়ে দিলে সেটা কিভাবে সম্ভব? সভাপতি সায়েম ও মাহাবুব রহমান বিএনপির সরকার আমলে শত শত কোটি কোটি কামিয়েছেন। তারা দল থেকে সুবিধা নিয়েছেন। তারা চাইলে পরিচিতি সভার খরচ বহন করতে পারেন। কিন্তু কমিটির বাকি নেতারা তো ক্ষমতায় ছিলেন না। তারা এতটাই হীনমন্যতা দেখাচ্ছেন পরিচিতি সভার নামে চাঁদা আদায় করছেন।

এ বিষয়ে মোবাইলে ফোনে জানতে চাইলে আনোয়ার সাদাত সায়েম সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, চাঁদা আদায় করা হচ্ছে এমন কথা কে বলেছে? সংগঠনের কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে কেউ যদি স্বেচ্ছায় সহযোগীতা করে সেটা তো চাঁদা নয়। সংগঠনের সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি তো একা খরচ বহন করতে পারবেন না, কর্মসূচি একাও করবেন না। হয়তো দু’চার পাঁচজন স্বেচ্ছায় সহযোগীতা করবেন। কাউকে চাপিয়ে দেয়া হয়নি। এমন কথা কেউ বলে থাকলে সেটা মিথ্যা।

অন্যদিকে জানাগেছে, দেশের মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র রক্ষা এবং যেকোনও দুর্যোগে জনগণকে স্বেচ্ছাসেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ‘স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন’ যা পরে ‘জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল’ নামে পরিচিতি পায়। ১৯৮০ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে স্বেচ্ছাসেবক দলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ ৩৯ বছর পার করলেও স্বেচ্ছাসেবার আদর্শ থেকে বর্তমানে অনেকটাই বিচ্যুত হয়ে আছেন সংগঠনটির নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা। যা করোনাকালে তাদের ভুমিকায় দেখা গেল।

স্বেচ্ছাসেবক দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মীদের সমন্বয়ে এই সংগঠন গড়ে তোলা হবে। সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, মহামারী সহ যেকোনও জাতীয় দুর্যোগ, দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করবেন। কোনও কাজেই তারা ব্যর্থ হবেন না। অন্যরা যেখানে ব্যর্থ হবেন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে এগিয়ে যাবেন।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, সেক্রেটারি মাহবুব রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাক সালাউদ্দীন সালু সহ শীর্ষ নেতাদের করোনা ভাইরাসের মহামারিতে গরীব অসহায় মানুষের জিয়াউর রহমানের প্রত্যাশিত ভুমিকা রেখেছে কিনা তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন।

এদিকে গত বছরের ৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটিতে ১৬ জনকে সহ-সভাপতি, ৭ জনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১৬ জনকে সহ-সম্পাদক, ৯ জনকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ৭৬ জনকে বিভিন্ন সম্পাদকীয় ও ৪৪জনকে সদস্য পদে রাখা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি পদে আনোয়ার সাদাত সায়েম, সেক্রেটারি পদে মাহবুব রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সালাউদ্দীন সালুকে রাখা হয়। এ ছাড়াও সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মোল্লা মোহাম্মদ সাখাওয়াত ও সহ-সভাপতি পদে জাকারিয়া সালেহ স্বপন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে জিএস শাহআলম ও সালাউদ্দীন দেওয়ানকে রাখা হয়।