কৃষকের ধান কেটে দিবেন সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

মহামারি করোনাভাইরাসের কারনে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের জমির ধান কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম। স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন সেই টিমের মাধ্যমে সোনারগাঁয়ে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন ঘোষণার পরদিনই উপজেলায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কাটায় নেমে পড়েছেন।

করোনা ভাইরাসের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সোনারগাঁয়ের কৃষকরা কৃষি শ্রমিক পাচ্ছেন না। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌসুমী শ্রমিকেরা এখানে এসে ধান কেটে দিয়ে যেতো। কিন্তু এবার নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমন বেশী থাকায় অন্যান্য বছরের ন্যায় বাইরের জেলা থেকে অনেক মৌসুমী শ্রমিক নারায়ণগঞ্জে এ আসতে চাচ্ছেন না। এর ফলে বিপুল পরিমাণ ধান জমিতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এ কারনে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে নিজে সাথে থেকে সোনারগাঁয়ের কৃষকদের মাঠের জমির ধান কেটে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম সোনারগাঁবাসীর উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বলেছেন, ‘আপনি জানেন কি- আপনার হাতের দামী মুঠোফোন, ফসিল ব্যান্ডের ঘড়ি, ফ্ল্যাট টিভি, এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ, ৩ডি ফ্লোর টাইলস, ৪জি কানেকশান, সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই এসব মোটেও জীবনের জন্য অত্যাবশকীয় কিছু নয়। মানুষের জীবনের জন্য অত্যাবশকীয় হলো শুধুই দু’বেলা দু’মুঠো খাবার।

ইতিহাস সাক্ষী আছে শুধু পঞ্চাশের মন্বন্তরে তৎকালীন ভারতে দুর্ভিক্ষে মারা গেছে ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ। বিংশ শতাব্দীতেও সারা পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মারা গেছে ৭০ লক্ষ মানুষ। আপনি কি জানেন করোনা ভাইরাসের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা যদি কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে না পারি ১৮ কোটির এই বাংলাদেশে আমরা নিশ্চিতভাবেই একটি দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে চলেছি! এসব রাষ্ট্রীয় বড় ব্যাপার। রাষ্ট্র নিশ্চয়ই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। আমরা শুধু সোনারগাঁ নিয়ে ভাবতে চাই।’

তিনি সোনারগাঁবাসীর উদ্দেশ্যে আরও লিখেন, আপনি কি জানেন করোনা ভাইরাসের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের কৃষক ভাইয়েরা কোন কৃষি শ্রমিক পাচ্ছেন না। কারন অন্যান্য বছর বাইরের জেলা থেকে অনেক মৌসুমি শ্রমিক আসলেও এ বছর কেউ নারায়ণগঞ্জ এ আসতে চাচ্ছেন না। এর ফলে বিপুল পরিমাণ ধান জমিতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে! আমি দু’একজন কৃষক ভাইয়ের হাহাকার দেখে সত্যি ব্যথিত হয়েছি। প্রতি বছর আমাদের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান যে কৃষক, এ বছর তাদের জন্য কি আমাদের কিছুই করণীয় নেই? আমরা কি পারি না তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে??

হুম আপনাকেই বলছি-
আগামী সপ্তাহে পুরোদমে শুধু হবে ধানকাটা।
আমাদের প্ল্যানটা খুব সহজ-

১। ১০টি ইউনিয়ন (৯০টি ওয়ার্ড) প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে স্বেচ্ছাসেবক টীম গঠন করা হবে। প্রতিটি টীমে ৪০/৫০ জন করে থাকবে। যারা প্রান্তিক চাষীদের ধান কেটে দেবে। আমি নিজেও তাদের সাথে ধান কাটবো।

২। উপজেলায় একটি মনিটরিং টীম থাকবে। সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী ভাইয়েরা এই মনিটরিং টীমে থাকতে পারেন এবং ওয়ার্ড টীম গঠনে সহায়তা করতে পারেন। ধান কাটায় অংশ নিতে পারেন।

৩। স্বাস্থ্য বিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পুরো কাজটি করা হবে।

৪। অংশগ্রহণকারীদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাস্ক সরবরাহ করা হবে এবং পুরো কাজ শেষে এপ্রিসিয়েশন লেটার দেয়া হবে।

আপনি ঘরের ভেতর হাত গুটিয়ে বসে না থেকে সপ্তাহে ২/৩ ঘন্টা করে আমাদের সাথে এই মহৎ ও মহান কর্মযজ্ঞে অংশ নিন। জাতির এই ক্লান্তি লগ্নে আপনার সক্রিয় অবদানও অবিস্মরণীয় হয়ে থাকুক।

আপনি ও আপনার বন্ধুগণ নাম ঠিকানা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমাদেরকে ফোন অথবা এসএমএস করে জানান
০১৬৭৮৬৯১০৩১
০১৮১৩০২৫৩৮৮
আসুন আপনি আমি আমরা সবাই মিলে আমাদের সোনারগাঁকে একটি সত্যিকারের সোনারগাঁয়ে পরিণত করি।’