নির্বাচনে বিপক্ষে কাজ করা ব্যক্তির বাড়ি অবরুদ্ধ করায় লাঞ্ছিত কাউন্সিলর

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

ভাই আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী ও দুই বোন নিয়ে তিন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু আরেক ভাই ইসহাক মিয়া বসবাস করেন কাইয়ুমের বাড়ি থেকে মিনিমাম কোয়ার্টার কিলোমিটার দুরের আরেকটি বাড়িতে। সেখানে বাড়ির সামনে বাঁশ ও লাল নিশান টানিয়ে ইসহাক মিয়াকে অবরুদ্ধ করেছেন কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুল। এ কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে ইসহাক মিয়া কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে ভাংচুর এবং তাকে লাঞ্ছিত ও তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।

তবে কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুলের অভিযোগ- ওই পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলায় এবং তাদের বাড়ির সামনে লাল নিশান ও বাঁশ দিয়ে আটকে দেয়ার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুলের কার্যালয় ভাংচুর, লাঞ্ছিত ও তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা।

তিনি অভিযোগ করেছেন- সিটি কর্পোরেশনে ২৭নং ওয়ার্ড বন্দরের কুড়িপাড়াপাড়া এলাকায় একটি পরিবারের তিন সদস্যের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর ওই বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির অন্য সদস্যরা লকডাউন ভেঙে রাস্তায় ও হাট-বাজারে ঘুরাঘুরি করছেন। লকডাউনের জন্য লাগানো বাঁশ দিয়ে সাইনবোর্ড এবং লাল নিশানও ভেঙে ফেলেছেন তারা। ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

তবে অভিযুক্ত ইসহাক সাইনবোর্ড ও লাল নিশান ভেঙে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুলের প্রতিপক্ষ সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামের নির্বাচন করায় আমাকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করেছেন এবং করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের সঙ্গে তার আচরণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

স্থানীয় এলাকাবাসী ও কাউন্সিলর জানান, বন্দরের কুড়িপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমটির সদস্য ও ২৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী ও দুই বোন করোনায় আক্রান্ত হন। মঙ্গলবার তাদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভি আসার পর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কাইয়ুমের বাড়টি লকডাউন করা হয় এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসায় পরিবারের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেন কাউন্সিলর। এ সময় বাড়ির সামনে বাঁশ ও লাল নিশান দিয়ে লকডাউন বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। যেন সবাই সচেতন থাকেন। সন্ধ্যার পূর্বে কাইয়ুমের ভাই এসহাক মিয়া বাড়ির সামনের লকডাউন লেখা বোর্ড, লাল নিশান, বাঁশ সহ সবকিছু ভেঙে ফেলে দেন।

কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুল অভিযোগ করেন, ‘শুধু সাইনবোর্ড বা লাল নিশান ভেঙে ফেলা নয়, সন্ধ্যার পর আমার কার্যালয়ে এসে ভাংচুর করে প্রাণনাশের হুমকি ও গালিগালাজ করেছেন তিনি। পরে এলাকাবাসী এসে তাদের থামিয়েছেন।’

অভিযুক্ত ইসহাক বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও তার দুই বোন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইয়ের বাড়ি থেকে আমার বাড়ি প্রায় কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে। ভাইয়ের পুরো পরিবার কোয়ারেন্টিনে থাকার কারণে আমার বাসা থেকে খাবার রান্না করে ছোট ছেলে ওই বাড়িতে দিয়ে আসে। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলর আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মেনে পরিবারে সবাই কোয়ারেন্টিনে আছে। কিন্তু এই সময়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আমার ভাইয়ের বাড়িতে বা আমার বাড়িতে একটু ওষুধ পাঠাননি। খোঁজ খবরও নেননি। উল্টো কাউন্সিলরের নির্বাচনী প্রতিপক্ষের নির্বাচন করায় আমাকে এবং আমার পরিবারকে শায়েস্তা করার জন্য মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হযরানি করার চেষ্টা করছেন। তার আচরণ উদ্দেশ্যপ্রনোদিত।’

এ বিষয়ে কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি তাৎক্ষণিক সিটি করপোরেশনের সিইও এবং বন্দর উপজলো নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। বাড়ির লকডাউন তছনছ করে ইসহাক প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে সবার মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।’

এ ব্যাপারে বন্দর উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার বলনে, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’