খালেদা জিয়ার কারাবাস ও নারীর অধিকার

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর অধিকার রক্ষা ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নারী দিবসের প্রচলন। সারা বিশ্বের সাথে ইদানীং কালে বাংলাদেশেও নারী দিবসে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে নীতি বাক্য কপচানো হয়। এবারও গতানুগতিক সব হলো। নারী দিবসের পরন্ত বেলায় এসে দুটি বিষয়ে খুব হতাশা বোধ করছি।

এত নারীবাদীরা এত কিছু করলেও দুটি বিষয়ে তারা মুখে কুলুপ দিয়েছেন। একটি গত কয়েক বছরের লাগাতার নারী ধর্ষণ, আরেকটি বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস।

বেগম খালেদা জিয়া মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার পরেও বিনা অপরাধে শুধু সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে মারাত্মক অসুস্থ্য অবস্থায় অন্ধকার কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। একজন নারীর প্রতি সরকারের এমন জুলুমবাজীর বিরুদ্ধে কথা না বলাকে আমি নারী দিবসের সফলতার অন্তরায় মনে করি।

সংবাদমাধ্যমে আমরা জেনেছি সুচিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়ার হাত দুটো বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। পরিবার থেকে সুচিকিৎসার জন্য জামিনের আবেদন করা হলেও সরকার তা আমলে নেয়নি।

তবে সুখের বিষয় এই যে, এদেশের প্রায় সকল মানুষ এক কথায় স্বীকার করেন বেগম খালেদা জিয়া নিরপরাধ ও রোষানলের শিকার।

তবে সরকারের সকল ষড়যন্ত্র বিফল হয়েছে। তারা খালেদা জিয়াকে ফিজিক্যালি বন্ধী রাখতে পারলেও তার অবস্থান আকাশ ছুয়েছে ইনশাআল্লাহ। বেগম খালেদা জিয়া এতদিন দেশের বৃহৎ অংশের মানুষের নেত্রী ছিলেন। গত দুই বছরের কারাবাস খালেদা জিয়াকে আজ সারা বাংলার মানুষের মনে “মা” এর আসনে বসিয়েছে। খালেদা জিয়া এখন বাংলাদেশের “মা”।

আমরা দেখি জিকে শামীম থেকে শুরু করে কতশত খুনী, ব্যাংক লুটেরা, ধর্ষক, মাদক ব্যাবসায়ী, লক্ষীপুরের তাহের পুত্র ফাসির আসামী বিপ্লবরা আইনের মার প্যাচে জামিন পেলেও খালেদা জিয়া চিকিৎসার সুবিধাটুকুও পাচ্ছেন না।

বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আদালতও যেন কেমন হয়ে গেছে। আমাদের সংবিধান বলে উপযুক্ত জামিনদার পাওয়া গেলে যে কোন মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তাও যেন খালেদা জিয়ার জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে না।
আমাদের মা খালেদা জিয়া মারাত্মক অসুস্থ। ৭ই মার্চ তার বোন তাকে দেখে এসে সাংবাদিকদের কাছে আশংকা প্রকাশ করেছেন, হয়তো বেগম খালেদা জিয়াকে জীবিত কোনদিন বের করতে পারবেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই প্রয়োজনে দেশমাতার একজন সন্তান হিসাবে আমাকে ফাঁসি দিয়ে হলেও দেশমাতাকে জামিন দেয়া হোক।

‘তোমায় মুক্তি দিয়ে যদি মা
আমায় দিতো ফাঁসি,
ফাঁসির মঞ্চে যেতাম মাগো
হেঁসে সুখের হাসিঁ।’

প্রহসনের বিচারে ৭৫ বছরের একজন সিনিয়র সিটিজেন নারী যদি বিনা চিকিৎসায় কারাবাস করে মৃত্যুর প্রহর গোনে তবে সে দেশে বাকী নারীর অধিকার কে দিবে? এদেশে একদলীয় কিছু নারী ছাড়া আর কোন নারীর কোন অধিকার আছে বলে মনে করি না। যদি নারীর অধিকার থাকতো তবে শত শত হাজারো নারী নির্বিচারে ধর্ষিতা হতো না। বিচার না পেয়ে আমার ধর্ষিতা বোনেরা আত্মহত্যা করতো না।

দেশমাতা খালেদা জিয়া এদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি যদি নিজের চিন্তা করতেন তবে তিনি সরকারের সাথে আঁতাত করে শরীরে হাওয়া লাগিয়ে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজের সুখের জন্য আতাত না করে দেশ ও দেশের জনগণের মুক্তির জন্য গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য নিজেকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছেন। তার বিনিময়ে আমরা দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসী তার জন্য কি করেছি? কিছুই না। সরকারের রোষানলকে ভয় পেয়ে খুন গুম, হামলা মামলাকে ভয় করে মায়ের মুক্তি জন্য কিছুই করিনি। কিন্তু মমতাময়ী মা কিন্তু আমাদের অনাগত ভবিষ্যতের জন্য নিজের জীবন বাজি ধরেছেন। এজন্যই বুঝি মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত।

যে মা তার সন্তানদের অনাগত ভবিষ্যতের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার জন্য নিজের জীবনবাজি ধরতে পারে। সেই মায়ের মুক্তির জন্য আমাদের কিছুই করার নেই। আল্লাহর রহমতে যে মা আমাদের নেতার পরিচয় দিলো, যে মা আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা দিলেন, যার কারনে অনেকই আংগুল ফুলে কলা গাছ হলাম তদের কি আপোষহীন মায়ের জন্য কিছুই করার নেই?

আমরা যারা বিএনপির রাজনীতি করি তারাও, বিশেষ করে নেতৃত্ব স্থানীয়রা যেন মায়ের মুক্তির বিষয়টি কেমন রুটিন ওয়ার্কে পরিনত করেছে। অনেকটা করতে হয় বলে করা। মনের তাগিদে নয়। দলবাজি, কমিটি গঠন, ভাংগন, লবিং গ্রুপেই সীমিত আমাদের রাজনীতি। আমাদের মাথার তাঁজ, যার জন্য এখনো কর্মীরা আমাদের নেতা মানে, আমরা কমিটি দেয়া নেয়া করতে পারি, তার কথা ভুলে থাকাই যেন এখন নিয়মে দাড়িয়েছে। যদি আমাদের মধ্যে বিন্দু মাত্র লজ্জা শরম ও বিবেক থাকে তবে আসুন মন থেকে মোনাফেকি ঝেড়ে ফেলে একদফার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরি।

আর জনগণ আপনার ভোটাধিকার রক্ষা, আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে মানুষটি ৭৫ বছর বয়সে বিনা চিকিৎসায় কারাবাস করছেন তার জন্য আপনার ভাবনা কি? শুধু পত্রিকা পড়ে বা টেলিভিশনে খবর দেখার সময় হা হুতাশ করেই দায়িত্ব পালন করবেন? নাকি একটি বারের জন্য রাস্তায় নেমে আসবেন? আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ব্যর্থ বলে আপনারা চুপসে যাবেন। না তা হয় না। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আপনারা যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুণ, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ইতিহাস যেন আমাদের নেতাদের মত আপনাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় না করায়।
দেশমাতা খালেদা জিয়া এখন সাড়া বিশ্বে নির্যাতিত নারীর প্রতীক। একজন সর্ব ত্যাগী মায়ের প্রতিরূপ। অতএব খালেদা জিয়া মুক্তি ব্যতীত এদেশে নারীর মুক্তি সম্ভব নয়।

লেখক: মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ
সভাপতি
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল