শামীম ওসমানের অস্ত্র নিয়ে রাজীবের বক্তব্য, রিয়াদের কঠোর জবাব

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

৯০ দশকের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘ওই সময় পুুলিশ ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র ছিল, তারচেয়ে বেশি অস্ত্র ছিল আমার কাছে। এখন আমার গাড়িতে অস্ত্র আছে কিনা আমি জানি না।’ মুলত বর্তমান অহিংসু রাজনীতি ও ৯০ দশকের রাজনীতির পার্থক্য বুঝাতে গিয়েই শামীম ওসমান এমন মন্তব্য করেছিলেন। সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব তার ফেসবুকে শামীম ওসমানকে ধন্যবাদ দিয়ে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এরপর দিন ৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ তার ফেসবুকে মাসুকুল ইসলাম রাজীবের ওই বক্তব্যের কঠোর ভাষায় জবাব দেন।

মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে উদ্দেশ্য করে হাবিবুর রহমান রিয়াদ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সাবেক সন্ত্রাসী ছাত্রদল নেতা রাজিব সাহেবকে বলব:-১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পরে মাদক, অস্ত্র, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলার ত্রাস তৈরি করেছিল বিএনপি। ১৯৯১ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের কেউ বাসা থেকে বের হতে পারতো না, এলাকায় আসতে পারতো না বিএনপির সন্ত্রাসীদের কারনে। নারায়ণগঞ্জে অস্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছিল বিএনপি।’

রিয়াদ আরও লিখেন, ‘জননেতা একেএম শামীম ওসমান সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীদের নিয়ে এসব সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করেছেন। তখন সাধারণ মানুষ শ্লোগান দিতো বিএনপির ৫ এমপির দুলাভাই শামীম ভাই, শামীম ভাই। বিএনপির সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ২০০১ সালে বিএনপির মদদে চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে আরডিএক্স গ্রেনেড হামলা, ২০০৪ সালে আওয়ামীলীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলাই প্রমাণ করে বিএনপি কত বড় সন্ত্রাসী দল। এতে প্রাণ দিয়েছে অনেক মানুষ।’

‘বিএনপির স্বররাষ্ট্র মন্ত্রী বাবর ও তারেক রহমান ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গ্রেনেড হামলা মামলার মুল আসামী।’ মন্তব্য করেন রিয়াদ।

রিয়াদ আরও লিখেছেন, রাজিব হচ্ছেন ওই দলের নেতা তার ইতিহাস সবাই জানে। ২০০১-০৫ সাল তোলারাম কলেজে করছিল মাদক, ধর্ষণ, ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানা এসব অপকর্মের মূল হোতা ছিলেন রাজিব। বছর খানেক আগে ডিবির হাতে মাদক নিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটেন। এখন তিনি খুব সুশীল কথা বলেন ব্যাপারটা হাস্যকর। রাজিব সাহেবদের অপকর্মের ফাইল খুললে হয়তো শহরে আর থাকা হবে না। আপনাদের অপকর্ম কলেজের শিক্ষার্থীরা ভুলেনি। তাই আউট।’

ছাত্রলীগের এই নেতা লিখেছেন, ‘শামীম ওসমান এমপি মহোদয় বুঝিয়েছেন সেইসব সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করে একটি শান্তিময় নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলেছি। আর সাবেক সন্ত্রাসী ছাত্রদল নেতা তার ভুল ব্যাখ্যায় মেতে উঠেছেন। তাদের দলের এটাই মুল শিক্ষা সেটা হল মিথ্যাচার।’

অন্যদিকে আগের দিন ৩ মার্চ মঙ্গলবার শামীম ওসমানের অন্ত্র নিয়ে বক্তব্যের জেরে সেই সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন মাসুকুল ইসলাম রাজীব। মাসুকুল ইসলাম রাজীব তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ৯০ দশকের রাজনীতি তুলে ধরেছেন।

তিনি লিখেছেন, গত কয়েকদিন ধরেই মাননীয় এক সংসদ সদস্যের অস্ত্র নিয়ে একটি বক্তব্য বেশ আলোচিত সমালোচিত হচ্ছে। উনি বলেছিলেন উনার কাছে যতোগুলো অস্ত্র ছিল পুলিশের কাছেও ছিলনা। তারপর উনি সেগুলো ২০০১ সালের পরে সংশোধন করে বলেছেন ৯১ সালে সে সময়ের পুলিশ সুপারের কাছে জমা দিয়েছেন। আজ এক সংবাদমাধ্যমে দেখলাম উনি অস্ত্র ভান্ডার বলতে বিশাল কর্মী বাহিনীকে বুঝিয়েছেন তাহলে ঐ সময়ে কি জমা দিয়েছিলেন অস্ত্র না কর্মীবাহিনী?

রাজীব আরও লিখেন, আসলে সত্য অনেক সময় নিজের অজান্তেই বের হয়ে যায়। কারন সত্য যতই নির্মম হউক না কেন সেটা সবসময়ই সুন্দর। আমার মতে উনি ঐ অনুষ্ঠানে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং ২০০১ সাল উল্লেখ করেছেন পুরোটাই সত্যি। কারন ২০০১ সালের পর অস্ত্রের রাজনীতি করার আর সুযোগ ছিলনা। এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে একসময় নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশেই অস্ত্রের রাজনীতির রেওয়াজ ছিল।

সেই সময়কার রাজনীতি তুলে ধরে রাজীব লিখেন, আমি নিজে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম ১৯৯৯ সালে। তখন মিনিমাম ৩০/৪০ জন অস্ত্রধারী আমাকে ঘিরে গুলি করেছিল। ৯১, ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আতংকের নগরী ছিল নারায়ণগঞ্জ। এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে দেশনেত্রীর ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে দলমত নির্বিশেষে অস্ত্রের রাজনীতি বন্ধের জন্য উনি ছিলেন কঠোর এবং বদ্ধপরিকর। পরবর্তীতে পুরোপুরি নির্মুল করেছিলেন যার ধারাবাহিকতা আজো অনেকাংশে বিদ্যমান।

‘মানুষ এবং তার মানুষিকতা পরিবর্তনশীল। ৯৬ থেকে ২০০১ এই সাংসদের শাসনামলের সাথে যদি ২০০৮ থেকে অদ্যবধি শাসনামলের বা বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের প্রতি আচরনের তুলনা করা হয় (পুলিশ ব্যতিত) তাহলে আমার দৃষ্টিতে সেটা আকাশ পাতালের মত পার্থক্য মনে হবে।’

‘২০০৮ এর পর আজ অবধি উনার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আচরণ ছিল সৌহার্দ্যপূর্ন হয়তো আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা বিশ্বাস বেড়ে যাওয়ার কারনে। তাই সত্য স্বীকার করা এবং বলার সাহস সব রাজনীতিবিদের মাঝে তৈরী হউক এটাই প্রত্যাশা। সবশেষে সত্য স্বীকার করা আর এখন আল্লাহর উপর অনেক আস্থা রাখেন এই কথা বলার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

অন্যদিকে গত ১ মার্চ রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২০’ এর আলোচনা সভায় শামীম ওসমান ৯০’দশকের সহিংস রাজনীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘২০০১ সালের আগে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র ছিল তার চেয়ে বেশি অস্ত্র একা আমার নিজের কাছেই ছিল। আজকে আমার গাড়িতে অস্ত্র আছে কি না তা আমি নিজেও জানি না।’

অতীত সহিংস রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক দর্শন আগে ছিল একরকম। নিজের জন্য করতাম। জিন্দাবাদ শুনতে ভালো লাগতো। ২০০১ সালের পরে আমার এই চিন্তা পরিবর্তন হয়েছে।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি তুলে ধরে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেছিলেন, ‘সে সময় সদর থানার ওসি ছিল মঞ্জুর কাদের। তার ওপর একটি বাড়ি থেকে এসে হামলা চালানো হলো। ওই বাড়ি থেকে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা এসে ওর উপর হামলা করলো। তখন চাষাড়ার সকল হকারকে আমরা পলিটিক্যাল মটিভেশন করেছিলাম। এর জন্য হকারদের প্রতি আলাদা একটা টান আছে। তারা লাঠি নিয়ে পাহারা দিত। যে মুহূর্তে পুলিশের উপর অ্যাটাক হয়েছিলো এই টোটাল হকাররা লাঠি নিয়ে তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলেছিল। এ কারণেই ওরা কিন্তু নারায়ণগঞ্জে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে নাই।’