ফতুল্লায় ছাত্রলীগের পাল্টা কমিটির ১৬বছর, কোন কমিটির দায়?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

প্রায় ১৬ বছর পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাও একটি নয়, পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি। তবে পাল্টা কমিটির একটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে অনেক আগেই। আরেক কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি দাবি করে বুড়ো বয়সেও ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের আর কমিটি গঠন করা হয়নি। তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের তন্মধ্যে পাড় করেছে সানি ও সুজনের নেতৃত্বে আরেকটি জেলা ছাত্রলীগ কমিটি। তারাও ছিলেন দ্ইু মেয়াদে। নতুন কমিটির প্রায় বছর খানিক সময় পাড় হলেও ফতুল্লায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে হাত দিতেই যেনো পাড়ছেন না।

সূত্রমতে, ২০০৪ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এহসানুল হক নিপুর অনুমোদনে সর্বশেষ গঠিত হয় ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগ। তবে এই কমিটিকে পাস কাটিয়ে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম আরাফাতও পাল্টা কমিটি সেখানে গঠন করেছিলেন। ওই সময়কার ছাত্রলীগের শীর্ষ এই দুই নেতার মাঝে বৈরী সম্পর্ক ছিল।

ওই সময়কার বিতর্কিত আবু মোহাম্মদ শরীফুল হককে সভাপতি ও এনায়েতনগর এলাকার আব্দুল মান্নানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এককভাবে ঘোষণা করেছিলেন নিপু। ওই সময় অভিযোগ ছিল কমিটি গঠনকালে শীর্ষ পদের কেউই তখন নিয়মিত ছাত্র ছিলেন না। সদস্য পদের ২/৪ জন ব্যতিত বাকি সবাই ছিলেন অছাত্র। তাছাড়া ঐ সময় যাদের দিয়ে এই ছাত্র সংগঠনের কমিটি গঠন করা হয়েছিল, বর্তমানে তাদের অনেকেই মাঝ বয়সী। তারপরও তারা এখনো ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে পরিচিত।

কমিটি গঠনের সময় বর্তমান এমপি একেএম শামীম ওসমানের বলয়ে ছিলেন নিপু। তার শামীম ওসমান বলয়ের বাহিরে ছিলেন জিএম আরাফাত। তবে জিএম আরাফাত বর্তমানে মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অধিষ্ট হলেও নিপুর কোন দলীয় পদ পদবী নাই। তিনি সর্বত্র পরিচিত এমপি শামীম ওসমানের শ্যালক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ওই সময় জিএম আরাফাত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন।

ফতুল্লায় নিপু এককভাবে কমিটি গঠনের পর শামীম ওসমান বিরোধী তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম আরাফাত পাল্টা কমিটির অনুমোদন দেন। আলীগঞ্জের শাহাদাত হোসেন সেন্টু ও বক্তাবলী এলাকার আল আমিনকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে এ কমিটির অনুমোদন দেন। তবে এই কমিটির নেতাদের অধিকাংশরাও ছিলেন অছাত্র।

নিপু ও আরাফাতের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। শেখ সাফায়েত আলম সানিকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি রাজীব দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মনির ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন আজিজুর রহমান আজিজ। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এই কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে দেন। কিন্তু তন্মধ্যেও ফতুল্লায় তারা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করতে পারেননি।

এদিকে প্রায় বছর দেড়েক পেরিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির। এই কমিটিতে সভাপতি পদে রয়েছেন আজিজুর রহমান আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন আশরাফুল ইসমাঈল রাফেল প্রধান। কিন্তু তারাও ফতুল্লা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছেন না। এই কমিটির আগের কমিটির সঙ্গে ফতুল্লা থেকে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীদের রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কমিটি গঠন না করায় আবারো তারা জিমিয়ে পড়ে। কিন্তু ১৬ বছর পরেও ফতুল্লা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক ও সেক্রেটারি আব্দুল মান্নান পরিচয় দিচ্ছেন। যদিও জিএম আরাফাতের দেয়া সেই কমিটির কার্যক্রম কয়েক বছরের মাথায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও শহরের পাশের একটি থানায় ছাত্রলীগের কমিটি কেন গঠন করা হয়নি তার কোন সঠিক উত্তর পাচ্ছেনা স্থানীয় কর্মীরা। তবে এই ব্যর্থতার দায় কাদের তা নিয়েও বিরাট প্রশ্ন।