জামিনে মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা অধ্যাপক মামুন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

দীর্ঘ ২৩ দিন কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। ৮ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এর আগে সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের আদালত থেকে জামিন পান তিনি।

জামিনের পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। এ সময়ে কারামুক্ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপির নেতাকর্মীরা।

৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে সদর মডেল থানার পুলিশের উপর হামলার ঘটনার মামলায় অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ ৭ নেতাকর্মীর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। কিন্তু বন্দর থানায় একটি নাশকতার মামলায় জামিন না থাকায় অধ্যাপক মামুন মাহামুদ কারামুক্ত হতে পারেনি।

আসামি পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান ও অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান সহ অন্যান্য বেশকজন আইনজীবী।

ঘটনা সূত্রে, গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন ও এসআই ছাইফুল ইসলামকে পৃথক দুটি স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। ওই সময় এই দুই পুুলিশ কর্মকর্তা বেদম মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় ছাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ১৯ জন নেতার নাম উল্লেখ সহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। যেখানে ওইদিন রাতেই জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ও মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল সহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ। তাদের ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তাদের প্রত্যেকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এ মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ, মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুল ইসলাম ছক্কু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আকরাম প্রধান, মিছিলকারী মঞ্জু ও মাহমুদুল হাসান লিংকনকে আসামি করা হয়। এছাড়াও মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ঘটনার দিন আটককৃত বিএনপির ৪ কর্মীকেও এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এদিকে ১৮ ডিসেম্বর বুধবার মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সহ নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ৯ জন নেতা জামিন পান। তবে ওইদিন রাতেই সাখাওয়াত হোসেন খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তিনি গত ১ জানুুয়ারি জামিনে মুক্তি পান।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়- বিজয় দিবসের র‌্যালী থেকে পুলিশের উপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুুলিশের অস্ত্র-গুলি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, যানবাহন চলাচলে বাধা, রেল লাইনের ক্ষতির চেষ্টা, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা সহ নানা অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর সোমবার রাতেই সদর মডেল থানা পুুলিশের এসআই ছাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামুন মাহামুদ ও এটিএম কামাল সহ আগের দিন আটককৃত বিএনপি কর্মী নুর এলাহী সোহাগ, মো.স্বপন মিয়া, কামরুল হাসান ও মামুনকে ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড শুনানি আগামী ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ধার্য্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠান।

মামলায় বাদী এসআই ছাইফুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে বেআইনিভাবে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা রাস্তার যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়ে ভাংচুর করছে এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আসামিরা পুলিশের সাথে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন। এ সময় আমাদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ সহ সরকারি অস্ত্র ও গুলি ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা করে। এসময় আমি সহ পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত প্রাপ্ত হই। পরে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় চারজনকে আটক সহ ঘটনাস্থলে থেকে বাঁশের লাঠি, ভাঙা ইটের টুকরো জব্দ করা হয়।