মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা সন্দিগ্ধ আসামি’ সাখাওয়াতের ১৪ দিন কারাভোগ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম

প্রায় দেড় বছর পূর্বের একটি মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা সন্দিদ্ধ আসামি’ অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ১৪ দিন কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এমন একটি মামলায় কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।

১ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। এর আগে বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমান সাখাওয়াত হোসেন খানকে আদালতে প্রতিদিন কোর্টে হাজিরার শর্তে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন বলে জানান আইনজীবী অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান।

গত ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে প্রায় দেড় বছর আগের একটি নাশকতার মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা সন্দিগ্ধ আসামি’ হিসেবে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এমনকি ওই মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড আবেদন না মঞ্জুর করে সাখাওয়াত হোসেন খানকে কারাগারে পাঠান।

২০১৮ সালের মে মাসে সদর থানায় দায়েরকৃত একটি নাশকতার মামলায় সাখাওয়াতকে প্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতে রিমান্ডের আবেদন বাতিল ও সাখাওয়াত হোসেন খানের জামিন আবেদন শুনানিতে সাখাওয়াত হোসেন খান নিজেও আদালতের কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন।

ওইদিন আদালত সূত্রে, ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে ওই শুনানি অনুুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেন এবং প্রয়োজনে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর যেকোন একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছিলেন।

মামলা সূত্রে জানাগেছে, দেড় বছর পূর্বে ২০১৮ সালের ১ মে মাসের ঘটনায় দায়েরকৃত একটি নাশকতার মামলায় সাখাওয়াত হোসেন খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় সাখাওয়াত হোসেন খান অজাহারভুক্ত আসামি নন। মামলায় অন্যান্য আসামিদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুুলিশ।

শুনানিতে সাখাওয়াত হোসেন খান কাঠগড়ায় দাড়িয়ে আদালতকে বলেছিলেন, প্রায় দেড় বছর পূর্বের একটি মামলায় আমাকে সন্দিগ্ধ অজ্ঞাতানামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই মামলায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই।

মামলায় তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে দাবি করে সাখাওয়াত আদালতকে বলেছিলেন, ওই মামলা দায়েরের পর আমাকে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার করা হলে আমি ৫৯ দিন কারাগারেও ছিলাম। এতদিন আমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো না! আমি একজন ছোট আইনজীবী হিসেবে নিয়মিত আইন পেশা পরিচালনা করে আসছি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলাম। আমি এতটা অপরিচিত ব্যক্তি নই যে আমাকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হবে। আমার সম্পৃক্ততা থাকলে আমাকে ওইসময় নামীয় আসামি করা হতো।

সাখাওয়াত আদালতকে আরও বলেন, আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস পালন করতে গেলে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আমাকে আসামি করা হয়। মামলায় আমি উচ্চ আদালত থেকে ১৮ ডিসেম্বর বুুধবার জামিন লাভ করেছি। রাতেই পুলিশ আমার বাসায় যায়। আমি বলি কেন আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন? জানতে চাইলে পুুলিশ বলে আপনার বিরুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর মামলা হয়েছে। তখন আমি বলেছি এই মামলায় আমি জামিনে রয়েছি। তখন পুলিশ বলে আপনি থানায় এসে ওসিকে এটাই বলবেন আপনি জামিনে আছেন। আমি তখন উচ্চ আদালতের জামিনের কাগজপত্র দেখাতে চাইলেও পুলিশ দেখতে চায়নি। আমাকে থানায় নিয়ে গিয়ে যখন দেখতে পেলো আমি ওই মামলায় জামিনে রয়েছি। তখন আমাকে দেড় বছরের আগের মামলায় অজ্ঞাতনামা সন্দিগ্ধ হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলো।

সাখাওয়াতের পক্ষে শুনানিতে অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া আদালতকে বলেন, সাখাওয়াত হোসেন খানকে শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় তাকে সারাদেশের মানুুষ চিনে। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির দুইবার জয়েন্ট সেক্রেটারি, দুইবার সেক্রেটারি, দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় তিনি আইনজীবী ছিলেন। তাকে সারাদেশের মানুষ চিনেন। তিনি অজ্ঞাত আসামি হতে পারেনা। তাছাড়া ওই মামলার পরে তিনি ৫৯দিন কারাগারে ছিলেন। তখন শ্যান এরেস্ট দেখানো হয়নি। সুতরাং তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই মামলায় তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

অন্যদিকে জানাগেছে, মহান বিজয় দিবসে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন ও এসআই ছাইফুল ইসলামকে পৃথক দুটি স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। ওই সময় এই দুই পুুলিশ কর্মকর্তা বেদম মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় ছাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ১৯ জন নেতার নাম উল্ল্যেখ সহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। যেখানে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ও মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল সহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ। তাদের ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তাদের প্রত্যেকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এ মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ, মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুল ইসলাম ছক্কু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আকরাম প্রধান, মিছিলকারী মঞ্জু ও মাহমুদুল হাসান লিংকনকে আসামি করা হয়। এছাড়াও মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ঘটনার দিন আটককৃত বিএনপির ৪ কর্মীকেও এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

মামলার পর ১৮ ডিসেম্বর বুধবার মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সহ নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ৯ জন নেতা জামিন পেয়েছেন।

বুধবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ আব্দুল হাফিজ ও বিচারপতি ইজারুল আকন্দের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিএনপির ৯ জন নেতাকে আগামী জামিন দেন। জামিনপ্রাপ্ত বিএনপির এসব নেতাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়- বিজয় দিবসের র‌্যালী থেকে পুলিশের উপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুুলিশের অস্ত্র-গুলি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, যানবাহন চলাচলে বাধা, রেল লাইনের ক্ষতির চেষ্টা, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা সহ নানা অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর সোমবার রাতেই সদর মডেল থানা পুুলিশের এসআই ছাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামুন মাহামুদ ও এটিএম কামাল সহ আগের দিন আটককৃত বিএনপি কর্মী নুর এলাহী সোহাগ, মো.স্বপন মিয়া, কামরুল হাসান ও মামুনকে ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড শুনানি আগামী ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ধার্য্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠান।

মামলায় বাদী এসআই ছাইফুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে বেআইনিভাবে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা রাস্তার যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়ে ভাংচুর করছে এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আসামিরা পুলিশের সাথে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন। এ সময় আমাদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ সহ সরকারি অস্ত্র ও গুলি ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা করে। এসময় আমি সহ পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত প্রাপ্ত হই। পরে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় চারজনকে আটক সহ ঘটনাস্থলে থেকে বাঁশের লাঠি, ভাঙা ইটের টুকরো জব্দ করা হয়।