সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে সরকারী প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাসের কাউন্টার বসাতে দুই দফায় হামলা মারধর ও ভাংচুর চালিয়েছে পরিবহন সন্ত্রাসীরা। বাসের কাউন্টার বসাতেই দিচ্ছেনা তারা। এ বিষয়ে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের কাউন্টার বসতে না দেয়ায় দুষ্কৃতিকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি কিছু দুষ্কৃতিকারী বিআরটিসি বাস সার্ভিসের কাউন্টারগুলো বসতে দিচ্ছেনা। আমি বলবো আজ থেকেই এই কাউন্টার বসবে। আমরা পুলিশ এব্যাপারে সহযোগিতা করবো।’
২৫ মে শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম দেওভোগ ভূইয়ারবাগ এলাকার বিদ্যানিকেতন হাইস্কুল আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের এমন হুশিয়ারী দিয়ৈ এসব কথা বলেন এসপি হারুন। ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ূন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা বিআরটিসি বাস সার্ভিসটি আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রী সম্প্রতি উদ্বোধন করেছেন। বিআরটিসি এর এই বাস সার্ভিস সরকারি সম্পদ। এই বাস সার্ভিসের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জবাসী উপকৃত হবে। এটা বন্ধ করা যাবে না। তাই এ কাউন্টার আজ থেকে বসবে। পুলিশ সদস্যরা এব্যাপারে সহযোগিতা করবে।’
নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা পুলিশ সদস্যরা কাজ করছি। আমরা মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, তেলচোর, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করছি। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আমাদের এব্যাপারে সহযোগিতা করবেন আমরা সেটিই প্রত্যাশা করি। জনগণ যাতে সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারে সেটি আমরা নিশ্চিত করবো। রাস্তার উপর ফুটপাতগুলো আমাদের পরিস্কার করতে হবে।
এরআগে পুলিশ সুপার বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের উত্তর ভবনের ৫ম তলার ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে স্কুল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। প্রতি বছরের মতো এবছরও বিদ্যালয়ের ৬০ জন শিক্ষার্থীকে কোরআন শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া হয়।
বিদ্যানিকেতন হাইস্কুল ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, সুবাস চন্দ্র দাস, মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, সদর মডেল থানা পুুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অ্যাডভোকেট নবী হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন সোহেল এবং প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ২৫ মে সকালে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বিআরটিসির কাউন্টার ভাংচুরের অভিযোগ ওঠেছে। এর আগেও ভাংচুর ও পরিবহন কর্মচারীদের মারধর করা হয়। কিছু পরিবহন শ্রমিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠেছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ বলছেন-একটি মহল একচেটিয়া পরিবহন ব্যবসায়ী চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিআরটিসি পরিবহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এর আগে ওই প্রভাবশালীদের বাধার কারনেই দুই বছর বিআরটিসি নারায়ণগঞ্জে বন্ধ ছিল।
গত ২২ মে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের ২নং গেটের কাউন্টার থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে বিআরটিসি এসি বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন। শনিবার নারায়ণগঞ্জে কাউন্টার বসাতে গেলে কাউন্টার ভাংচুর ও হামলা চালানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের বিআরটিসি ডিপো ম্যানেজার কামরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জের একটি অনলাইনে অভিযোগ করেন, ‘শনিবার সকালে কয়েক দফা কাউন্টার বসানোর চেষ্টা করা হলেও বাস ও মিনিবাস পরিবহন মালিক সমিতির লোকজন এসে বাধা দেয়। জিলানী ও দিদার সহ আরো কয়েকজন এসে অস্থায়ী কাউন্টারের ছাতা উপড়ে ফেলে ও টেবিল ভাঙচুর করে। এছাড়া কাউন্টারে থাকা টিকেট বিক্রির লোকজনকেও মারধর করে। এর আগে শুক্রবারও একই পন্থায় কয়েক দফা বাধা দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জবাসী এবং প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এ রুটে বাস চালানো সহজ নয়।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জ বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘চাষাঢ়ায় আগে বিআরটিসির যে স্থানে কাউন্টার ছিল এবার সেখানে তারা বসায়নি বরং তারা এমন এক স্থানে কাউন্টার রেখে বাস পার্কিং করছিল যাতে যানজট সৃষ্টি ও অন্য বাসগুলোর সমস্যা হচ্ছিল। সে কারণে আমাদের সকল পরিবহনের লোকজন গিয়ে বিআরটিসির লোকজনদের অনুরোধ করেছে যেন তাদের আগের কাউন্টারের স্থলেই নতুন করে কাউন্টার বসানো হউক। কিন্তু সেটা করা হয়নি।’
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ আহমেদ বলেন, ‘বিআরটিসি প্রথমে যে স্থানে কাউন্টার বসানো চেয়েছিল সেখানে বসালে যানজট হতো। পরে তাদের আমরা অন্যত্র কাউন্টার বসানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম। নতুন করে মারধর ও বা উচ্ছেদে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি।’