মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ থেকে:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপারা ইউনিয়নের চনপাড়া পূণবার্সন কেন্দ্রের ১নং মহল্লায় থাকেন জীবন নেছা। জাতীয় পরিচয়পত্র (৬৭১৬৮৫৫৮২৭৬৪২) মতে ৭৮ বছর বয়সী এই নারী। তার স্বামী হারিয়েছেন ১৫ বছর আগে। এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার তার। অভাব আর হাহাকারে দিন কাটানো জীবন নেছা নামেই যেন জীবন বাঁচিয়ে রেখেছেন। বিধি মোতাবেক বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু রাজনীতি বুঝেন না কিংবা রাজনীতি ওয়ার্ড জনপ্রতিনিধিকে খুশি করার সামর্থ নেই তার। তাই ভাগ্যে জুটেনি বিধবা ভাতা।
এতদিন কোনমতে জীবন পার করলেও স্বামী আব্দুল করিম মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে হাল ধরার কথা। কিন্তু মানষিক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি সন্তান সেই একমাত্র ছেলেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে তা জানা নেই দীর্ঘ ৮ বছর ধরে। তাই মানুষের বাড়িতে কাজের বিনিময় দুমুঠো আহার খেয়ে কোনমতে জীবন পার করছেন জীবন নেছা। এতদিনে তার বয়স ৭৮ ছুঁইয়েছে। বয়স ভারে আগের মত কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ হয়ে পড়েছে কষ্টসাধ্য।
কিন্তু পুরুষদের ৬৫ আর নারীদের ৬২ বছর বয়স হলে বয়স্ক ভাতা পাবার কথা। রূপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৫ হাজারের অধিক নারী পুরুষ পাচ্ছেন সেসব বয়স্কভাতা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মদদপুষ্ট, সমর্থক ও আতœীয় স্বজন না হলে দেয়া হয়না বয়স্কভাতার কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। উপজেলা প্রশাসনের লোকজনও তা সঠিকভাবে তদারিক না করায় প্রকৃত গরীব ও অসহায়রা বঞ্চিত থাকেন সরকারের এ সেবা থেকে। ভেস্তে যায় সোনার বাংলা স্বপ্ন দেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন।
তবে জীবন নেছাও ধর্ণা দিয়েছিলেন স্থানীয় মহিলালীগ নেত্রী মনোয়ারা মনুর কাছে। তার দাবীকৃত ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় বয়স্কভাতার কার্ড এনে দিতে পারেনি। স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার কুট্টির কাছেও বয়স্কভাতা চাইতে গিয়েছিলেন একাধিকবার। সেখানেও কোন সুরাহা পাননি জীবন নেছা। স্থানীয়দের প্রশ্ন সরকারের সুবিধাভোগী যারা হওয়ার কথা তারা কেন বঞ্চিত হচ্ছে? অভিযুক্ত বিউটি আক্তার কুট্টি জানান, জীবন নেছা আমার কাছে সরাসরি আসে নাই তাই বিষয়টা জানতাম না।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোলাইমান হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সভাপতি ও ইউপি সদস্যদের বাছাই কমিটির সদস্য করা হয়। তাদের বাছাইকৃত তালিকার পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বয়স্কভাতার কার্ড দেয়া হয়। কিন্তু চনপাড়ার জীবন নেছাকে কোন তালিকায় রাখা হয়নি। তাই তিনি কার্ড পায়নি। তবে এখন ভেবে দেখবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, জীবন নেছার মত আরো যারা প্রকৃত হতদরিদ্ররা কার্ড পাচ্ছেন না তাদের শীঘ্রই সুবিধা ভোগের আওতায় আনা হবে।

