বিএনপির জানাযা বাকি, বলেছিলেন এই কাজী মনির

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

‘বিএনপি মরে গেছে, এখন জানাযা বাকি’ এমন মন্তব্য করে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে তোলপাড় করে দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনিত প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান মনির। অথচ সেই কাজী মনিরের হাতেই ওঠলো দলের প্রতীক। কাজী মনিরের এমন মন্তব্যে প্রতিবাদ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে তার পদত্যাগ করেছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কয়েক মাস পর নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় জেলা ও শহর বিএনপির যৌথ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের নারায়ণগঞ্জে সমাবেশে যোগদান উপলক্ষ্যে ওই প্রস্তুতি সভাটি করা হয়।
ওই সভার শুরুর পূর্বে বিএনপি নেতারা প্রথমে তৈমূর আলম খন্দকারের বাড়ির সামনে বাগানে জড়ো হন। ওই সময় স্থানীয় সাংবাদিক ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সামনে কাজী মনির বলেছিলেন, বিএনপি তো মরে গেছে, এখন জানাযা বাকি।’ এমন মন্তব্য পরদিন নারায়ণগঞ্জের একটি জনপ্রিয় অনলাইনে প্রকাশিত হয়। যার পরদিন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়ার নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে কাজী মনিরের পদত্যাগ দাবি করেন। যদিও কাজী মনিরের ওই মন্তব্যের বিষয়ে শহর বিএনপির তৎকালীন সেক্রেটারি এটিএম কামাল বলেছিলেন, ‘প্রস্তুতি সভায় কাজী মনির এমন কোন মন্তব্য করেননি।’ তবে কাজী মনির প্রস্তুতি সভার পূর্বে এমন মন্তব্য করেন।

২০১১ সালে বিএনপির ডাকা হরতালে রূপগঞ্জে কাজী মনিরের ফ্যাক্টরীতে হামলা চালায় স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কাজী মনির আপাততমস্তক একজন ব্যবসায়ী। তার কাছে রাজনীতি কিছু না। তাই তিনি তার দলের ডাকা হরতালে তার ফ্যাক্টরী খোলা রাখতেন। যে কারন যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাবি করেছিলেন, তাদের দলের ডাকা হরতালে বিএনপি নেতা হয়ে তিনি তার ফ্যাক্টরী কেন খোলা রাখলো? এমনও অভিযোগ করেন, কাজী মনিরের ফ্যাক্টরীতে হরতালে শ্রমিকেরা উপস্থিত না হলে বেতনের দিগুন কেটে নিতেন। তবে ওই ঘটনায় জেলা বিএনপির নেতারা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলেন। অথচ সেই কাজী মনির এখন বিএনপির প্রার্থী!

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সারাদেশে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় প্রতিবাদ সভা করে ব্যবসায়ীদের বৃহত সংগঠন বিজেএমইএ। সেই সভায় বেগম খালেদা জিয়াকে আগুন সন্ত্রাসী হিসেবে সহ নানা ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীরা। সেই সভায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে উপস্থিত ছিলেন কাজী মনির। এ খবরও স্থানীয় মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়।

২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলনে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন কাজী মনির। কমিটিতে সভাপতি হন তৈমূর আলম। সেক্রেটারি হয়েও বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম তো দুরের কথা দলের মানবনন্ধনেও উপস্থিত ছিলেন না কাজী মনির। জেলা বিএনপির রাজনীতি একাই সামাল দিয়েছিলেন তৈমূর। কিন্তু গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি কাজী মনিরকে জেলা বিএনপির সভাপতি করা হয়। বেশকটি মামলায় কাজী মনির আসামী হলেও তাকে রহস্যজনক কারনে জেল খাটতে হয়নি।

এ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়া দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসলেও তলে তলে কাজটি করেছেন কাজী মনির। দুজনকে পিছনে ফেলে মনোনয়নের কাগজটা ভাগিয়ে এনেছেন কাজী মনির। কিন্তু রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজী মনিরের সম্পর্ক নেই। কারন তিনি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিস্যূ দিয়ে মুছেন। অনেক সময় তিনি রাস্তায় বের হলে হাতে টিস্যূ বা রুমাল হাতে রাখেন। তবে কাজী মনিরের অনুগামীরা দাবি করেন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য থাকায় তাকে সচ্ছভাবে চলাফেলা করতে হয়। এমনকি তাকে দেশের বাহিরের বোতলজাতকৃত পানি পান করতে হয়। যে এ বোতল পানির মূল্য ১৬শ টাকা। এমন নেতাকে নিয়ে এখন খেটে খাওয়া মানুষের কোন আগ্রহ নেই।