যে কারনে রাজনীতির মাঠ ছাড়ছেনা সোনারগাঁয়ের চার নেতা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর কমিটির নেতৃত্ব থেকে যখন ছিটকে গেছেন সোনারগাঁয়ের শীর্ষ নেতারা তখন জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতির মাঠে সচল রয়েছেন চার নেতা। কমিটি গঠনের পর কমিটির বিরোধীতা করে রাজনীতির মাঠ আকড়ে রেখেছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সসম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল।

এক সময় এসব নেতাদের মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্ক থাকলেও উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি হারানোর পর একজোট হয়েছেন। আহ্বায়ক কমিটির বিরোধী শ্লোগান তুলে ইতিমধ্যে বেশকটি শোডাউনও দিয়েছেন। এক সময় আওয়ামীলীগের নেতাদের তেমন খোজ খবর না রাখলেও এখন তারা নেতাকর্মীদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সোনারগাঁও পৌর আওয়ামীলীগের সর্বশেষ কত বছর আগে সম্মেলন কিংবা বর্ধিত সভা হয়েছিল তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও এবার সেই পৌর আওয়ামীলীগের কর্মী সংগ্রহে ফরম বিতরণে নেমেছেন আওয়ামীলীগের ওই চার নেতা।

জানাগেছে, ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সোনারগাঁ উপজেলা পৌরসভা আওয়ামীলীগের আয়োজনে সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম।

প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচ এম মাসুদ দুলাল।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বি, সনমান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন সাবু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাসেল মাহামুদ, পৌরসভা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গাজী আমজাদ হোসেন প্রমূখ।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, তারা ফরম বিতরন করে কর্মী সংগ্রহই করছে। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। দলের কর্মী বাড়বে। কাদা ছোড়াছুড়ি হয় এমন কোন মন্তব্য করতে রাজি নই।

জানাগেছে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সেক্রেটারি আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। এই কমিটি ঘোষণার পর বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা এএইচএম মাসুদ দুলাল। এর আগে তারা বিভক্ত রাজনীতিতে থাকলেও ওই কমিটি গঠনের পর তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই কমিটি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে এক সাথে রাজনীতি করার অঙ্গীকার করেছেন।

গত ২৪ আগস্ট শনিবার বিকেলে উপজেলার মোগড়াপাড়া এলাকায় ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণ উপলক্ষে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে উদ্যোগে ওইসব নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শোক সভা করেন।

শোকসভায় উপরোক্ত চার নেতাই স্থানীয় এমপি, স্থানীয় প্রশাসন ও জেলার শীর্ষ কজন নেতাকে ইঙ্গিত করে নানা ধরণের বক্তব্য রেখেছেন। একই সঙ্গে মোশারফ হোসেন বলেছেন, আহ্বায়ক কমিটির যাদেরকেই দেখা যাবে তাদের কোমর ভেঙ্গে দেয়া হবে। নেতাকর্মীদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন- তাদের কোমর ভেঙ্গে দেয়া হোক যাতে তাদেরকে এ্যাম্বুলেসে করে হাসপাতালে নেয়া হয়।

ওই সভায় সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর প্রশাসনকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সমন্বয়নে উপজেলার উন্নয়ন চলবে। সোনারগাঁও কোন প্রেতাত্মার হুকুমে চলবে না।

একইভাবে আহ্বায়ক কমিটিকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে মাহফুজুর রহমান কালাম বলেছেন, ১৯৭৫ সালের আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল করে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা করেছিলো। তখন অনেক রাজাকার, আলবদররা লেবাস পাল্টে বাকশালে ঢুকার চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমানও সেদিন বাকশালে ঢুকার চেষ্টা করেছিলো। বাকশালে ঢুকে তারা যেভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলো, আজকে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগেও একইভাবে রাজাকার পরিবারের সন্তানেরা কৌশলে ঘাপটি মেরে আওয়ামীলীগের ঢুকে চক্রান্ত করে। আজকে তারা আওয়ামীলীগ করতে চায়। আওয়ামী লীগকে তারা ওরস্যালাইন বানাতে চায়। সোনারগাঁ আওয়ামী লীগকে তারা বানাতে চায় ওরকম। তারা এক বস্তা টাকা, এক মগ রাজাকার, এক চিমটি চাপা দিয়ে ঝুকি দিয়ে হইয়া যায় আওয়ামী লীগ। সেই আওয়ামী লীগ করতে বলে এখানকার প্রকৃত আওয়ামী লীগ কর্মীদের। সেই আওয়ামীলীগ সোনারগাঁয়ে কখনোই হবেনা। আজ থেকেই আমাদের প্রস্তুতি। আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে ১ সেপ্টেম্বর থেকে যেখানেই ওরস্যালাইন মার্কা আওয়ামীলীগ পাওয়া যাবে সেখানেই তাদের প্রতিহত করা হবে।

এ ছাড়াও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম মাসুদ দুলাল বলেছেন, সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের অনৈক্যের কারনে কুচক্রি মহল ছিনিমিলি খেলেছে। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্তি করেছে। এই ঐক্যে আগামীতে প্রমানিত হবে সোনারগাঁয়ে রাজাকাররা থাকবে কি, থাকবে না। তবে তিনি কাদেরকে রাজাকার বলেছেন সেটা পরিস্কার করেননি।

অনুষ্ঠানটি শোক সভার হলেও এসব নেতাদের ভাষণে ছিল বিদ্রোহ। উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ। একই সঙ্গে যারা ওই কমিটির পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন তাদের প্রতিও ছিল কঠোর হুশিয়ারী। শহীদ ও নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশের চেয়ে এসব নেতাদের ভবিষৎ রাজনীতি টিকিয়ে রাখতেই ছিল তাদের নেতাকর্মীদের প্রতি নানা বার্তা। সেই সঙ্গে আহ্বায়ক কমিটিকে অমান্য করেই উপজেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে এসব নেতারা ওই কর্মসূচিটি পালন করেছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে শোকসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল, কেন্দ্রীয় মহিলালীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সেলিনা আক্তার প্রমূখ।

অন্যদিকে জানাগেছে, গত ১৫ জুলাই সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি নিয়ে বেশ স্বস্থিতে রয়েছেন স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাও। তার শক্ত প্রতিদ্বন্ধি কায়সার হাসনাত ও কালাম পড়েছেন বেশ বেকায়দায়। ফলে এমপি খোকার অবস্থান আরো পাকাপোক্ত হতে যাচ্ছে সোনারগাঁয়ে।

কমিটিতে সদস্য পদে রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবু।