ব্যর্থতা বিতর্ক নিয়ে শংকর সুজনের বিদায়, এবার ঐক্যবদ্ধ পূজা পরিষদের যাত্রা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

জমকালো আয়োজনে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপণ পরিষদের নতুন কমিটি। বিদায়ী জেলা কমিটির ব্যর্থ সভাপতি সেক্রেটারী শংকর সাহা ও সুজন সাহাকে এবার ছুড়ে ফেলেছে তৃণমূলের বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিনের ক্ষেভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন তারা এবারের সম্মেলনে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন দীপক কুমার সাহা এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে শিখন সরকার শিপনকে। আর মহানগর কমিটির সভাপতি সেক্রেটারী হয়েছেন যথাক্রমে অরুন কুমার দাস ও উত্তম কুমার সাহা। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে আয়োজন করা হয় জেলা ও মহানগরের সম্মেলন।

যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সহ তৃণমূলের কয়েক হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবন্দৃ। সকলের সমর্থনেই এবং মতামতের ভিত্তিতে ঘোষিত এই কমিটি গঠনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

সূত্রে জানাগেছে, ২০১৪ সালে গঠন করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপণ পরিষদের কমিটি। শংকর সাহাকে সভাপতি আর সুজন সাহাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি এবং দিপক সাহাকে সভাপতি আর শিখন সরকার শিপনকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর পূজা উদযাপণ পরিষদের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পরেন জেলা কমিটির নেতারা। বিশেষ করে জেলার সভাপতি শংকর সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমতে থাকে অবহেলিত হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পরে শংকর সাহা এই পদ পদবী ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করতে থাকেন। বিভিন্ন অসহায় হিন্দু নেতাকর্মীদের বিষয় সম্পত্তি দখল ও মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে শংকর সাহার বিরুদ্ধে।

তাছাড়া জেলা কমিটির আওতাধীণ বিভিন্ন থানা ও উপজেলা কমিটির নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ খবর নেননি শংকর সাহা। বিভিন্ন পূজা পার্বণ বা উৎসবে সাহায্য সহযোগিতার বিন্দু মাত্র পাওয়া যায়নি শংকর সাহার কাছ থেকে। হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজায় অস্বচ্ছল মন্ডপগুলোর দেখভাল করার কথা থাকলেও জেলা কমিটি তা কখনো করেনি। বরং মহানগর কমিটি দায়িত্ব নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমানের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে এসব মন্ডপগুলোতে পূজার আয়োজন করে আসছে। ফলে জেলা কমিটির প্রতি বিক্ষুব্দ হয়ে উঠে পূজা পরিষদের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের অন্তর্গত বিভিন্ন থানা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ বর্তমান জেলা কমিটির নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, জেলা কমিটির সভাপতি শংকর কুমার ও সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা বিগত সময়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ নেননি। এমনকি বিপদ আপদেও তাদের কাউকে পাশে পাওয়া যায়নি।

এ সকল অযোগ্য নেতাদের দিয়ে কখনো পূজা পরিষদের মত গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন চলতে পারে না। আমরা জেলা কমিটির পরিবর্তন চাই। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃনমুল নেতাকর্মীদের পছন্দের নেতাদের জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দেখতে চাই।

অন্যদিকে সভাপতি দিপক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনের নেতৃত্বে বিদায়ী মহানগর পূজা উদযাপণ পরিষদের কর্মকান্ডে আশ্বস্ত ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়। সংগঠনের সভাপতি দিপক সাহা সর্বক্ষণ তৃণমূলের যে কোন প্রয়োজনে নিজ অর্থায়ণে সহযোগিতার হাত বাড়য়ে দেন। তাছাড়া দূর্গোৎসবে নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মহানগরের প্রতিটি মন্ডপে অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকেন তিনি। এমনকি জেলা কমিটির অন্তর্গত অনেক মন্দিরেও দিপক সাহার সাহায্য পৌছে যায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কখনো কোন প্রয়োজনে দিপক সাহার কাছ থেকে খালি হাতে ফেরত যায়নি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করে তৃণমূল হিন্দু নেতৃবৃন্দ। হিন্দু সম্প্রদায়ের যে কোন প্রয়োজনে তাৎক্ষনিক ছুটে যান শিখন সরকার। তাছাড়া মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও জেলার সর্বস্তরে অবহেলিত হিন্দু নেতৃবৃন্দের সুখ দু:খে পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সার্ব্বজনিন নেতায় পরিনত হয়েছেন শিখন সরকার শিপন। এসব কারনে এই নতুন কমিটির উপর ভরসা রাখছেন হিন্দু সম্প্রদায়।