চট্টগ্রাম থেকে র‌্যাব-১১ এর অভিযানে তিন জঙ্গী গ্রেপ্তার

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েটিফোর ডটকম:

চট্টগ্রাম জেলার বন্দর থানার হালিশহর এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির ৩ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র‌্যাব-১১)। তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ সহ বিপুুল পরিমান উদ্রবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়। ১২ জুলাই শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর অপারেশন অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুরী।

গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গী সদস্যরা হলো- আশফাক উর রহমান অয়ন ওরফে আরিফ ওরফে অনিক(২৬), রনি আহাম্মেদ ওরফে রনি (৩১) ও রিপন মন্ডল ওরফে রিপন।

তিনি জানান, র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল গত ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে সিএমপি চট্টগ্রাম বন্দর থানার হালিশহর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির এই ৩ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই, উগ্রবাদী লিফলেট ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও জানান, মোঃ আশফাক-উর-রহমান অয়ন ওরফে আরিফ ওরফে অনিকের বাড়ী নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন নরোত্তম এলাকায়। সে ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল হতে এসএসসি (বিজ্ঞান শাখা) ও ২০১১ সালে গর্ভ সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম হতে এইচএসসি পাশ করে এবং ২০১৬ সালে হয়রত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ¡বিদ্যালয়, সিলেট হতে অনার্স (কম্পিউটার সায়েন্স) সম্পন্ন করে।

সর্বপ্রথম ২০১৪ সালে মোল্লা ইব্রাহীমের বক্তব্য শুনে তার মাঝে উগ্রবাদী চেতনা জাগ্রত হয় এবং মোল্লা ইব্রাহীমের মাধ্যমে বাংলাদেশী জিহাদি তৎপরতা ও আল কায়দা সম্পর্কে ধারণা নেয়। পরবর্তীতে সিলেটে মোল্লা ইব্রাহীমের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ অনুসারীর মাধ্যমে মোঃ আশফাক-উর-রহমান অয়ন ওরফে আরিফ ওরফে অনিক আনসার-আল-ইসলামের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ২০১৫ সালের দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের সামরিক শাখার আইটি বিভাগের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়। একই বছর সে ঢাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের একটি ১২ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে গেরিলা যুদ্ধ সম্পর্কে তাত্ত্বিক ধারণা নেয়।
সেখানে তার সাথে মেজর জিয়ার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয়। ২০১৬ সালে সিলেট থেকে ঢাকায় এসে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের মিডিয়া উইং এর দায়িত্ব পালন করে। মোঃ আশফাক-উর-রহমান অয়ন ওরফে আরিফ ওরফে অনিক ২০১৭ সালে মে মাসে শুরুতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

এছাড়াও ২০১৭ সালের শেষের দিকে জামিনে এসে পুণরায় জঙ্গী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। ২টি নিষিদ্ধ জঙ্গী ও উগ্রবাদী সংগঠন যথাক্রমে আনসার-আল-ইসলাম ও জামাআতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর কার্যক্রম ও আদর্শগত অভিন্নতা থাকায়, নিজের পরিচয় উৎঘাটিত হাওয়ায় এবং সাংগঠনিক বর্মকান্ডের সুবিধার্থে জামাআতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) তে যোগদানপূর্বক পূর্বের ন্যায় সামরিক শাখার আইটি বিভাগের শীর্ষ নেতা হিসেবে নিযুক্ত হয়ে জঙ্গী তৎপরতা অব্যাহত রাখে।

র‌্যাব আরও জানায়, মোঃ রনি আহম্মেদ ওরফে রনির বাড়ী সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানাধীন রুদ্রপুর এলাকায় এবং মোঃ রিপন মন্ডল ওরফে রিপনের বাড়ী রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানাধীন কৃষ্টপুর এলাকায়। তারা দুজনই দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের ইপিজেডের দুটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরী করে। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামাআতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর সক্রিয় সদস্য মেহেদী হাসান ও আকবর হোসেন ওরফে সুমনের মাধ্যমে তারা উভয়ই উগ্রবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জেএমবিতে যোগদান করে এবং জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে। মোঃ রনি আহম্মেদ ওরফে রনি চাকুরীর পাশাপাশি জেএমবির সাংগঠনিক চালানোর সুবিধার্থে ছদ্মবেশে রাতে রিক্সা চালাতো।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মোঃ আশফাক-উর-রহমান অয়ন ওরফে আরিফ ওরফে অনিক, মোঃ রনি আহম্মেদ ওরফে রনি ও মোঃ রিপন মন্ডল ওরফে রিপন র‌্যাব-১১ কর্তৃক দায়েরকৃত সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী (জঙ্গী) দুটি পৃথক মামলার পলাতক আসামি। গোপন সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১১ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল বৃহস্পতিবার রাতে সিএমপি চট্টগ্রাম বন্দর থানার হালিশহর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ গোপনে সংগঠিত হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং নাশকতামূলক কর্মকান্ড করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।