ধর্ষণ প্রতিরোধে যা করণীয়

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম

সামাজিক আইন ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে নারী পুরুষের যে কেউ জোরপূর্বক যৌনাচারে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ। এ ধরণের কর্মে লিপ্ত হওয়ার নাম ধর্ষণ। প্রচলিত আইনে এ ধরণের প্রমাণিত অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড সর্বশেষ মৃত্যুদন্ড হওয়ার কথা রয়েছে। মৃত্যুদন্ডের বিধান বাস্তবায়নের দাবী সময়ের তালে জরুরি হয়ে পড়েছে। কারন, সমাজের আনাচে কানাচে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। কোথাও নিরাপদ নয় নারীরা।

এমনকি পুরুষরাও নারীদের দ্বারা যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে। তবে নারীরাই বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। শিশু, যুবা, বৃদ্ধা কেউ বাদ যাচ্ছে না এ ধরণের ভয়ানক বিপদ থেকে। বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না। তাই বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। সমাজের প্রতিটা স্তরে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে নানা ভাবনাও কাজে আসছে না। তবে ধর্ষণ রোধে নিন্মোক্ত পদক্ষেপ নিলে হয়তোবা কমে আসবে এ ধরণের গুরুতর সমস্যা।

আজকাল মসজিদের ইমাম দ্বারা স্থানীয় নারীদের যৌন হয়রানী অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ মসজিদের ইমামরা সল্প বেতনে কাজ করে তাদের স্ত্রী সন্তানদের কাছে রাখতে পারেন না। কিংবা সামাজিকভাবে সেই ব্যবস্থা থাকে না। তাই ইমামদের পরিবারসহ সমাজে রাখার ব্যবস্থা করা হলে অসাধু ইমামরা এমন অপরাধে জড়াবে না। এতে সমাজের কোন নারী তার কু-নজরে পড়তে পারবে না।

তাছাড়া অবিবাহিত ইমামদের বিষয়ে একটু সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সহকারী শিক্ষক, পুলিশের কনস্টেবল ও সরকারী বেসরকারী কর্মচারীদের একইভাবে তাদের পরিবার নিয়ে কর্মস্থলে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানদের খাস কামরার প্রবেশ পথে সিসিটিভি সংযুক্ত করতে হবে। প্রতিটি অভিভাবকের উচিত তাদের সন্তানদের উপযুক্ত হলে বিবাহ দেয়া। নয়তো প্রেমের নামে কিংবা অসৎসঙ্গে পড়ে স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে বিপথে পা বাড়াবে।

এছাড়াও পাড়া-মহল্লার অলিতে গলিতে যৌন উত্তেজক টেবলেট ও সিরাপ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। ঔষুধের দোকান থেকে চিকিৎসকের দেয়া প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সমাজের লম্পট চরিত্রের লোকদের চিহ্নিত করে সতর্ক করতে হবে। তাতে কাজ না হলে সামাজিকভাবে প্রতিহত করে কিংবা আইনের আশ্রয় নিতে হবে। তবে ঘটনা ঘটে গেলে দ্রুত বিচার বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ সময় মিডিয়ার ভূমিকা থাকতে হবে শুধুমাত্র ধর্ষকের প্রচার ধর্ষিতার নাম ঠিকানা গোঁপন রেখে। ধর্ষণের জন্য শুধু যে পুরুষরা দায়ী তা নয়। নারীরাও অনেকাংশে দায়ী। তাদের চাল চলনে শালিন পোষাক, মনমানষিকতা কথিত স্টাইল ও সংস্কৃতি অনুসারী চিন্তা বাদ দিয়ে দেশীয় সংস্কৃতি পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে নারীদের বেহাপনার জন্য বাড়ির পুরুষ তথা পিতা, বড় ভাই, স্বামী কিংবা বৈধ অভিভাবকরা জিজ্ঞাসিত হবেন।

আজকাল শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রীরা যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। বাদ যাচ্ছে না ছাত্রীর মায়েরাও। এসব প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠান কমিটিকে জোড় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও এর যাতায়াত স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করলে কমে যাবে বখাটে আড্ডা আর প্রাইভেট বা শ্রেণি কক্ষে এটা স্থাপন করলে অনেক অপরাধ কমে আসবে। শুধু তাই নয়, প্রাইভেট কোচিং শিক্ষকের চরিত্র যাচাই বাচাইও জরুরি।

এদিকে ভুক্তভোগীদের লজ্জা না পেয়ে সাহস করে অভিভাবক,প্রশাসনকে খুলে বলতে হবে। বখাটে ছেলেদের চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। বিদ্যালয়ের পাশে কিংবা হাটবাজারের কম্পিউটারগুলো যেসব পর্ণোভিডিও ছড়ায় তাদের চিহ্নিত করে ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করতে হবে। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের উপযুক্ত বয়সে বিবাহ দেয়া।

এ বয়সে বিবাহ না দিলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের ছাত্রনেতাদের বিবাহ করলে পদ থাকে না এমন জনশ্রুতি রয়েছে। তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে এমন সিদ্ধান্ত থাকলে তা বাতিল করতে হবে। রাজনীতিতে জড়ানো এসব ছাত্রের বয়স বিবাহের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু তাদের নিশ্চিত কর্মস্থল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাবার আশায় অভিভাবকরা তাদের বিবাহ দেন না। ফলে এ বয়সীদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশি কখনো প্রেমের নামে আবার জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণ রয়েছে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নীতি ও নৈতিকতা শিক্ষার উপর জোড় দিতে হবে। কখনোই ধর্মীয় বিষয়কে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে পঠন করে উপযুক্ত ফল পাওয়া সম্ভব না। তাই এ শিক্ষার প্রসার বাড়াতে হবে। তবে ধর্ম কর্ম না মানাদের জন্য প্রয়োজনে মদের বার ও পতিতালয় বৃদ্ধি করতে হবে। সেখানে পতিতা যেমন চিহ্নিত থাকবে খদ্দেরদেরও চিহ্নিত থাকতে হবে। প্রবাসে থাকা শ্রমিকদের স্ত্রীদের বিধবা নারীদের অবশ্যই যৌন লালসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যুবকদের যৌন লালসা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে মুসলিমদের রোযা রাখার পরামর্শ রয়েছে।

সর্বোপরি প্রতিটা মানুষের নিজ বিবেক, মনুষত্ব, সামাজিক দায়বদ্ধতা না থাকলে কোন সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন সচেতন মহল। তাই সরকারের আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার মাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়াও সমাজ বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পরীক্ষিত পরামর্শ বাস্তবায়ন করে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

লেখক: মাহবুব আলম প্রিয়
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট