র‌্যাবের অভিযানে গাজীপুর থেকে ৩২ প্রতারক গ্রেপ্তার

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ব্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১) এর অভিযানে ভয়া এমএলএম কোম্পানীর নামে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় প্রতারকদের কাছ থেকে ৭০জন ভুক্তভোগী প্রতারিত ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাব-১১ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

র‌্যাব জানায়, র‌্যাব-১১, সিপিএসসি এর একটি আভিযানিক দল গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক ভূয়া এমএলএম কোম্পানীতে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় ৭০জন প্রতারিত ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমান নথিপত্র জব্দ করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, অতীতে বিভিন্ন এমএলএল কোম্পানী প্রতারণার মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগণের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে সরকার পরবর্তীতে বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানীর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। তদুপরি বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানী নানা পন্থায় এখনো প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বেকার যুব সমাজকে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

প্রতারিত ও ভূক্তভোগী কয়েক জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতার ভিত্তিতে র‌্যাব-১১, সিপিএসসি এর একটি আভিযানিক দল গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন মধুমিতা রোড হতে ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক এমএলএম কোম্পানীতে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারকচক্রের ৩২ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ নাছির হায়দান খান, পরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেন, পরিচালক/শিক্ষক মোঃ আবু নছর, মার্কেটিং অফিসার মোঃ বাবুল হোসেন, ম্যানেজার মোঃ লুৎফর রহমান, মার্কেটিং মোঃ সেলিম রেজা, প্রশিক্ষক মোঃ জালাল আহম্মদ, অফিস সহকারী মোঃ শাহীন, মোঃ সিরাজ, ডিস্ট্রিবিউটর মোঃ সাজ্জাদ, মোঃ মামুন খন্দকার, মোঃ সাকিল, মোঃ নাজমুল হক, শ্রী পলাশ সরকার, মোঃ মাসুদ রানা, মোঃ তালহা, মোঃ ছাইদুর, মোঃ আঃ রহমান, জেভিয়ার জেংচাম, মোঃ সাকিব, এ্যালবিন, মোঃ রহিম বাদশা, বাপন, মোঃ রুবেল হোসেন, শিপন রায়, মোঃ আমিনুর রহমান, মোঃ তাছলিম উদ্দিন, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, মোঃ শওকত হোসেন, মোঃ আরাফাত, মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং মোঃ নাজমুল হক রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও জব্দকৃত নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, উক্ত ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক ভুয়া এমএলএম কোম্পানী মাসিক ১৬ হাজার ও তদুর্ধ টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি সহ লোভনীয় অফার দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাকুরী প্রত্যাশী বেকার যুবক-যুবতীদের ফাঁদে ফেলে। ভর্তির শুরুতে কোম্পানীর আর্থিক লাভ ও পণ্য বিক্রির কমিশনের আশ্বাসে বাধ্যতামূলক জামানত হিসাবে জন-প্রতি ৫৫ হাজার বা তদুধর্¡ টাকা গ্রহণ করে।

পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের নামে সপ্তাহ খানেক কালক্ষেপণ করে প্রত্যেককে নতুন ২ জন সদস্য সংগ্রহের শর্ত প্রদান করে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করে দিলে সংগৃহীত টাকার সামান্য কমিশন প্রদান করে। নতুন সদস্য দিতে না পারলে কুট-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে খালি ষ্ট্যাম্প ও আপোষনামায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে তাড়িয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে ভাড়াটিয়া লোকজন দ্বারা আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনও করে থাকে।

র‌্যাব জানায়, অভিযানকালে ভুয়া এমএলএম কোম্পানীর সু-সজ্জিত অফিস থেকে প্রতারণার শিকার ৭০জন ভূক্তভোগীদের উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও উক্ত কোম্পানীর অফিস থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪০টি মোবাইল, ১টি কম্পিউটারের মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১টি প্রিন্টার এবং বিপুল পরিমাণ ভুয়া ডকুমেন্ট (ভর্তি ফরম, নিয়ম ও শর্তবলী ফরম, পণ্য ক্রয়ের ভাউচার, আপোষ নামা, অঙ্গীকারনামা, সাপ্তাহিক হিসাব রেজিষ্টার, স্পনসর নোট রেজিষ্টার, টাকা জমার রশিদ, ষ্ট্যাম্প, হাজিরা বই ও পণ্য সরবরাহের চুক্তিপত্র) উদ্ধার করা হয়।