সোনারগাঁয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, পুতে রাখা লাশ উত্তোলন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে সেই লাশ মাটিতে পুতে রেখেছিল তালাকপ্রাপ্ত স্বামী। গত ২১ মে এই ঘটনার পর ৭ জুন সকালে সোনারগাঁয়ের কাচপুর এলাকা থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১)। ৭ জুন শুক্রবার সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দীন।

তিনি জানান, গত ২৩ মে মনোয়ারা বেগম নামের এক মহিলা র‌্যাব-১১ বরাবর একটি অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগে মনোয়ারা বেগম দাবি করেন- তার মেয়ে মিনু আক্তার গত ২১ মে ভোর ৩টা থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি সোনারগাঁ থানায় একটি জিডি করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করেন, ৪ বৎসর পূর্বে জুনায়েদের সাথে কাপড়ের ব্যবসার সূত্র ধরে তার মেয়ে মিনু আক্তারের পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালে মিনু আক্তারের সঙ্গে ভালবাসার সূত্র ধরে জুনায়েদের দ্বিতীয় বিয়ে হয়। মিনু আক্তার জুনায়েদকে বিয়ে করায় উক্ত বিষয় নিয়ে জুনায়েদের সাথে প্রায় ঝগড়া বিবাদ করে মারধর করতো এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি সহ প্রাণ নাশের হুমকি দিতো। এরপর গত বছর জুনায়েদ মিনুকে তালাক দেয়। তালাক দেওয়ার পরেও সে মিনুর সাথে জোরপূর্বক মেলামেশা করতে চাইলে মিনু তা করতে অস্বীকার করতো।

তারই প্রেক্ষিতে গত ২১ মে ভোর ৩টার সময় জুনায়েদ তার মেয়েকে ফোন দিয়ে আমার বাসা থেকে তার ভাড়া করা বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। তারপর থেকে মিনু ফিরে আসেনি। জুনায়েদের বাসায় গিয়ে জানতে চাইলে জুনায়েদের বাসায় যায়নি বলে দাবি করে সে। মনোয়ারা বেগম ফিরে আসার পর জুনায়েত ও তার আগের স্ত্রী বাসা থেকে পালিয়ে যায়।

পরদিন সকালে তাদের বাসায় গেলে বাসায় তালা লাগানো থাকে। তালা ভেঙ্গে বাসা তল্লাশী করে দেখতে পায় ফ্লোরে রক্তে ভরা ও জুনায়েদের রক্তমাখা লুঙ্গি এবং মিনুর রক্তমাখা ওরনা পাওয়া যায়। বাড়ির আশেপাশে খোজাখুজির পর মিনুর মাথার চুল পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাব-১১ এর একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল নিখোঁজ মিনু আক্তারের সন্ধান ও সন্দেহভাজন জুনায়েদকে গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বশেষ ৭ জুন ২০১৯ রাতে সোয়া ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন, চিটাংরোড় এলাকা থেকে জুনায়েদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

আসামি জুুনায়েদ ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর থানার হরিপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ রফিক উদ্দীনের ছেলে। বর্তমানে সে সোনারগাঁয়ের কাচপুর এলাকার জিহাদ খানের বাড়িতে ভাড়া বসবাস করে।

র‌্যাবের অনুসন্ধানে মোঃ জুনায়েদ কাঁচপুরে জিহাদ খানের বাড়ীতে ভাড়াটিয়া হিসেবে সোনারগাঁয়ে থাকে এবং অলিম্পিক কোম্পানীর পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করে। তার প্রথম স্ত্রী রোকিয়াও অলিম্পিক কোম্পানীর পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করে। গত ২০১৬ সালে মিনু আক্তারের সাথে মোঃ জুনায়েদের দ্বিতীয় বিয়ে হয় এবং ২০১৮ সালে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়।

এরপর থেকে জুনায়েদের প্রথম স্ত্রী নাইট ডিউটিতে গেলে জুনায়েদ মিনু আক্তারের সাথে একত্রে রাত কাটাতো। গত ২১ মে রাত ৩টার মোঃ জুনায়েদ মিনু আক্তারকে ফোন দিয়ে তার ভাড়া বাসায় আসতে বলে। এর কিছুক্ষণ পরে মিনু আক্তার তার ভাড়াটিয়া বাসায় আসলে মোঃ জুনায়েদ তাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে মিনু আক্তার ঈদের মধ্যে কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য জুনায়েদের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করলে জুনায়েদ মিনু আক্তারকে চড়-থাপ্পড় দেয় এবং এক পর্যায়ে জুনায়েদ ভোর ৩টা ৪০ মিনিটের সময় ঘরের মধ্যে থাকা একটি বাশের লাঠি দিয়ে মিনু আক্তারকে মাথায় আঘাত করে। তখন মিনু আক্তার ঘরের মেঝেতে পড়ে গেলে জুনায়েদ মিনু আক্তারের বুকের উপরে বসে গলা টিপে শ¡াসরুদ্ধ করে হত্যা করে। হত্যার পর ভোর সোয়া ৪টার দিকে মিনু আক্তারের বুকে রশি বেধে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘর থেকে টানতে টানতে বাড়ীর পাশের পুকুরের কচুরীপানার ভিতরে রেখে দিয়ে জুনায়েদ ঘরে ফিরে আসে।

পরবর্তীতে জুনায়েদ সকালের দিকে তার কর্মস্থলে চলে যায়। ২১ মে রাত ১০টার দিকে বাড়ীর পাশের পুকুরের কচুরীপানা থেকে মিনু আক্তারের মরদেহ উঠিয়ে রশি দিয়ে বেধে পাশের ড্রেজারে বালি ফেলার স্থানে নিয়ে গিয়ে জুনায়েদ বালির গর্ত করে মিনু আক্তারের লাশ গুম করে। পরবর্তীতে মিনুর খোঁজে তার মা জুনায়েদের বাসায় আসলে জুনায়েদ সু-কৌশলে পালিয়ে যায়।

র‌্যাব আরও জানায়- এরই প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত মোঃ জুনায়েদ ও নিখোঁজ মিনু আক্তারের মোবাইল কল লিষ্ট, ঘটনার দিনের গতিবিধি পর্যালোচনা করে দেখা যায় ঐ দিন রাতে তারা কাঁচপুরে জিহাদ খানের বাড়ীতে ভাড়াটিয়া বাসায় অবস্থান করে। ধারণা করা হয় মোঃ জুনায়েদ তার অপকর্ম আড়াল করতে মিনু আক্তারকে হত্যা করে তার লাশ গুম করেছে।

৭ জুন রাতে সোয়া ১২টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন, চিটাগাংরোড় এলাকা থেকে মোঃ জুনায়েদকে গ্রেপ্তার করা হয়। জুনায়েদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক র‌্যাবের আভিযানিক দল স্থানীয় জনসাধারণ, সাংবাদিক ও পুলিশের উপস্থিতিতে তার বাড়ির পাশের ড্রেজার এলাকার মাটিখুঁড়ে সকালে নিহত মিনু আক্তারের লাশ উদ্ধার করে সোনারগাঁ থানা পুলিশের কাছে হস্থান্তর করে।