চাচা ভাতিজার টানাটানিতে আজাদের থাবা

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসন থেকে এবারের নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে লড়াইয়ে নেমেছিলেন এ আসনের সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও তার ভাতিজা মাহমুদুর রহমান সুমন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চাচা ভাতিজার টানাটানিতে ধানের শীষ প্রতীক থাবা দিয়েছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। ফলে বেকায়দায় পড়লো আড়াইহাজারের বিএনপির এই রাজনৈতিক পরিবারটি। মুলত এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর মৃত্যুতে অনেকটা কপাল খুলে যায় নজরুল ইসলাম আজাদের। আর চাচা ভাতিজার বিরোধের সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছেন আজাদ।

এ আসনে আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন নজরুল ইসলাম আজাদ। ৭ ডিসেম্বর শুক্রবার নজরুল ইসলাম আজাদের হাতে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি তুলে দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রাথমিকভাবে আতাউর রহমান আঙ্গুর ও মাহমুদুর রহমান সুমনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তারা বঞ্চিত হয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারের ২টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনটি গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৮জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৪জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৩৪ জন। কেন্দ্রের সংখ্যা ১১৩টি।

এবারের নির্বাচনে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ ১১ জন সম্ভাব্য প্রার্থী এ পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন ক্রয় করেছেন। অনেকেই ফরম পূরণ করে জমাও দিয়েছেন।

এ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন, সাবেক এমপি এমদাদুল হক ভূইয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। কিন্তু মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবু।

অন্যদিকে এ আসন থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও তার ভাতিজা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। প্রাথমিকভাবে এই তিনজনকেই মনোনিত করে বিএনপি।

এ আসনে গত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরু। এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে, ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালে এখানে আতাউর রহমান আঙ্গুর বিএনপি থেকে নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হন। ১/১১ এর সময় আতাউর রহমান আঙ্গুর সংস্কারবাদীদের দলে যোগ দেন। সম্প্রতি আঙ্গুর মুলধারায় ফিরেন। গত ১১ জুলাই বদরুজ্জামান খান খসরুর মৃত্যুর পর তার ছেলে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা মাহমুদুর রহমান সুমনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন। এ উপজেলায় খসরু ছিলেন সভাপতি। তারপর তিনি নির্বাচনে দাড়ানোর ঘোষণা দেন। ইতিমধ্যে মামলায় আসামীও হয়েছেন। মামলা থেকে দুরেই রয়েছেন আঙ্গুর। আঙ্গুরকে একটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ থেকে নিয়ে এসে বিএনপিতে যোগদান করিয়েছিলেন আঙ্গুরের ভাই বদরুজ্জামান খান খসরু। ওই সময় খসরু ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আঙ্গুরের মনোনয়নে পুরো ভুমিকাই রেখেছিলেন খসরু। কিন্তু আঙ্গুর এমপি হওয়ার পর দুই ভাইয়ের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধে উপজেলায় বিএনপির দুটি কার্যালয় রয়েছে। যদিও গত ১২ বছরে কোন কার্যালয়েই একটি কর্মসূচিও পালন করতে পারেনি বিএনপি।

এ আসনে জাতীয়পার্টি থেকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছেন জাতীয় যুবসংহতির কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন। গত বছরের জুলাইয়ে মাসে এখানে জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এক জনসভায় এসে আগামী প্রার্থী হিসেবে লোটনের নাম ঘোষণা করেন এবং লোটনের হাত উচিয়ে এরশাদ ভোট প্রার্থনাও করেছিলেন। কিন্তু লোটনকে জাতীয়পার্টি থেকে মনোনিত করা হয়নি। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বিভাগীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক হাজী নাসির উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুর রহমান ও কৃষক শ্রমিক জনতালীগের আড়াইহাজার থানা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খোকন জসিম মনোনয়ন ক্রয় করেছেন।