সোনারগাঁয়ের অনুগামীদের বিপাকে ফেলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস!

সান নারায়ণগঞ্জ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়ে হয়েছে নানা নাটকীয়তা। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রাথমিকভাবে আজহারুল ইসলাম মান্নান মনোনিত হওয়ার পর মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন অনুগামীরা ঘটিয়েছেন নানা নাটকীয় ঘটনা। মান্নানকে ঠেকাতে গিয়ে বিপদগ্রস্থ হয়েছেন উল্টো গিয়াস অনুগামীরা। কিন্তু শেষতক সোনারগাঁয়ের গিয়াস তার অনুগামীদের হতাশায় ফেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। এরি মাঝে দলের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মান্নানের বিরোধীতা করতে গিয়ে এবং গিয়াসের পক্ষ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন সোনারগাঁয়ের গিয়াস অনুগামী নেতারা। ফলে চরম হতাশায় ভুগছেন গিয়াস অনুগামীরা। তাদের এখন মান্নানের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নাই।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ সালে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ভোট করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনিত হোন মান্নান। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে সোনারগাঁও উপজেলার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ১০টি ওয়ার্ড যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসন হিসেবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম নির্বাচন করে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের কাছে পরাজিত হোন।

এরপর থেকে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না রেজাউল করিম। ১/১১ এর থেকে সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে সক্রিয় আন্দোলন সংগ্রামে থাকেন মান্নান। ওই সময় খন্দকার আবু জাফর ছিলেন সভাপতি ও মান্নান ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। জাফরের ভুমিকাও ছিলো রেজাউল করিমের মতই। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো মাস কয়েক দিন পূর্বে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জে মনোনয়ন টার্গেট করে মাঠে নামেন রেজাউল করিম ও গিয়াসউদ্দীন।

তৎকালীন থানা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহআলম মুকুল গিয়াসকে নিয়ে সোনারগাঁয়ে শোডাউন দিতে থাকেন। কিন্তু নির্বাচনে আবারো সিদ্ধিরগঞ্জ ফতুল্লার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এবং ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় রাজনীতি থেকে আবারো নীরব হয়ে যান রেজাউল করিম ও গিয়াস। আবারো সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে অভিভাবকের মত আগলে রেখে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেন মান্নান।

একই দশা হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনের কয়েক মাস পূর্বে রেজাউল করিম ও গিয়াস সক্রিয় হোন। কিন্তু দুজনই মনোনয়ন না পেলে আবারো রাজনীতি থেকে নীরব হয়ে যান। নির্বাচন শেষে আবারো বিএনপির নেতাকর্মীদের আগলে রেখে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেন মান্নান। নিজের ঘা বাঁচিয়ে রাজনীতি করেছেন আবু জাফরও। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পূর্বের মান্নান ছাড়া বাকিদের সোনারগাঁয়ে দেখা যায়নি। যদিও ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে সোনারগাঁও উপজেলাকে নিয়ে এককভাবে নারায়ণগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসন হিসেবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনকে পূণর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে নির্বাচন কমিশন। প্রথমকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পুরো এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এবং বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নকে সোনারগাঁয়ের সঙ্গে যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু গিয়াসউদ্দীন অনুগামী শাহআলম মুকুলসহ সোনারগাঁয়ের গিয়াস অনুগামী বেশকজন সিদ্ধিরগঞ্জকে সোনারগাঁয়ের সঙ্গে করতে নির্বাচন কমিশন বরাবর দরখান্ত দায়ের করেন। শেষতক সিদ্ধিরগঞ্জ থানাকে সোনারগাঁয়ের সঙ্গে যুক্ত করেই নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন গঠিত হয়।

এই আসন পূণর্গঠন হওয়ার পূর্ব থেকেই গিয়াসের পক্ষে সোনারগাঁয়ে কাজ করে আসছেন খন্দকার আবু জাফর, শাহ আলম মুকুল, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, জিয়াউল ইসলাম চয়ন, সোনারগাঁও পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম নয়ন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সালাউদ্দীন সালু, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শহিদুর রহমান স্বপন, যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল হোসেন, সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ প্রধান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নাসির উদ্দীন সহ আরো বেশকজন নেতা।

এমন অবস্থায় ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে প্রাথমিকভাবে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে মনোনিত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। মান্নানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জে আন্দোলন শুরু করেন। গিয়াস অনুগামীরা মানববন্ধন ও মশাল মিছিল করতে থাকেন। যার ফলে আশরাফ প্রধান বহিষ্কৃত হয়ে পদ হারান। স্বপন শোকজ খান। এরি মাঝে গিয়াসের সঙ্গে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশি সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, জেরা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহামুদ, খন্দকার আবু জাফর, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আল মুজাহিদ মল্লিক, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল ও এসএম ওয়ালিউর রহমান আপেল একজোট হয়ে মান্নানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে দরখাস্ত দাখিল করেছেন।

উপরোক্ত ৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশি একজোট হয়েও বিগত ১৭টি বছরে মান্নানের রাজপথে বিলিয়ে দেয়া ত্যাগ ও জনপ্রিয়তার কাছে ধপে টিকেনি। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত মনোনয়ন পান মান্নান। এবার গিয়াসের আসল রূপ বের হয়ে আসে। তিনি সোনারগাঁয়ের তার অনুগামীদের রীতিমত শীতলক্ষ্যার পানিতে ফেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। এমন অবস্থায় সোনারগাঁয়ের গিয়াসের অনুগামীরা হতাশায় ভুগছেন। এখন তাদের বাধ্য হয়েই মান্নানের দ্বারস্থ হতে হবে। যারা অতি উৎসাহী হয়ে মান্নানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, মানববন্ধন ও মশাল মিছিল করেছিলেন এখন তাদের একমাত্র ভরসাস্থল মান্নান। তবে মান্নান বলেছেন, আমার কাছে কোনো গ্রুপিং নাই। জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী প্রতিটা নেতাকর্মীর জন্য আমার দরজা খোলা। সকলকে নিয়ে ধানের শীষের বিজয়কে নিশ্চিত করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিজয় উপহার দিতে চাই।