স্বতন্ত্রের দিকে হাটছে বঞ্চিতরা: লড়াইয়ের মুখোমুখী হবে ধানের শীষ!

সান নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনেই কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখী হতে যাচ্ছে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা। যেখানে ইতিমধ্যে ৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। যদিও মনেনায়নবঞ্চিতরা দেখার অপেক্ষায় চূড়ান্ত প্রার্থীতা ঘোষণার। সেই ঘোষণায় হয়তো প্রার্থী পরিবর্তন নাও হতে পারে। তবে হাল ছাড়ছেনা মনোনয়নবঞ্চিতদের অনেকেই। যেনো এর শেষ দেখে ছাড়বেন তারা। বেশকজন মনোনয়নবঞ্চিত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আভাসও দিয়েছেন তাদের কর্মকাণ্ডে। খুব সহজেই ধানের শীষ বিজয়ী হয়ে যাবে এমনটা হলফ করে বলা যাচ্ছেনা, যদি বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।

গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার ৪টি আসনে বিএনপি তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি খালি রাখা হয়। কিন্তু ৪ ডিসেম্বর আরও ৩৬জন প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও এই আসনে এবারও খালি রাখা হয়। নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। এ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপকি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। ২০০৬ সালে এই আসনে মনোনয়ন পান বিএনপির সাবেক নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। ১/১১ এর কারনে তৈমূর জেলে থাকায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে কাজী মনিরকে বিএনপির প্রার্থী করা হলে সেই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হোন। কাজী মনির এখনও হাল ছাড়েননি। অন্যান্য মনোনয়নবঞ্চিতদের নিয়ে তিনি মাঠে কাজ করছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কিনা এখনো সে রকম ঘোষণা না দিলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মনোনয়নবঞ্চিতদের অনুগামীরা নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিল ও মশাল মিছিল করে যাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এখান থেকে মনোনয়ন পান। এ আসনের সাবেক তিনবারের এমপি এএম আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহামুদুর রহমান সুমন, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার মনোনয়ন না পেয়ে একজোট হয়েছেন। সম্প্রতি এক সভায় তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে আঙ্গুর বলেছেন, আপনাকে বলে রাখছি আমরা নির্বাচন করবো। চাচা ও ভাতিজা দুজনই স্বতন্ত্র প্রার্থীর হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। দুইজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সরাসরি আভাস দিয়েছেন। এ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুগামী নেতাকর্মীরা নিয়মিত প্রার্থী পরিবর্তন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মশাল করে যাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। এখানে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহামুদ, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, কেন্দ্রীয় যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এসএম ওয়ালিউর রহমান আপেল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আল মুজাহিদ মল্লিক মান্নানের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তারেক রহমান ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দরখাস্ত দিয়েছেন। যদিও এই আসনে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন মান্নান। তার প্রার্থী পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না নেতাকর্মীরা। কিন্তু এই আসনে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আভাস দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এই আসনে গিয়াসউদ্দীন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে গিয়াস প্রার্থী হলে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন রেজাউর করিম।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি কাউকে এখনো মনোনয়ন দেয়নি। বিএনপি নেতারা ধরে নিয়েছেন এই আসনটি জোটের কোনো শরীক দলকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে। কিন্তু এখান থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ শাহআলম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এখানে মনোনয়ন পান বিএনপির শরীক দল জমিয়েত উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। তিনি এবারও মনোনয়ন পাবেন বলেও দাবি করে আসছেন। বিএনপির কাছে এই আসনটি দাবি করে তালিকাও দিয়েছে জমিয়ত। তবে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী, মুহাম্মদ শাহআলম ও গিয়াসউদ্দীনের মধ্যে তিনজনই আলোচনায় আছেন। মনির হোসেনকে ধানের শীষ দেয়া হলে তিনজনকে মোকাবেলা করেই বিজয়ী হতে হবে তাকে। তবে সেই পথ বিরাট কঠিন হয়ে যাবে জোটের প্রার্থীর। মনোনয়ন না পেলে নারায়ণগঞ্জ-৩ কিংবা ৪ আসনের যেকোনো একটিতে গিয়াস স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনয়নে পেয়েছেন শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। এখানে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন সাবেক এমপি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা সাগর, শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল। মাসুদের ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন টিপু, খোরশেদ ও সাগর। কিন্তু আবুল কালাম, সাখাওয়াত ও আবু জাফর আহমেদ বাবুল মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে অটুট রয়েছেন। এখানে শেষতক চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হলে সাখাওয়াতকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও আবুল কালাম ও আবু জাফর বাবুরের মধ্যে যে কেউ একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের মধ্যে থেকে কেউ না হয়, তাহলে জাতীয় পার্টির নেতা অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মাকসুদ হোসেনের দিকে তাদের ভেতরগত সমর্থন থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এক্ষেত্রে মাসুদকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হওয়াটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।