সান নারায়ণগঞ্জ
জাতীয়পার্টিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার- এমনটাই আভাস দিয়েছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, তারা যদি ইলেকশন করতে চায়, সেটা তাদের ইচ্ছা।’
৫ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে মাগুরা সরকারি মডেল স্কুল মাঠে আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। তবে প্রেস সচিব এও বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি স্বৈরাচারের দোসর পার্টি। অবশ্য জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হয়নি। কিন্তু জাতীয় পার্টির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, তারা যদি ইলেকশন করতে চায়, সেটা তাদের ইচ্ছা। তবে আমরা সবসময়ই বলবো, ইতিহাস বলবে জাতীয় পার্টি স্বৈরাচারের ভয়ঙ্কর রকমের দোসর ছিল।’
জাতীয় পার্টির কার্যকলাপ নিয়ে সমালোচনা করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হেন কোনো আকাম-কুকাম করে নাই, ওদের সাহায্য ছাড়া। ওদের সাহায্য ছিলো, নৈতিক সমর্থন ছিলো বলে আওয়ামী লীগ এসব আকাম-কুকাম করে পাড় পেয়ে গেছে। যখনই আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের সাপোর্টের দরকার ছিলো, তখন জাতীয় পার্টি সামনে এসে দোসরের মতো দাড়িয়ে থেকে তাদেরকে সাপোর্ট দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ভয়ঙ্কর রকমের খুন করছিলো তখনও ওদের সাপোর্ট কমে নাই।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের এমন বক্তব্যের পর নড়ে চড়ে বসেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখছেন। যদিও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দলটির শীর্ষ নেতারা আড়ালে চলে গেছেন। অনেক নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়েছিলো বিভিন্ন মামলায়। তবে জাতীয় পার্টির প্রতি সরকারের নমনীয় অবস্থানে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতারা নতুন করে রাজনীতি করার সুযোগ দেখছেন।
২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আওয়ামীলীগ ১৪ দলীয় মহাজোট জোট গঠন করে। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে মহাজোটের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয় লাভ করেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন দুটি জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামীলীগ। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ থেকে নাসিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৩ থেকে জাতীয় পার্টির ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হোন। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে তারই ভাই জাতীয় পার্টির বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমান লাঙ্গল প্রতীকে বিজয়ী হোন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি নির্বাচিত হোন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমান এমপি নির্বাচিত হোন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনটি জাতীয়পার্টিকে আর ছেড়ে দেয়নি আওয়ামীলীগ। ওই নির্বাচনে এই আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কায়সার হাসনাতের কাছে পরাজিত হোন।
একইভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। প্রতিটি থানা/উপজেলাতেও জাতীয় পার্টির কমিটি রয়েছে। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল এবং মহানগর জাতীয়পার্টির সভাপতি মোদাসেরুল হক দুলাল ও সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন। এ ছাড়াও জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। এখন দেখার বিষয় নির্বাচন নাগাদ জাতীয় পার্টিকে কতুটুকু সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার।


